জার্মানি: এএফডিকে চরমপন্থি বলায় সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্রের
৩ মে ২০২৫জার্মানির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বিএফভি দেশটিতে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ডানপন্থি রাজনৈতিক দল এএফডিকে চরমপন্থি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে৷ কারণ হিসেবে তারা বলেছে, জাতিগত প্রশ্নে দলটির অবস্থান গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷ এএফডি নির্দিষ্ট কিছু জনগোষ্ঠীকে সমাজে সমানভাবে অংশগ্রহণ থেকে বাদ দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে বলে জানিয়েছে তারা৷ সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্বল করার জন্য দলটির ঘৃণামূলক বক্তব্য ও উস্কানির কথাও তারা উল্লেখ করেছে৷
এর আগে এএফডির বেশ কিছু শাখাকে চরমপন্থি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল বিএফভি৷ এখন গোটা দলটিকেই তালিকাভুক্ত করায় কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যকলাপ নজরদারির জন্য আরো বেশি ক্ষমতা পাবে৷
তবে এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করেছে এএফডি৷ তাদের সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থার সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে৷
ভ্যান্স ও রুবিও যা বলেছেন
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন জার্মানি ‘বার্লিন দেয়াল পুনঃনির্মাণ' শুরু করেছে৷ সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ তিনি লিখেছেন, ‘‘পশ্চিম বার্লিন দেয়াল একসঙ্গে ভেঙে ফেলেছিল৷ এখন তা পুনঃনির্মাণ করা হচ্ছে, আর তা সোভিয়েত বা রাশিয়া করছে না, জার্মানিই করছে৷’’
ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে বিতর্কিত এক বক্তব্য দেয়ার পরে ভ্যান্স এএফডির আলোচিত নেতা অ্যালিস ভাইডেলের সঙ্গে দেখা করেন৷ সেই বক্তৃতায় ভ্যান্স অভিযোগ করেছিলেন ইউরোপিয়ান দেশগুলো, বিশেষ করে জার্মানি, বাকস্বাধীনতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে৷
এদিকে এএফডিকে চরমপন্থি সংগঠন হিসেবে ঘোষণাকে ‘ছদ্মবেশী স্বৈরাচার’ বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও৷ শুক্রবার এক্স-এ তিনি লিখেছেন, ‘‘জার্মানি তার গোয়েন্দা সংস্থাকে বিরোধীদের উপর নজরদারির নতুন ক্ষমতা দিয়েছে৷''
তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘এটা গণতন্ত্র নয়, ছদ্মবেশে স্বৈরাচার৷’’ জার্মানিকে পথ পরিবর্তনের পরামর্শও দিয়েছেন রুবিও৷
জার্মানির প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প প্রশাসনের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জার্মানি৷ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এ রুবিওকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় লিখেছে, ‘‘এটাই গণতন্ত্র৷’’
গোয়েন্দা সংস্থার সিদ্ধান্তের পক্ষে তারা লিখেছে, ‘‘আমাদের সংবিধান রক্ষার জন্য একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বাধীন তদন্তের ফলাফল হলো এই সিদ্ধান্ত৷'' তবে এর বিপক্ষে আবেদন করা যাবে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়৷
তারা আরো বলেছে, ‘‘আমরা আমাদের ইতিহাস থেকে শিখেছি যে ডানপন্থি চরমপন্থা থামানো প্রয়োজন৷’’
নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সতর্কতা
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এএফডি অভিবাসন নিয়ে ভীতিকে পুঁজি করে জার্মানির রাজনীতিতে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে রেকর্ড ২০ শতাংশ ভোট পেয়ে তারা এখন পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল৷
এদিকে এএফডিকে চরমপন্থি দল হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলেও দলটিকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন জার্মানির অনেক রাজনীতিবিদ৷ নব্য-উদারপন্থি এফডিপির প্রধান ক্রিস্টিয়ান ড্যুর বলেছেন, ফেডারেল নির্বাচনে দ্বিতীয় শক্তিশালী দলকে নিষিদ্ধ করা হবে ‘মারাত্মক সিদ্ধান্ত'৷
ফুঙ্কে মিডিয়া গ্রুপকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, সুনির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের মাধ্যমেই অন্যান্য দলগুলোর এএফডিকে ‘রাজনৈতিকভাবে আবারও দুর্বল' করতে হবে৷
তার সঙ্গে একমত মধ্য-ডানপন্থি সিডিইউ/সিএসইউ এর পার্লামেন্টের মুখপাত্র আলেক্সান্ডার থ্রম৷ তিনি বলেন, ‘‘বিশেষ করে অভিবাসন, নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে নতুন জোটের দ্রুত, দৃশ্যমান সাফল্য এএফডির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখন নির্ণায়ক বিষয় হবে৷’’
উল্লেখ্য গত নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে থাকা বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের দল এসপিডিকে সঙ্গে নিয়ে নতুন জোট সরকার গঠন করতে যাচ্ছে সিডিইউ ও তাদের সহযোগী দল সিএসইউ৷
এফএস/এআই