জার্মানির নতুন সরকারের আমলে পররাষ্ট্রনীতির আমূল বদল হবে?
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচন। নতুন সরকার গঠনের পর তার সামনে থাকবে পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞদের মতে দেশ এক স্থায়ী পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাবে। আগের অবস্থান থেকে সরে আসার সময় এসেছে।
জার্মানির পররাষ্ট্র নীতি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পশ্চিম জার্মানি পাশ্চিমা দেশগুলির পক্ষে থেকেছে। বহুপাক্ষিতা, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের পক্ষ নিয়েছে। দেশের পররাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্তগুলিও পাশ্চিমের বন্ধু দেশগুলির সহযোগিতায় নেওয়া হত। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র দেশের সুরক্ষার বিষয়টির দায়িত্বে থাকত।
ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ
কিন্তু এই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে (এমএসসি) যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স ঘোষণা করেন যে ইউরোপের দেশগুলিকে নিজেদের সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে এবং তার ব্যয়ও বহন করতে হবে। মধ্য-দক্ষিণপন্থি ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নের(সিডিইউ) নেতা এবং জার্মানির চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস ডিডব্লুকে বলেন, "আমরা এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া সুরক্ষা ব্যাবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। সর্বোপরি আমেরিকানরা গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।"
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন
সিডিইউর পার্লামেন্টারি গ্রুপের পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ রডরিশ কিসেওয়েটার বলেন যে দেশ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। তিনি আরো জানান যে জার্মানির গণতন্ত্র এবং আইনি শাসন ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন চীন এই মুহুর্তে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য জার্মানির মতো দেশগুলিকে আরো পরনির্ভরশীল করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ডিডব্লুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিসেওয়েটার জার্মানির নিজের জাতীয় এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার দিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন।
তিনি বলেন, "তা না হলে দেশকে সাংঘাতিক অর্থনৈতিক অভিঘাতের মুখে পড়তে হবে। সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার জন্য ন্যাটো-ও কার্যকরি হবে না।" এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি আরো জানান, "এর জন্য পররাষ্ট্রনীতি এবং সুরক্ষা নীতির একটা পরিষ্কার কৌশলগত এবং রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন। অন্য দেশকে তুষ্ট করে চলার প্রাচীনপন্থি ভাবনা এবং চীনকে নিয়ে উদাসীন থাকার বোকামি আমরা করতে পারি না। এতে ক্ষতির সম্ভবনা বেশি।"
ইউক্রেন নীতিতে পরিবর্তন?
জার্মানির ইউক্রেন নীতিতেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০২২-এ রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জার্মানি ইউক্রেনকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সামরিক সাহায্যের পাশাপাশি ইউক্রেন থেকে আসা উদ্বাস্তু অভিবাসনের ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে জার্মানি।
এখনো যখন যুদ্ধ শেষ হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে, জার্মানি-সহ অন্যান্য ইউরোপের দেশগুলির উপর নিজেদের সামরিক ক্ষমতায় যুদ্ধ-পরবর্তী চুক্তি রক্ষার দায়িত্ব বর্তাবে। আমেরিকার যে সেক্ষেত্রে কোনো দায়িত্ব নেবে না তা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
সামরিক বাজেট বৃদ্ধি
একথা পরিষ্কার যে জার্মানি তার সামরিক বাজেট বাড়ানোর দিকে মন দেবে। এক্ষেত্রে ইইউর অন্যান্য দেশের সঙ্গে একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। গ্রিন পার্টির অ্যানটন হফরাইটার আনুমানিক ৫০ হাজার কোটি ইউরোর এক প্রকাণ্ড অর্থ বরাদ্দের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও সামরিক বাজেট গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। রডরিশ কিসেওয়েটার জানান যে ওয়াশিংটনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার জন্যেও সামরিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন।
জেনস থুরো/এসসি