ট্যারিফ নিয়ে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের আশা-আশঙ্কার কথা
সম্পূরক শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করায় বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশ। এই পরিস্থিতে রপ্তানি খাতের আশঙ্কা ও সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলেছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা।
গার্মেন্টস বাদেও অন্যান্য বিকাশমান শিল্পগুলোকে উঠে দাঁড়াতে হবে: অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা, অর্থনীতিবিদ ও উপ-উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অতিরিক্ত ট্যারিফ চাপের সৃষ্টি করে। আমাদের অবকাঠামোগত জটিলতা আছে। ব্যবসা করার খরচ বেশি। গ্যাস-বিদ্যুৎ পেতে সমস্যা হয়। সার্ভিস ডেলিভারি স্মুথ করতে হবে। বিশেষভাবে পোর্টে নজর দেওয়া দরকার। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্যান্য ফি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট এবং বিজনেস কর্পোরেশন ব্লক থেকে আরো সুবিধা নেওয়ার জায়গা আছে। গার্মেন্টস বাদেও অন্যান্য বিকাশমান শিল্পগুলোকে উঠে দাঁড়াতে হবে।
আমাদের নতুন নতুন মার্কেটও দেখতে হবে: ফারুক হাসান, সাবেক সভাপতি, বিজিএমইএ
আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ১৬.৮০ শতাংশ শুল্ক ছিল। এখন শুল্ক ৩৭ শতাংশের কাছাকাছি চলে গেছে। বায়াররা চাপ দিয়ে দাম কমাচ্ছে। শুধু গার্মেন্টস পণ্য না সবকিছুর ওপরে শুল্ক বেড়ে গেছে। জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি হবে এবং চাহিদা কমে যাবে।এর ফলে অনেক ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের নতুন নতুন মার্কেটও দেখতে হবে। পলিসি সাপোর্ট দরকার, সুদের হার কমানো দরকার।
আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে: এম এ রাজ্জাক, গবেষণা পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)
পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক মানে পণ্যের চাহিদা কমতে বাধ্য। যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সবগুলো দেশেই ট্যারিফ বসিয়েছে, সবার পণ্যের চাহিদা কমবে। উচ্চহারে ট্যারিফের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের বাজার সংকুচিত হবে। এটি বাংলাদেশের মতো সাপ্লায়িং দেশের জন্য চিন্তার। যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা কমে যাওয়া এবং অন্য বাজারগুলোতে দামের ওপর চাপ পড়বে। আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে৷
কমন আইটেম বাদ দিয়ে ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্টের দিকে যেতে হবে: মীর নাসির হোসেন, সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই
আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে ট্যারিফ কিছু কম থাকায় আমি মনে করি আমাদের তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবো। চীন ও ভারতের শুল্ক আমাদের থেকে বেশি। সেই সুবিধা নেওয়ার সুযোগ আসবে। এ অবস্থায় কমন আইটেম বাদ দিয়ে ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্টের দিকে যেতে হবে। চট্টগ্রাম পোর্টে ফ্যাসিলিটি কস্ট ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে৷ এটা এই সময়ে বোঝার মতো। ঢাকা ও সিলেট এয়ারপোর্টের কস্ট আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আনতে হবে।
ভারতের থেকে আমাদের শুল্ক কম হওয়া আমাদের জন্য ভালো : কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেজিইএ)
পাটজাত পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন কমছে। সিনথেটিক বা পলিপ্রোপিলিনের কারণে পাটপণ্যের চাহিদাও কমেছে। এরপরে যদি নতুন শুল্কের মধ্যে পাটপণ্যও থাকে, তাহলে এই খাতের জন্য এটি ভালো সংবাদ না। কারণ, দাম কম হওয়ায় সিনথেটিকের কাছে পাটপণ্য এমনিতেই পিছিয়ে গেছে। তবে ভারতের থেকে আমাদের শুল্ক কম হওয়া আমাদের জন্য ভালো।
শুল্কের প্রভাব অর্থনীতিতে অবশ্যই পড়বে: মো. মুস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী
৩৫ শতাংশ শুল্কের প্রভাব অর্থনীতিতে অবশ্যই পড়বে। বাংলাদেশ থেকে সব থেকে বেশি রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক। যারা এসব রপ্তানি করেন, তাদের অর্ডার কমতে পারে। কারণ, নতুন করে শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। জিনিসের দাম বেড়ে গেলে তো মানুষ কেনাকাটা কমিয়ে দেয়। আমাদের দেশ থেকে যারা পোশাক স্লাপাই দিচ্ছেন, অর্থাৎ, গার্মেন্টে মার্কিন শুল্কের প্রভাব সব থেকে বেশি পড়বে।