গাজায় প্রতি পাঁচজন নিহতের চারজন বেসামরিক ব্যক্তি
২২ আগস্ট ২০২৫বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার নির্দেশেই গাজায় নতুন করে অভিযান শুরু করেছে সেনা। হামাসের হাতে আটক অবশিষ্ট ইসরায়েলের বন্দিদের মুক্তি না দিলে এবং ইসরায়েলের শর্ত মেনে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তিতে সম্মত না হলে এই অভিযান বন্ধ হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, জার্মানি, অ্যামেরিকা, জাতিসংঘসহ একাধিক দেশ হামাসকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে।
নতুন করে শুরু হওয়া অভিযানের জন্য রিসার্ভে থাকা ৬০ হাজার স্থল সেনাকে যে কোনো সময় ডাকা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে গাজা শহরের মধ্যে ইসরায়েলের সেনা ঢুকে পড়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের দক্ষিণে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বস্তুত, গাজা অভিযানের শুরু থেকেই বেসামরিক মানুষকে এভাবেই বার বার পালানোর নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল।
গাজায় ৮৩ শতাংশ বেসামরিক মানুষের মৃত্যু
সম্প্রতি তিনটি গণমাধ্যম যৌথভাবে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে গাজায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনই বেসামরিক মানুষ। ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের +৯৭২ ম্যাগাজিন, হিব্রুতে প্রকাশিত দ্য লোকাল কল এবং দ্য গার্ডিয়ান এই সমাক্ষা চালিয়েছে। ইসরায়েলের সেনার গোপন নথি ঘেঁটে তারা এই তথ্য পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
তাদের দাবি, সেনার তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত গাজায় মোট আট হাজার ৯০০ হামাস জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ফিলিস্তিন ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর সদস্যও আছে।
অথচ এখনো পর্যন্ত গাজায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫৩ হাজার। অর্থাৎ, শতকরা ৮৩ ভাগ নিহতই বেসামরিক মানুষ। ইসরায়েলের সেনার রিপোর্টেও সে কথা কার্যত স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে এই সমীক্ষা।
কিন্তু এই তিনটি পত্রিকার দাবি, জনসমক্ষে ইসরায়েল যে তথ্য দিচ্ছে, তার সঙ্গে তাদের সেনার কাছ থেকে পাওয়া এই গোপন তথ্যের বিস্তর ফারাক। জনসমক্ষে ইসরায়েল দাবি করছে, আনুপাতিকভাবে দেখলে একজন হামাস জঙ্গির মৃত্যু হলে একজন বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ, ৫০ ভাগ জঙ্গির মৃত্যু হলে ৫০ ভাগ বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে এই তথ্যের বিস্তর ফারাক। তবে ইসরায়েলের সেনা ইতিমধ্যেই এই সমীক্ষার রিপোর্ট সম্পূর্ণ ভুল এবং বিভ্রান্তিকর বলে দাবি করেছে।
গাজায় অভুক্ত শিশুরা মানসিক অবসাদে
যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার সংগঠন সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিনিধি ড্যান স্টুয়ার্ট ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, গাজায় শিশুদের ভয়াবহ অবস্থা। অধিকাংশ শিশু খাদ্যাভাবে ধুঁকছে। তার মধ্যে নতুন করে অভিযান শুরু হওয়ায় তারা গভীর মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেছে। তাদের মানসিক এবং শারীরিক অবস্থার এতটাই অবনতি হয়েছে যে, তারা কাঁদতেও পারছে না। ড্যান দক্ষিণ গাজা থেকে ডিডাব্লিউয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। গ্রাউন্ডি জিরোতে বসে কাজ করছেন তিনি।
আরো মানুষের মৃত্যু
বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে অন্তত ৩৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সংবাদসংস্থা এপি এই তথ্য দিয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি অবশ্য জানিয়েছে, মোট নিহতের সংখ্যা এখনো পর্যন্ত ৪৫।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি)