জার্মানিতে নাৎসি যুদ্ধাপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
১২ আগস্ট ২০০৯বাভারিয়ার সনাতনী সাজে মিউনিখের আদালতে আবির্ভূত বৃদ্ধ আসামী ভাবলেশহীন ভাবে রায় শোনে৷ দশটি ক্ষেত্রে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড শুনে ইয়োসেফ শয়েনগ্রাবের শুধু মাথা নাড়ে৷ শয়েনগ্রাবেরের উকীলরা ভেবেছিল, সে বেকসুর খালাস পাবে৷ বিচারক মানফ্রেড গোয়েৎসেল এক ঘন্টা ধরে রায়টি পড়ে শোনান৷ কিভাবে ১৯৪৪ সালের গ্রীষ্মে দু’জন জার্মান সৈন্য ইটালির গুপ্তপ্রতিরোধের সদস্যদের দ্বারা চোরাগোপ্তা আক্রমণে নিহত হলে পর তরুণ লেফটেনান্ট এবং কম্পানি কমান্ডার শয়েনগ্রাবের ক্রোধ ও ঘৃণা অনুভব করে, এবং তার সৈনিকদের চাপে প্রতিশোধ নিতে রাজী হয়৷ দৃশ্যত শয়েনগ্রাবের’ই ঐ নিহত সৈন্যদের কোনো কাজে পাঠিয়েছিল৷ তার অনুতাপ এবং আক্রোশের সেটাও একটা কারণ৷
ফালজানো দি করটোনা
কারণ যাই হোক, শয়েনগ্রাবেরের নির্দ্দেশেই তার সৈন্যরা টাসকানির ছোট্ট গ্রাম ফালজানো দি করটোনা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে নির্বিচারে কিছু মানুষকে ধরে আনে - স্পষ্টতই হত্যা করার উদ্দেশ্যে৷ পুরুষ এবং কিশোরদের একটি বাড়িতে ঢুকিয়ে বাড়িটি বিষ্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়৷ প্রাণ হারায় দশজন৷ এ কাজ শয়েনগ্রাবেরের কম্পানির সৈন্যদের৷ কম্পানি কমান্ডার শয়েনগ্রাবের স্বয়ং এই হত্যাকান্ডের নির্দ্দেশ দেয়৷ সে যে অন্যত্র ব্রিজ তৈরীর কাজ দেখছিল এবং এ’সব ঘটনার কিছু জানতো না - তার এই জবানি বিশ্বাস করেনি আদালত৷
তবে যে চারজন বেসামরিক ইটালিয়’কে গুলি করে মারা হয়েছে, তাদের মৃত্যুর জন্য শয়েনগ্রাবেরকে দায়ী করা সম্ভব নয়, বলে আদালতের মত৷ কেননা ঘটনার ধারাপরম্পরা স্পষ্ট নয়৷ অতএব এক্ষেত্রে শয়েনগ্রাবের হত্যার অভিযোগ থেকে রেহাই পায়৷
উত্তরপুরুষ
ফালজানো দি কর্টোনার হত্যাকান্ডের যাঁরা শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের উত্তরপুরুষ এই মামলাতে বাদী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন৷ বলা প্রয়োজন, ২০০৬ সালেই ইটালির একটি আদালত শয়েনগ্রাবেরকে তার অনুপস্থিতিতেই দোষী বলে সাব্যস্ত করে এবং যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করে৷ অতঃপর একটি জার্মান আদালতও একই সিদ্ধান্তে আসায় নিহতদের আত্মীয়সজনেরা বিশেষভাবে সন্তুষ্ট৷ তবে শয়েনগ্রাবেরের উকীল রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করবেন বলে জানিয়েছেন৷ এবং শয়েনগ্রাবেরও স্বাধীন মানুষ হিসেবেই আদালত পরিত্যাগ করে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করতে পেরেছে৷
প্রতিবেদক: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই