কাশ্মীরের প্রচারে হইচই নেই, আছে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা
কাশ্মীরে ভোটপ্রচার শুরু হয়ে গেছে। তবে তার চেহারা একেবারেই অন্যরকম। অন্য জায়গার সঙ্গে সেই প্রচার মিলবে না।
ওমর আবদুল্লার কর্মীসভা
কাশ্মীরে সবকটি দলীয় অফিসে আছে কড়া নিরাপত্তা। ন্যাশনাল কনফারেন্স বা এনসি অফিসে দলের কর্মীদের সভা ডেকেছিলেন ওমর আবদুল্লা। তাই বৃহস্পতিবার এনসি অফিস ছিল দলের কর্মীদের উপস্থিতিতে রীতিমতো প্রাণচঞ্চল। তবে সেখানেও পতাকা, ব্যানার যৎসামান্য। তবে কাশ্মীরে বিরোধী দলগুলির মধ্যে এনসি অফিসেই তৎপরতা সবচেয়ে বেশি।
কর্মীদের উৎসাহ
ন্যাশনাল কনফারেন্স হলো কাশ্মীর উপত্যকায় প্রধান বিজেপি-বিরেোধী দল। গতবার তারা কাশ্মীরের তিনটি আসনেই জিতেছিল। এবার ৩৭০ ধারা বিলোপের পর প্রথম নির্বাচন। তাই ওমর নিজে না লড়লেও দলকে জেতাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। তিনি তিনটি আসনেই জিততে চান। তিনিও এখন মূলত কর্মীসভা করছেন।
ওমর যা বললেন
দলের কর্মীদের ওমর বললেন, এই লোকসভা ভোট হলো সেমিফাইনাল। বিধানসভা ভোট হলো ফাইনাল। এই কথাটা মাথায় রাখতে হবে। সেই সঙ্গে তার ঘোষণা, জম্মু ও কাশ্মীর যতদিন পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা না পাচ্ছে, ততদিন তিনি নির্বাচনে লড়বেন না
টের পাওয়া যায় না
শ্রীনগর-সহ কাশ্মীরের য়ে কোনও জায়গায় যান, আপনার দেখে একবারের জন্যও মনে হবে না ভোট হচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ বা দক্ষিণ ভারতের ভোট দেখে যারা অভ্যস্ত তাদের। কোনো পোস্টার, ব্যানার, মিছিল, মিটিং কিছুই নেই। দেওয়াল লিখন তো দূরের কথা, এক টুকরো প্রচারপত্র পর্যন্ত কোথাও নেই।
তাহলে কীভাবে প্রচার চলছে?
মেহবুবা মুফতির দল হলো পিডিপি। তারা এখনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। কিন্তু প্রচার শুরু করেছে। কেমন সেই প্রচার? পিডিপি নেতা মোহিত ভান বললেন, ''গুলমার্গ জেলায় গ্রামে প্রচার হবে। চলুন দেখবেন। সেই প্রচার দেখাও একটা অভিজ্ঞতা।''
বরফের পাহাড় ও সর্ষে ক্ষেতের পাশ দিয়ে
শ্রীনগর ছাড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ পর সেই গ্রাম এলো। তার আগে দেখা গেল সর্ষে ক্ষেত, আপেলের বাগান, আখরোটের চাষ ও পিছনে পাহাড়ের সারি। পাহাড়ের মাথায় বরফ পড়ে আছে। সেই অসাধারণ দৃশ্য দেখতে দেখতে গ্রামে পৌঁছানো গেল।
বাড়ির ভিতরে
একটি বাড়ির ভিতরে ঢুকলেন মোহিত। দোতলায় একটা বড় ঘর। সেখানে জনা ৪০-৪৫ জন মানুষ। কার্পেট পাতা ঘরে তারা বসে। দেওয়ালে কাশ্মীরের বিখ্য়াত কাঠের কাজ। গ্রামের মানুষকে বোঝাতে শুরু করলেন মোহিতরা। কেন ভোট দেবেন? কেন পিডিপি-কে ভোট দেবেন? চিৎকার নয়, রঙ্গব্যঙ্গ নয়, সহজভাবে বাড়িতে বসে আলোচনার ভঙ্গিতে কথা হলো।
হলো কথপোকথন
প্রথমে পিডিপি নেতারা বললেন। তারপর শ্রোতারাও প্রশ্ন শুরু করলেন। সওয়াল-জবাব হলো। পরে মোহিত বলছিলেন, মানুষ একটা জিনিস বুঝতে পেরেছে, তাদের জনপ্রতিনিধি দরকার। তাদের এমন একজনকে দরকার, যার কাছে গিয়ে তারা নিজেদের কথা বলতে পারেন। না হলে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। এই জায়গাটা হলো মুফতি পরিবারের শক্ত জমি। তারা সেই জমি ধরে রাখতে চাইছেন।
ফারাক আছে
এনসি ও পিডিপি-র প্রচারের মধ্যে তাই ফারাক আছে। ওমর তার কর্মীদের আগে চাঙ্গা করছেন। আর পিডিপি একেবারে গ্রামে গ্রামে ঘুরছে। মোহিত বলছিলেন, ''এভাবেই আমরা প্রচার করব বলে ঠিক করেছি। কারণ, ৪০ জন মানুষের থেকেই আমাদের প্রচারের কথা চার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। আর সরাসরি কথাবার্তার একটা আলাদা তাৎপর্য আছে।''
তারিগামি লড়বেন না
সিপিএমের ইউসুফ তারিগামি জানিয়েছেন, তার দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কাশ্মীর থেকে লড়বে না। তারা বিরোধীদের সমর্থন করবে। কিন্তু নিজেরা প্রার্থী দেবে না।
মানুষ ভোট দেবে
প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতা মনে করছেন, কাশ্মীরে এবার প্রচুর ভোট পড়বে। মানুষ ভোট দেবে। বিজেপি বলছে, মানুষ উন্নয়নের স্বাদ পেয়েছে বলে ভোট দেবে। এনসি, পিডিপি, সিপিএম, কংগ্রেস নেতারা বলছেন, মানুষ বিজেপি-র নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ভোট দেবে।