ট্রাম্পের শুল্ক বসানোর ফলে শেয়ার বাজারে ওঠাপড়া, মন্দার আশঙ্কা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নতুন হারে শুল্ক ঘোষণার প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে। শেয়ার বাজারে ধস। মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে।
অর্থনীতিতে প্রভাব
অ্যামেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ার শেয়ার বাজারে পরপর তিনদিন ধরে টালমাটাল অবস্থা দেখা গেছে। বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হওয়ার আশঙ্কায় শেয়ার বাজারে অর্থ ঢালতে ভয় পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের আর্থিক বৃদ্ধির উপর এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, বাজার অস্থির হবে, সরবরাহ শৃঙ্খল বাধাপ্রাপ্ত হবে। আর্থিক মন্দা দেখা দিতে পারে।
শেয়ার বাজারের ওঠাপড়া
ট্রাম্প শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকে বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজার নিম্নমুখি। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সোমবার শূন্য দশমিক দুই শতাংশ নিচে নেমেছে, ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ৩৪৯ পয়েন্ট পড়েছে। টোকিওর শেয়ার বাজার সোমবার সাত দশমিক আট শতাংশ পড়েছিল। মঙ্গলবার তা ছয় শতাংশ বেড়েছে। ভারতেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। সিওলে দুই শতাংশ বেড়েছে। তাইওয়ানে পাঁচ শতাংশ কমেছে। অস্ট্রেলিয়ায় চার দশমিক দুই শতাংশ কমেছে।
মন্দার আশঙ্কা
জেপি মরগ্যান মনে করে, মন্দার সম্ভাবনা এখন ৬০ শতাংশ। ডয়েশ ব্যাংক একটি রিপোর্টে বলেছে, ট্রাম্পের শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রভাব ২০২৫ সালে ও পরবর্তী দশকে ব্যাপকভাবে পড়বে। এবিএন অ্যামরোর রিপোর্ট বলছে, চলতি কোয়ার্টারে ইইউ-র আর্থিক বৃদ্ধি শূন্যর আশেপাশে থাকবে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মনে করছে, অ্যামেরিকায় মন্দার সম্ভাবনা প্রায় ৩৫ শতাংশ। মুডিস মনে করছে, খুব তাড়াতাড়ি অ্যামেরিকা মন্দার মুখে পড়বে।
চীনের প্রত্যাঘাত
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পাল্টা হিসাবে মার্কিন পন্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেছে চীন। ট্রাম্প এর আগে চীনের পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিলেন। তাছাড়া বিশ্বের সব দেশের উপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক বসিয়েছেন তিনি। তারই জবাব দিয়েছে চীন।
ট্রাম্পের হুমকি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, চীন যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে তিনি চীনের উপর আরো ৫০ শতাংশ শুল্ক বসাবেন। সেক্ষেত্রে চীনের পণ্যের উপর সবমিলিয়ে ৯৪ শতাংশ শুল্ক বসবে।
ইইউ-র ভাবনা
ইউরোপীয় কমিশন মার্কিন পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক বসানোর কথা ভাবছে। আগামী ৯ এপ্রিল ইইউ-র দেশগুলি এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। ট্রাম্প বলেছেন, ইইউ-কে গাড়ি-সহ অন্য মার্কিন পণ্য কিনতে হবে। না হলে তাদের উপর শুল্ক কম করা হবে না।
কী করছে এশিয়ার দেশগুলি?
ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলি পাল্টা শুল্ক বসানোর রাস্তায় হাঁটছে না। ভারত কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক কম করেছে। অন্য বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন, তিন মাসের জন্য যেন নয়া হারে শুল্ক স্থগিত রাখা হয়। পাকিস্তান শুল্ক নিয়ে আলোচনা করছে। অন্যরাও আলোচনা করছে বা করবে।
তেলের দাম কমেছে
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে। সোমবার অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলার কমে গেছে। এর ফলে রাশিয়ার মতো দেশগুলি খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ, তাদের অর্থনীতি তেল, খনিজ ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ভরশীল।