আইটি’তে নারী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১২বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তির জগৎটা যেন পুরুষরদেরই চারণভূমি৷ তবে গত কয়েক বছর ধরে চিত্রটা পাল্টে যেতে শুরু করেছে৷ অনেক মেয়েও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসছেন, সাফল্যও দেখাচ্ছেন৷ উন্নয়নশীল দেশের নারীরাও পিছিয়ে থাকতে চাইছেন না৷ যেমনটি লক্ষ্য করা যায় কেনিয়াতে৷
জুকু কোম্পানিটি কেনিয়ার তথ্য প্রযুক্তি বা আইটি'র বাজারে বেশ বড় একটা জায়গা করে নিয়েছে৷ এটি ইন্টারনেট এবং পে টিভির সুযোগ সুবিধা করে দেয়৷ প্রতিষ্ঠানটি ওয়ানানচি গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত৷ কয়েক বছর ধরে আইটি'র ক্ষেত্রে নামডাক শোনা যাচ্ছে কোম্পানিটির৷ এটি গড়ে তুলেছেন এক নারী৷ কেনিয়ার নিয়েরে রিয়োঙ্গে৷ তাঁর হাতের ছোঁয়ায় প্রতিষ্ঠানটি ফুলে ফেঁপে উঠেছে, পরিণত হয়েছে পূর্ব আফ্রিকার এক বড় ইন্টারনেট প্রোভাইডারে, স্থাপিত হয়েছে পাঁচটি আঞ্চলিক শাখা৷
সাধনার পুরস্কার
নিয়েরে রিয়োঙ্গে জানান, ‘‘এক্ষেত্রে আসার আগে আমি অনেক কিছু নিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছি৷ আমি চুল কাটার কাজ করেছি, লন্ডনে কাপড়-চোপড়ের ব্যবসা করেছি৷ অবশেষে ১৯৯৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলি৷ এটা এখন বাস্তবিকই সাফল্য দেখাচ্ছে৷ এটার নাম ‘ওয়ানানচি ডট কম'৷ আমার লক্ষ্য হল, এই কোম্পানির মাধ্যমে বেশিরভাগ মানুষকে ইন্টারনেটের সুযোগ সুবিধা করে দেয়া৷''
প্রথম মূলধন হিসাবে পাঁচ লাখ অ্যামেরিকান ডলার জোগাড় করতে পেরেছিলেন তিনি৷ তবে এখন কোম্পানিটির মূলধন প্রায় ২৭০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে৷ রিয়োঙ্গে গত কয়েক বছরে শুধু যে মূল প্রতিষ্ঠানটিকেই সাফল্যের মুখ দেখিয়েছেন তাই নয়, আরো পাঁচটি কোম্পানির পরিচালনার দায়িত্বও হাতে নিয়েছেন৷ এর মধ্যে রয়েছে কনসাল্টিং ফার্ম ‘ইগনাইট' ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘ইনসাইট'৷
ডিগ্রি থাকাটাই আসল নয়
রিয়োঙ্গে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমার বলতে বাধা নেই যে আমার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেই৷ তার বদলে আমি অবশ্য বেশ কিছু কোর্স শেষ করেছি৷ সার্টিফিকেটও পেয়েছি৷ আমি মনে করি, এ ধরনের কোর্স সাধারণ ইউনিভার্সিটি ডিগ্রির চেয়ে ব্যবহারিক জীবনে অনেক বেশি কাজে লাগে৷ আমার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এগুলি সহায়কও৷ আপনি যদি কোনো আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেন, তাহলে আমি তা করে দিতে পারব৷ প্রশাসক হিসাবে কাজ করতে বললে, তাও পারবো আমি৷ সৃজনশীলতার ক্ষেত্রেও স্বচ্ছন্দ৷ যে কোনো জিনিস কাজে লাগানোর দক্ষতাটাই আসল ব্যাপার৷ শেখার যে অনেক পথ আছে৷''
অসুবিধাও রয়েছে
নিয়েরে রিয়োঙ্গের সাফল্যতে লক্ষ্য করা যায় যে, আফ্রিকায়, বিশেষ করে মেয়েদের অর্থনীতিক ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে৷ তবে ব্যবসায়ীদের অনেক সমস্যাও রয়েছে৷ যেমন যোগ্য কর্মীর অভাব বা মূলধন জোগাড় করার অসুবিধা ইত্যাদি৷ নিজের ব্যাপারে এখনও কর্মশক্তি শেষ হয়ে যায় নি বলে মনে করেন রিয়োঙ্গে৷ তাঁর লক্ষ্য আরো এগিয়ে যাওয়া৷
রিয়োঙ্গের ভাষায়, ‘‘আফ্রিকার নানা দেশে আফ্রিকান কোম্পানি গড়ে তোলার ইচ্ছা আছে আমার৷'' তিনি জানেন এটাও,২০ বছর পর তিনি কোথায় দাঁড়াতে চান৷
শোনা যায় তাঁর আশাবাদী কন্ঠ, ‘‘আমার লক্ষ্য হল, আফ্রিকান দেশগুলিতে কাজ করলেও প্রতিষ্ঠানগুলি যেন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃতি পায়৷''
যে রকম যোগ্যতা ও দৃঢ়তার সাথে নিয়েরে রিয়োঙ্গে তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাইছেন, তাতে মনে হয় ব্যাপারটা হয়তো আদতেই একটা অলীক কল্পনা নয়৷
প্রতিবেদন: বেটিনা রুল/আরবি
সম্পাদনা: দেবারিত গুহ