কালো থেকে সাদা: কলকাতার ভুয়ো সংস্থায় কাদের টাকা?
২০ আগস্ট ২০২২রাজ্যে একাধিক দুর্নীতি মামলার তদন্ত চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি৷ইতিমধ্যে তাদের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতা৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকা৷ গরু ও কয়লা পাচার মামলায় আরো বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এরই মধ্যে সক্রিয় আয়কর দপ্তর৷ এই কেন্দ্রীয় সংস্থাটি বড় তল্লাশি অভিযান চালায় বৃহস্পতিবার৷ দুর্নীতির তদন্ত চলাকালীন এই অভিযান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ৷
বিভিন্ন সূত্র মারফত আয়কর দপ্তরের কাছে খবর আসে, কলকাতায় অনেকগুলি ভুয়ো সংস্থা সক্রিয় রয়েছে৷ অভিযোগ উঠেছে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে এই ধরনের কাগুজে কোম্পানিকে ব্যবহার করা হয়েছে৷ এই সংস্থাগুলির বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই৷ বেআইনি লেনদেনের জন্য এই শেল কোম্পানি বা ভুয়ো সংস্থা তৈরি করা হয়েছে৷ মূলত কালো টাকাকে সাদা অর্থাৎ বৈধ করাই এই সংস্থা তৈরির লক্ষ্য৷ ভুয়ো কোম্পানির মাধ্যমে একের পর এক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে বেআইনিভাবে সংগৃহীত অর্থ মজুত রাখা হয়৷ আয়কর দপ্তর এই সংস্থা গুলির হদিশ পেতে বড়সড় অভিযান চালিয়েছে৷
৩০ দলে ১৫০
কালো টাকার বিপুল কারবারের অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আয়কর দপ্তর তল্লাশি শুরু করে৷ ১৫০ জনের মতো আধিকারিক ৩০টি দলের ভাগ হয়ে ৩০টি জায়গায় হানা দেন৷ পার্ক স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস, এলগিন রোড-সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলে৷ সূত্রের খবর, শহরের চারটি বড় নির্মাণ সংস্থার কার্যালয় থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র আয়কর দপ্তরের হাতে এসেছে৷ শহরে এখন ৩৫০টির মতো ভুয়ো সংস্থা সক্রিয় রয়েছে বলে সংবাদে প্রকাশ৷ প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি কলকাতা এই ভুয়ো সংস্থার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে?
ভুয়ো সংস্থার কারিকুরি
বৃহস্পতিবারই পার্থ ও তার ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় আদালতে পেশ করা হয়৷ শুনানিতে কেন্দ্রীয় সংস্থা দাবি করে, নিয়োগ দুর্নীতিতে টাকা তছরুপের উদ্দেশ্যে ভুয়ো সংস্থা খোলা হয়েছিল৷ এমন ৩০টি সংস্থার খোঁজ মিলেছে৷ গরু ও কয়লা পাচারের ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকার লেনদেনেও কি কলকাতার বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থার সক্রিয়? বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি৷ এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস ও কলকাতা পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্তা নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যারা দুর্নীতি করে, তারা এই শেল কোম্পানি খুলে টাকা সাদা করে৷ একটা কোম্পানির নামে বিপুল টাকা ঋণ দেখিয়ে দেওয়া হল, অথচ কোনো ঋণ নেওয়া হয়নি৷ আবার একটা কোম্পানি ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা দেখালো৷ ৪৯০ কোটি টাকা সাদা হয়ে গেল৷ সবটাই কাগজে-কলমে৷”
কালো টাকার রমরমা দেশজুড়েই আছে৷ অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দেশের অর্থনীতির একটা অংশ চলছে কালো টাকায়৷ এর বিরূপ প্রভাব পড়ে আর্থিক অবস্থায়৷ কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রক বা আয়কর দপ্তরের নজরদারি কঠোর না হলে ভুয়ো কোম্পানির মাধ্যমে কালো টাকার কারবার বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ কোনো সংস্থা সরকারি খাতায় নথিভুক্ত হওয়ার পর শুধু কাগজে-কলমে ব্যবসার ছল করছে কি না, তা নিয়মিত অডিটের মাধ্যমে ধরা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের মত৷ সেক্ষেত্রে অনেকটা ফাঁকফোকর আছে বলেই এতো বড় সংখ্যায় কাগুজে কোম্পানি সক্রিয় রয়েছে৷
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াত স্ত্রী ও জামাইয়ের নামও জড়িয়েছে ভুয়ো সংস্থার সঙ্গে৷ নথিভুক্ত কোম্পানির ঠিকানায় গিয়ে দেখা গিয়েছে সেখানে কোনো অফিস নেই৷ বাসিন্দারা জানেন না এমন কোম্পানির কথা৷ রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর প্রভাব থাকায় কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? নজরুল ইসলামের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে অভিযোগ পেলে৷ তিনি বলেন, "কেউ যদি ভুয়ো সংস্থার দ্বারা প্রতারিত হয়, অভিযোগ জানায়, তখন পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে৷ সেই তদন্তে কাগুজে কোম্পানির অস্তিত্ব বেরিয়ে আসতে পারে৷ কেন্দ্রীয় সংস্থা বা মন্ত্রকের নজরদারি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ৷”