জার্মানির এক শিকারী নারীর কথা
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আমাদের টেবিলে মাংস কোথা থেকে আসে সেটা জানা কি গুরুত্বপূর্ণ? জার্মানি মাগনুস ভ্যাসেল ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ মনে করেন, ‘‘খাবার কোথা থেকে আসছে মানুষের তা জানার অন্তর্নিহিত প্রয়োজন রয়েছে৷ এবং অবশ্যই শিকার হচ্ছে টেবিলে মাংস পৌঁছানোর সবচেয়ে সরাসরি আদ্যস্থল৷''
জার্মানিতে শিকার ট্রেন্ডি ব্যাপার৷ অনেক নারী ক্রমশ এতে আগ্রহী হচ্ছেন৷ তাদের একজন শ্যানা রাইস৷ বর্তমানে জার্মানির হান্টিং স্কুলগুলোর এক চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী নারী৷
শ্যানা ভোর ছয়টায় শিকারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘এই শিকারের জায়গায় আমরা মূলত রো হরিণ পাই৷''
তার শিকারের জায়গার নাম রাইন হেসেন৷ ফ্রাঙ্কফুর্টের ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে ওয়াইনের জন্য পরিচিত অঞ্চল এটি৷ জার্মানিতে শিকারের লাইসেন্স আছে এমন চার লাখের বেশি মানুষের একজন শ্যানা৷ ২০১৭ সাল থেকে এই তালিকায় বছরে পাঁচ হাজারের মতো নতুন শিকারী যোগ হচ্ছেন৷
শ্যানা রাইস বলেন, ‘‘আমরা দ্রুততর পৃথিবীতে বাস করছি, যেখানে যে-কোনো কিছু সবসময়ই সহজলভ্য৷ কিন্তু শিকারের ক্ষেত্রে আপনার কিছুক্ষেত্রে ছাড় দিতে হবে এবং কী পাওয়া যায় তার অপেক্ষায় থাকতে হবে৷ আমি মনে করি অনেকের কাছে এটাই আকর্ষণীয় যে আপনি প্রকৃতির কাছে ফিরে যান এবং যুক্ত হন৷''
জার্মানিতে যা শিকার করা যায়
তিনি এবং তার শিকারি কুকুর হেনরিয়েটে শিকারের সন্ধান করে৷ জার্মানিতে সবচেয়ে সহজ শিকার হচ্ছে হরিণ, বুনো শুয়োর এবং শিয়াল৷ কোন প্রাণীটি কখন এবং কত সংখ্যায় শিকার করা যাবে তা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দেয়৷ শ্যানা রাইস বলেন, ‘‘আমি শিকার করার কারণ আছে৷ আমি মজা করতে এটা করি না - আমি এটা করি কারণ এর একটা দিক আছে৷ আজ অবধি এর প্রতি আমার অনুভূতি বদলায়নি৷ আমি যদি কোনো হরিণের আস্তানায় বিশবার যাই এবং হরিণটির নাম জানি, তাহলে বিষয়টি অনেক জটিল হয়ে যায়৷ আমি তখন চাইবো অন্যকেউ সেটিকে মারুক৷ কারণ আমি সেটির সঙ্গে একধরনের সম্পর্ক অনুভব করি৷''
কিন্তু আধুনিক যুগে এভাবে শিকারের কি দরকার আছে? ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ জার্মানির মাগনুস ভ্যাসেল বলেন, ‘‘হাজার বছর ধরে শিকার আমাদের পরিবেশকে একটা আকার দিয়েছে - মধ্য ইউরোপেরক্ষেত্রে সেটা ছয় থেকে দশ হাজার বছর৷ বন্যপ্রাণীর সংখ্যার উপর সবসময়ই এর প্রভাব রয়েছে৷''
শিকারীরা প্রায়ই ভাবমূর্তির সংকটে পড়েন, কারণ, তারা পশুহত্যা করেন৷ অনেক আগে মানুষ খাবার এবং পোশাকের প্রয়োজনে শিকার করতেন৷ মধ্যযুগে অভিজাত সম্প্রদায়ের শিকার করার অধিকার ছিল৷ তারা নিজেদের পরিতৃপ্তির জন্য শিকার করতেন৷
মাগনুস ভ্যাসেল বলেন, ‘‘যদি ঠিকভাবে শিকার করা হয় এবং যেসব প্রজাতি শিকার করা হয় না সেগুলো শান্তিতে থাকতে পারে, তাহলে এটা আসলে খাদ্য সংগ্রহের এক ন্যায়সঙ্গত উপায়৷ এবং এটি প্রাণী স্বার্থ রক্ষা করে শিকার ব্যবস্থাপনা এবং মানুষের স্বার্থের মধ্যে সমন্বয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ করে৷''
প্রাণীর প্রতি সম্মান
শ্যানা পেশায় একজন ওয়াইন উৎপাদক৷ তিনি তার পরিবারের চতুর্থ প্রজন্ম হিসেবে আঙ্গুর-খেত দেখাশোনা করছেন৷ এখানে হরিণের সংখ্যা বেড়ে গেলে আঙ্গুর উৎপাদন ব্যাহত হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘বসন্তে হরিণগুলো আসলেই আঙ্গুরখেতে মুকুল খেতে পছন্দ করে৷ এই মুকুল আঙ্গুরের ভিত্তি৷ সেগুলো না থাকলে আঙ্গুরও হবে না৷ তাই, দুর্ভাগ্যজনক হলেও হরিণ নিধন করতে হয়৷''
শিকার করা হরিণ দ্রুত দক্ষতার সঙ্গে কাটতে হয় যাতে সেটিকে খাওয়ার উপযোগী করা যায়৷ শেনা এটিকে প্রাণীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক উপায় মনে করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে যা খুব গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে শিকারটি যাতে দ্রুত মারা যায়৷ আমি সেটিকে কোনো কষ্ট দিতে চাই না৷ আমি সেটির বেদনা কমাতে চাই৷ আমি সেটিকে সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলতে চাই৷''
বন্যপ্রাণীর প্রতি নিজের ভালোবাসা এবং শিকারী মনের মধ্যে কোনো দ্বন্দ দেখেন না শ্যানা৷
প্রতিবেদন: হেন্ডরিক ওয়েলিং/এআই