তিয়েনানমেন চত্বরে কড়া নিরাপত্তা
৪ জুন ২০০৯এদিকে, ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের কাছে ২০ বছর আগের ঐ নৃশংস দমন অভিযানে নিহতদের নাম চেয়েছে৷
১৯৮৯ সালে তৎকালীন সরকারের দুর্নীতি বন্ধ এবং জনগণের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অধিকারের দাবিতে ছাত্র-জনতা তিয়েনানমেন চত্বরে বিক্ষোভ করছিল৷ ৪ জুন ট্যাংক নিয়ে ছাত্র-কর্মীদের কয়েক সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভের রক্তক্ষয়ী অবসান ঘটিয়েছিল চীন৷ চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি এখন পর্যন্ত ঐ দমনাভিযানে নিহতদের তালিকা প্রকাশ করেনি৷ ঐ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিলে ক্ষমতা নাজুক হয়ে পড়ার আশঙ্কায় আছে চীন সরকার৷
বৃহস্পতিবার চত্বরটি ঘিরে রাখে শত শত পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষী৷ তবে তিয়েনানমেন চত্বর পরিদর্শকদের জন্য খোলা রাখা হয়েছে৷ এর আগে ১৯৯৯ সালে তিয়েনানমেন বিক্ষোভের ১০ বছর পূর্তির সময় এটি খোলা রাখা হয়নি৷ ভোরে এই চত্বরে পতাকা ওড়ানো দেখতে চীনারা ভিড় জমায়৷ বেইজিংয়ের বাইরে থেকেও অনেকে এসে এই চত্বরে সমবেত হয়৷ নীরবে শোক প্রকাশ করে কেউ কেউ৷ পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ৷ তিয়েনানমেন চত্বরের ঘটনায় এক পা হারানো ৫৩ বছর বয়সী কি ঝিওং বার্তা সংস্থা এএফপি'কে বলেন, কমিউনিস্ট পার্টি ঐ দিন যে অপরাধ করেছিল তা তাদের স্বীকার করতে হবে৷ এদিকে, বৃহস্পতিবার দিনের শেষে হাজার হাজার মানুষ তিয়েনানমেন চত্বরের নৃশংস ঘটনায় নিহতদের স্মরণে হংকং এর ভিক্টোরিয়া পার্কে সমবেত হয়ে মোমবাতি জ্বালায়৷
হংকং ভিত্তিক চীনা মানবাধিকার সংস্থা সিএইচআরডি বলেছে, তাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে, তিয়েনানমেন চত্বরের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ঠেকানোর জন্য কমপক্ষে ৬৫ জন কর্মীকে গৃহবন্দি করে রেখেছে কিংবা পুলিশি বাধার মুখে রাখা হয়েছে৷ এছাড়া জনগণ ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেন তিয়েনানমেন চত্বরের ঘটনা সম্পর্কে কোন মত প্রকাশ করতে না পারে সেজন্য কমপক্ষে ১৬০টি ওয়েবসাইট সম্প্রতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে৷ এছাড়া আমেরিকা ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ডুই হুয়া ফাউন্ডেশন ১৯৮৯ সালের ঐ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক প্রায় ৩০ জনের মুক্তির জন্য চীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ১৯৮৯ সালের ৪ জুন তিয়েনানমেন চত্বরে সহিংস ঘটনার শিকার গণতন্ত্রকামীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন৷ পোল্যান্ডে কমিউনিজমের পতনের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বক্তৃতায় তিনি বলেন, এটি একটি স্মরণীয় দিবস৷ ১৯৮৯ সালের ৪ জুন তিয়েনানমেন চত্বরে মহান আত্মত্যাগের ঘটনা ঘটেছিল৷ এই ঘটনা পৃথিবীর সকল স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা বাড়িয়ে দেয়৷
এদিকে, ১৯৮৯ সালের তিয়েনানমেন বিক্ষোভ দমনের ঘটনা নিয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে৷ ঐ ঘটনায় নিহতদের তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি নিহতদের পরিবারের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য চীনকে আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন৷ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিশাল অগ্রগতি অর্জনকারী এবং বিশ্ব নেতৃত্বে সঠিক স্থান অধিকার করে নিতে উদীয়মান চীনের উচিত তাদের অতীতের কালো ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে যাচাই করা এবং জনসম্মুখে নিহত, আটক কিংবা নিখোঁজদের হিসাব দেওয়া৷ অতীতের ক্ষত সারাতে এবং জনগণকে সবকিছু জানতে দেওয়ার জন্য এটি করা উচিত বলে হিলারি মন্তব্য করেন৷ এই সপ্তাহের শুরুতে মার্কিন কংগ্রেসেও ঠিক একই ধরণের একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়৷ কিন্তু হিলারির এই মন্তব্যকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে 'হস্তক্ষেপ' বলে এর নিন্দা জানিয়েছে বেইজিং৷ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিন গাং বলেছেন, এতে আমরা চরম অসন্তুষ্ট এবং এর ঘোর বিরোধিতা করছি৷
প্রতিবেদক: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক