জি টোয়েন্টির ফেরে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারালেন তারা
জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের আগে দিল্লিতে নিম্ন আয়ের মানুষদের অস্থায়ী আবাসগুলো ভেঙে দেয়া হয়েছে৷ মাথা গোঁজার শেষ ঠাঁইটুকুও হারালো বহু পরিবার৷
আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ
নতুন দিল্লির জান্তা ক্যাম্প থেকে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনস্থলের দূরত্ব বড়জোর ৫০০ মিটার৷ এখানকার বাসিন্দাদের অনেকে ভেবেছিলেন এই আয়োজনে তারা লাভবান হবেন৷ কিন্তু সেটি না হয়ে বরং গৃহহীন হলেন৷
গুঁড়িয়ে দিলো ঘর
ধর্মেন্দ্র কুমার, খুশবু দেবী তাদের তিন সন্তানকে নিয়ে এই বস্তিতে থাকতেন৷ জুনে কর্তৃপক্ষ এসে বস্তিটি গুঁড়িয়ে দেয়৷ গুঁড়িয়ে দেয় তাদের ঘরও৷ গত মে মাসে বস্তির উচ্ছেদপর্ব শুরু হয়৷ ৩১ মে পুরো বস্তি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়৷ চোখের সামনে বাসিন্দাদের বাড়িঘর মাটিতে মিশে যায়৷
হাইকোর্ট
বস্তির বাসিন্দাদের অনেকে দিল্লি হাইকোর্টে গিয়েছিলেন উচ্ছেদ অভিযান থামাতে৷ কিন্তু আদালত বসতিকে অবৈধ বলে রায় দেয়৷ শহর কর্তৃপক্ষ ৩১ মে পর্যন্ত তাদেরকে সময় বেঁধে দেয়৷
অনিশ্চিত যাত্রা
মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে পথে বসেন ধর্মেন্দ্র কুমাররা৷ এই শহরে তাদের থাকার আর কোনো জায়গা নেই৷ ধ্বংসস্তূপ থেকে যা কিছু পেরেছেন সংগ্রহ করে ভ্যানে তুলেছেন
বাসিন্দাদের ক্ষোভ
শুধু ধর্মেন্দ্ররাই নন, এমন বহু পরিবার পথে বসেছেন৷ মুহূর্তেই তাদের ঘর বাড়ি সহায়-সম্পত্তি গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ মোঃ শামীম নামের এক বাসিন্দা বলেন, বড় লোকেরা সম্মেলনে আসবে৷ ভেবেছেন তারা দরিদ্রদের সাহায্য করবেন৷ ‘‘কিন্তু উল্টোটা ঘটেছে৷ বড় লোকেরা আসবে, আমাদের কবরে বসে খাবে-দাবে,’’ বলেন তিনি৷
ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা
ধর্মেন্দ্রর তিন সন্তান৷ ১০ বছর বয়সি ইশান্ত আর পাঁচ বছরের সৃষ্টি বস্তির কাছেই সরকারি একটি স্কুলে পড়তো৷ ঘর গুঁড়িয়ে দেয়ায় তাদের পড়াশোনাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে৷
সরকারের বক্তব্য
জি-টোয়েন্টির আগে এই উচ্ছেদ অভিযান চালালেও নরেন্দ্র মোদী সরকার বলছে এটি তাদের নিয়মিত কার্যক্রমেরই অংশ৷ এক এপ্রিল থেকে শুরু করে ২৭ জুলাই পর্যন্ত ৪৯টি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে নতুন দিল্লি৷ জুলাইতে পার্লামেন্টে দেয়া তথ্য অনুযায়ী এর মাধ্যমে ২৩০ একর জায়গা সরকার দখলে নিয়েছে৷ গৃহায়ন প্রতিমন্ত্রী কৌশল কিশোর বলেন, ‘‘কোনো বাড়ি জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য গুড়িয়ে দেয়া হয়নি৷’’
পাল্টা যুক্তি
কিন্তু জান্তা ক্যাম্পও রাতারাতি গড়ে ওঠেনি৷ অনেক বাসিন্দা এখানে বহু বছর ধরেই থাকেন৷ আশেপাশেই তারা নিম্ন আয়ের কাজ করেন৷ খুশবু দেবীর বাবার পরিবার ১৩ বছর ধরে এই বস্তির বাসিন্দা৷ খুশবু দেবী বলেন, ‘‘যদি গরিব মানুষ দেখতে এতই খারাপ হয়, তাহলে তারা সুন্দর কিছু করতে পারতো৷ পর্দা বা কোনো কিছু দিয়ে জায়গাটি ঢেকে দিতে পারতো, যাতে গরিবদের দেখা না যায়৷
সরকারের ভাবনায় নেই তারা
ভারতের গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে দিল্লির এক কোটি ৩৫ লাখ মানুষই শহরের অবৈধ কলোনীগুলোর বাসিন্দা৷ সেন্টার ফর হলিস্টিক ডেভেলপমেন্ট নামের একটি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সুনীল কুমার বলেন, ‘‘এই মানুষগুলোর কী হবে সেই বিষয়ে কোনো ধরনের চিন্তা না করেই সরকার সৌন্দর্য্যবর্ধনের নামে বাড়ি-ঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে আর দরিদ্র মানুষদের উচ্ছেদ করছে৷’’
নতুন ঠিকানা
ধর্মেন্দ্র কুমার ও তার স্ত্রী খুশবু দেবী ১০ কিলোমিটার দূরে এক কক্ষের একটি ঘর নেন মাসে আড়াই হাজার রুপি ভাড়ায়৷ দুই মাস পর তারা জান্তা ক্যাম্পের কাছে সাড়ে তিন হাজার রূপিতে আরেকটি ঘর ভাড়া নেন৷ ধর্মেন্দ্র জানান, সন্তানের পড়াশোনার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাকে৷