জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি : ক্ষতিপূরণ বাবদ কোন দেশের কত পাওনা
জলবায়ু দূষণকারী ধনী দেশগুলোর বিশ্বের নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশুগুলোর কাছে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৯০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার দেনা রয়েছে - বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনালের এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে৷
অ্যাকশন এইডের গবেষণা
বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় এক অনুষ্ঠানে ‘হু ওজ হু’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ সেখানে ১৯৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণের মাত্রা এবং ১৯৬০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণের মাত্রা হিসেব করে দূষণকারী ও ধনী দেশগুলোর কী পরিমাণ দেনার দায় তৈরি হয়েছে তার একটি খতিয়ান প্রকাশ করে৷
কোন কোন দেশ
বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশের নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলোকে তালিকাভুক্ত করেছে অ্যাকশনএইড৷ নিম্ন আয়ের ২৪টি এবং নিম্ন-মধ্য আয়ের ৫০টি দেশকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷
বাংলাদেশ কত পায়
অ্যাকশএইডের গবেষণা বলছে, ১৯৯২ সাল থেকে শুরু করে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়ে কার্বন নিঃসরণ বিবেচনায় নিয়ে ধনী ও জলবায়ু দূষণকারী দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৮ ট্রলিয়ন ডলার পাওনা হয়েছে৷ আর ১৯৬০ সাল থেকে হিসেব করলে এই অংক দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার৷
সবচেয়ে বেশি পায় ভারত
নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের মোট ৭৪টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওনা ভারতের৷ অ্যাকশনএইডের গবেষণা বলছে, ১৯৯২ সাল থেকে শুরু করে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়ে কার্বন নিঃসরণ বিবেচনায় নিলে ভারত ধনী ও জলবায়ু দূষণকারী দেশগুলোর কাছে ৪২ ট্রিলিয়ন ডলার পাবে৷ আর ১৯৬০ সাল থেকে হিসেব করলে এই অংক দাঁড়াবে ৫৭ ট্রিলিয়ন ডলার৷
দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো
আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলোর দেশই নিম্ন-মধ্য আয়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত৷ সেই হিসেবে অ্যাকশনএইড বলছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের পাওনা অন্তত ৭ ট্রিলিয়ন, শ্রীলঙ্কার ৭১০ বিলিয়ন, নেপালের ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন এবং ভুটানের পাওনা অন্তত ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
শাদ
নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মধ্যে তালিকার শীর্ষে রয়েছে আফ্রিকার দেশ শাদ৷ ধনী ও জলবায়ু দূষণকারী দেশগুলোর কাছে তাদের পাওনা অন্তত ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
উগান্ডা
নিম্ন আয়ের দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আফ্রিকার আরেক দেশ উগান্ডা৷ এই দেশটির পাওনা অন্তত ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার৷
আফগানিস্তান
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ আফগানিস্তান রয়েছে নিম্ন আয়ের দেশের তালিকায়৷ যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটির মোট পাওনা অর্থের পরিমাণ ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বনাম জলবায়ু ক্ষতিপুরণের পাওনা
অ্যাকশনএইডের প্রতিবেদনে আরো যে বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে তা হলো, ৫ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার পাওনা হলেও বাংলাদেশ পাচ্ছে না সেই টাকা৷ কারণ, দেশটির বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৭৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার৷ এই টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে নাগরিকদের মৌলিক চাহিদার মতো খাতগুলোতে যথেষ্ট বিনিয়োগ করতে পারছে না দেশটি৷ অবশ্য শুধু বাংলাদেশই নয়, নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের সবগুলো দেশই এমন সংকটে রয়েছে৷
ক্ষতির মুখে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত
ধনী দেশগুলোর কাছে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার পাওনা থাকলেও সে টাকা না পাওয়ায় বাংলাদেশকে জাতীয় রাজস্বের ১৬ দশমিক ৯ ভাগ খরচ করতে হচ্ছে বিদেশি ঋণ পরিশোধে৷ জাতীয় রাজস্বের মাত্র ৩ দশিক ৮ ভাগ স্বাস্থ্যখাতে এবং ১১ দশমিক ৮ ভাগ শিক্ষা খাতে ব্যয় করছে দেশটি৷ অ্যাকশনএইড বলছে, ধনী দেশ, আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থাসহ ঋণদাতাদের অর্থ পরিশোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশ মৌলিক চাহিদার খাতগুলোতে খরচ কমিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছে৷