কুসংস্কার ও ভুল ধারণা ভাঙতে পুজোর থিম 'ঋতুমতী'
মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করতে, কুসংস্কার ভাঙতে কলকাতার পাথুরিয়াঘাটায় এবার পুজোর থিম হলো 'ঋতুমতী'।
পাথুরিয়াঘাটার পাঁচের পল্লির পুজো
কলকাতার অসংখ্য দুর্গাপুজোর মধ্যে এবার ব্যতিক্রম হলো পাথুরিয়াঘাটার পাঁচের পল্লির পুজো। তাদের থিমের কারণেই এই পুজো আলাদা হয়ে উঠেছে। পাথুরিয়াঘাটায় এবার থিম হলো 'ঋতুমতী'।
কেন এই থিম
উদ্যোক্তাদের দাবি, এনিয়ে প্রচুর ভুল ধারণা আছে। সেই ধারণার বদল ঘটাতেই এরকম থিম নেয়া হয়েছে। পুজো কমিটির ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট ইলোরা ঘোষ একজন নারী। তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, পিরিয়ড হলো স্বাভাবিক জৈবিক বিষয়। এটাকে লুকানোর কিছু নেই। এনিয়ে সামাজিক ট্যাবু ভাঙতে হবে।
মেয়েদের পায়ের বেড়ি
ঋতুস্রাব হলেই মেয়েদের হাজারো রকমের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে হয়। তারা পুজোর ঘরে ঢুকতে পারেন না। পুজো করতে পারেন না। এমনকী রান্না ঘরে বা স্বামীর সঙ্গে এক বিছানায় শোয়া নিয়েও নানান নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়তে হয় তাদের। সেই বেড়ি ভাঙার কথাই বলেছে এই পুজোর থিম।
শিল্পসম্মতভাবে বোঝানো হয়েছে
পাথুরিয়াঘাটায় এই বিষয়টি বোঝানো হয়েছে, মানুষের মন থেকে ভুল ধারণা মুছে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে খুবই শিল্পসম্মতভাবে। একের পর এর ছবি ও মূর্তির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিষয়টি।
যিনি এই থিমের রূপায়ণ করেছেন
মানস রায় এই থিমের পরিকল্পনা ও রূপায়ণ করেছেন। তিনি ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''মেয়েদের জীবনে ঋতুস্রাব ও সেই সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি নামা থুবই স্বাভাবিক ঘটনা। আমরা একটা চেতনা তৈরি করতে চেয়েছি। ভারতের চন্দ্রযানের পিছনেও মেয়েরা আছেন। অথচ, দেশের অনেক জায়গায় এটা একটা ট্যাবু। মেয়েদের যার মুখোমুখি হতে হয়।'' তিনি জানিয়েছেন, ''এই থিমের রূপায়ণ সহজ ছিল না।''
প্রতিটি ক্ষেত্রে অভিনবত্ব
অভিনবভাবে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন মানস রায় ও অন্য শিল্পীরা। তাদের সেই কাজ ছড়িয়ে আছে মণ্ডপের প্রতিটি প্রান্তে। যা আমাদের ভাবতে বাধ্য করবে, ধারণা বদল করতে সাহায্য করবে। সবচেয়ে বড় কথা, পুজোর থিম হিসাবে এই বিষয় বাছার সাহস তারা দেখাতে পেরেছেন বলে ধন্যবাদের পাত্র হবেন।
যেভাবে বোঝাতে চেয়েছেন উদ্যোক্তারা
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, তারা ঋতুস্রাবের সময় স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন হওয়ার কথা বলার চেষ্টা করেছেন। পুরনো পোশাক বা নোংরা জিনিস নয়, ঋতুস্রাব হলে স্যানিটারি প্যাড মেয়েদের দিতে হবে, এই বিষয়টি বোঝার দরকার আছে। এই চেতনাটা আনার দরকার আছে বলে তাদের বিশ্বাস।
ভালো লেগেছে মোনালিসার
পাথুরিয়াঘাটার বাসিন্দা মোনালিসা পাল সেনগুপ্তের ভালো লেগেছে এই থিম। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''অন্তত এইটুকু বোঝা দরকার, এই স্বাভাবিক ঘটনা না হলে কোনো মেয়ে মা হতে পারবে না। এই মণ্ডপে সুন্দরভাবে সেই কথাটাই বোঝানো আছে। পিরিয়ড নিয়ে কুসংস্কার দূর করা দরকার।''
আরেক নারীর বক্তব্য
এনা রায়ও এখানেই থাকেন। তিনিও জানালেন, ''পিরিয়ড হলে পুজোর ঘরে ঢোকা যাবে না, স্বামীর থেকে আলাদা হতে হয়, এই সব ধারণা বদলের সময় এসেছে। প্রতিটি পুরুষকেও সচেতন হতে হবে। এই বার্তাটা দেয়ার জন্য পুজো কমিটিকে ধন্যবাদ।''