কী ঘটছে নাইজারে?
গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরতে না ফিরতেই পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার আবারো সামরিক শাসনের কবলে পড়েছে৷ ছবিঘরে জেনে নিন ঘটনাপ্রবাহ৷
রাজনৈতিক পটভূমি
দেশটির নামকরণ নাইজার নদী থেকে৷ ভূমিবেষ্টিত নাইজার একসময় ফরাসি উপনিবেশের অধীনে ছিল৷ ১৯৬০ সালে নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে তারা৷ কিন্তু স্বাধীন নাইজার একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গেছে৷
বাজাউম সরকার
২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেন মোহামেদ বাজাউম৷ ২০২১ সালের এপ্রিলে তার ক্ষমতা গ্রহণের কয়েকদিন আগে আরেকটি ক্যু হলেও তা ব্যর্থ হয়৷ প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচিত সরকারের হাত থেকে আরেকটি নির্বাচিত সরকার দেশটির শাসনভার গ্রহণ করে৷
আবার ক্যু
ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছরের মাথায় চলতি বছরের ২৬ জুলাই দেশটিতে আবারো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটলো৷ নিজের প্রেসেডেন্সিয়াল গার্ডের সদস্যদের হাতেই বন্দি হন বাজাউম৷ সামরিক নেতারা সরকার ও সংবিধান রোহিত করে৷ সীমান্ত বন্ধ ও দেশজুড়ে কারফিউ জারির ঘোষণা দেয়৷
দৃশ্যপটে চিয়ানি
২৮ জুলাই বাজাউমের প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের প্রধান জেনারেল আব্দররহমানে চিয়ানিকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে অভ্যুত্থানকারী সামরিক বাহিনী৷ তবে এখনই হাল ছেড়ে দিচ্ছেন না বাজাউম৷ টুইটে জানিয়েছেন, ‘নাইজারের কষ্টার্জিত অর্জন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে’৷ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকামী জনতা তা রক্ষা করবে৷
ইকোভাসের আল্টিমেটাম
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর জোট ইকোভাস এই অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে৷ বাজাউমের কাছে আবারও ক্ষমতা হস্তান্তর করতে জেনারেল আব্দররহমানে চিয়ানিকে তারা দুই সপ্তাহের সময় বেধে দিয়েছে৷ নয়ত নিষেধাজ্ঞা ও শক্তি প্রয়োগ করে হস্তক্ষেপে হুমকি দিয়েছে জোটটি৷
সমর্থনে মালি, বুরকিনা ফাসো
নাইজারের নতুন জান্তার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে দুই প্রতিবেশী বুরকিনা ফাসো ও মালির সামরিক সরকার৷ যৌথ বিবৃতি দিয়ে তারা বলেছে, দেশটিতে যেকোন সামরিক হস্তক্ষেপকে বুরকিনা ফাসো ও মালির বিপক্ষে যুদ্ধ বলে গণ্য করবে তারা৷ এর ফলে গোটা অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে৷ ইকোভাসের সিদ্ধান্তে দ্বীমত জানিয়েছে জোট সদস্য গিনিও৷
ফ্রান্স নিয়ে জান্তার ভয়
ফ্রান্স সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মোহামেদ বাজাউমকে ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা করছে বলে দাবি করেছে ক্ষমতা দখলকারীরা৷ প্রতিক্রিয়ায় ফ্রান্স জানিয়েছে, তারা বাজাউমকেই দেশটির একমাত্র আইনসঙ্গত কর্তৃপক্ষ বলে মনে করে৷ দেশটিতে ফরাসি নাগরিক ও স্থাপনার নিরাপত্তাকে তারা সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় বলে উল্লেখ করে৷
জঙ্গিবাদের উত্থানের শঙ্কা
নাইজারে বিভিন্ন সময়ে সক্রিয় ছিল বিভিন্ন ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী৷ এরমধ্যে সবচেয়ে বড় হুমকি বোকো হারামা৷ ২০১৫ সালে নাইজারের দক্ষিণাঞ্চলে তারা হামলা চালায়৷ পরে আফ্রিকার অন্য দেশগুলোর সাথে মিলে তাদের দমন করে নাইজার৷
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াসহ কাউন্সিলের ১৫ সদস্য এক বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে বাজাউমের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে৷ নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও৷
পশ্চিমা সাহায্য
নাইজারের সামরিক বাহিনী অনেকটাই আন্তর্জাতিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল৷ ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে ৫০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা করেছে৷ চলতি বছর ইইউ তিন কোটি ডলারের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেছে৷ বাস্তবতার দোহাই দিয়ে সামরিক জান্তা তাদের প্রতি সমর্থন জানাতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷
ভাবিষ্যৎ ভাগনার?
মালি ও বুরকিনা ফাসোতে সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফ্রান্সের সেনাদের সরিয়ে দেয়৷ নিরাপত্তার জন্য রুশ ভাড়াটে বাহিনী ভাগনারকে দায়িত্ব দেয় মালি৷ খুব দ্রুতই বুরকিনা ফাসোও একই পদক্ষেপ নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ বিশ্লেষকদের ধারণা নতুন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে নাইজারের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে৷