কার্বন নির্গমন কমাবে বাতাসভরা হালকা কংক্রিট
১৮ এপ্রিল ২০২৩তথাকথিত ‘এক্সপ্যান্ডেড ক্লে' নামের ক্ষুদ্র বাতাসভরা মাটির গোলক মেশালে কংক্রিটের ওজন কমে যায়৷ এই উপাদান হয়তো কংক্রিটের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে পারবে৷ কাচের ক্ষুদ্র গোলক দিয়েও সেটা সম্ভব৷ মেটিরিয়াল্স বিজ্ঞানী হিসেবে কার্ল-ক্রিস্টিয়ান টিনেল বলেন, ‘‘দুই উপাদানের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে শক্ত অবয়বের মধ্যে বাতাস ভরা হয়৷ যত বেশি বাতাসের সুষম বণ্টন ঘটবে, উপাদানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও তত ভালো হবে৷''
সেই উপাদান দিয়ে তৈরি তথাকথিত ‘ইনফ্রা লাইটওয়েট কংক্রিট'-এর মধ্যে এত বাতাস থাকে, যে সেটি পানির উপরেও ভাসতে পারে৷
জার্মান সেনাবাহিনীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিস্টিয়ান টিনেল ও তাঁর টিম ‘ইনফ্রা লাইটওয়েট কংক্রিট'-এর গঠন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন৷ প্রথমে ‘এক্সপ্যান্ডেড ক্লে', তারপর পানি ও সবশেষে সিমেন্ট যোগ করতে হয়৷
প্রচলিত কংক্রিটের প্রায় এক-চতুর্থাংশ ওজনের এই কাঠামো কিন্তু নির্মাণের সাইটে ব্যবহার করা কঠিন৷ তা সত্ত্বেও টিম যথেষ্ট সন্তুষ্ট৷ মেটিরিয়াল্স বিজ্ঞানী হিসেবে ন্যান্সি বয়েন্টার মনে করিয়ে দেন, ‘‘কংক্রিট কিন্তু ঢালতেও পারা চাই৷ সুন্দর চকোলেট মুসের মতো গঠন হতে হবে৷''
সেই কংক্রিট দিয়ে দেওয়াল তৈরি করা যায়, যার মধ্যে বাতাসের কারণে ইনসুলেশনের মাত্রাও খুব ভালো হয়৷ এমন দেওয়ালের বাড়তি ইনসুলেশনের প্রয়োজন হয় না৷ ফলে স্টাইরোফোম ব্যবহার করতে হয় না৷ ‘ইনফ্রা লাইটওয়েট কংক্রিট' অন্যভাবেও জলবায়ুকে সাহায্য করে৷ কার্ল-ক্রিস্টিয়ান টিনেল বলেন, ‘‘ছিদ্র থাকায় আমি বাতাস থেকে সিওটু অথবা সার্বিকভাবে সিওটু-সহ বাতাস ঢুকিয়ে দিতে পারি৷ সেই বাতাস কংক্রিটের মধ্যে ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইডের সংস্পর্শে এলে সিওটু আটকা পড়ে৷ ফলে উৎপাদনের সময় যে সিওটু নির্গমন হয়, এভাবে তার কিছু অংশ সাশ্রয় করা যায়৷''
ছিদ্রের মাধ্যমে ‘ইনফ্রা লাইটওয়েট কংক্রিট' কার্যত গ্রিনহাউস গ্যাস শুষে নেয়৷ কংক্রিটের মিশ্রণ তৈরির রাসায়নিক প্রক্রিয়ার সময় যে ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড সৃষ্টি হয় এবং কংক্রিটের মধ্যে থেকে যায়, সেটি বাতাস থেকে সিওটু শুষে নেয় এবং কয়েক বছর পর আবার চুনাপাথরে পরিণত হয়৷
তা সত্ত্বেও কংক্রিট স্থিতিশীল থাকে৷ স্ক্যানিং ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে বিজ্ঞানীদের টিম লক্ষ্য করেছে, যে কংক্রিটের মধ্যে সূঁচালো অংশ সৃষ্টি হয়, যেগুলি একে অপরের সঙ্গে আটকে গিয়ে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে৷ ন্যান্সি বয়েন্টার বলেন, ‘‘কীভাবে মাইক্রোস্ট্রাকচারের বিকাশ ঘটে, আমরা তা পর্যবেক্ষণ করছি৷ আমরা দেখতে পাচ্ছি, কঠিন পদার্থ হিসেবে যেভাবে সূঁচালো অংশগুলি সৃষ্টি হয়, তা কংক্রিটের শক্ত গঠন নিশ্চিত করে৷ সেই সঙ্গে কাঠামোর মধ্যে ছিদ্রও লক্ষ্য করছি৷ প্রচলিত কংক্রিটের তুলনায় অনেক বেশি ছিদ্র ও বাতাস তার মধ্যে রয়েছে৷''
কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রচলিত কংক্রিটের তুলনায় হালকা এই সংস্করণ কতটা মজবুত? এক পরীক্ষায় তা দেখা যাচ্ছে৷ প্রচলিত কংক্রিটের এক ব্লকের উপর চাপ সৃষ্টি করে দেখা গেল, যে ৬০ টন চাপের মুখে সেটি ভেঙে যায়৷ তারপর মাত্র নয় টন ওজনের চাপেই হালকা কংক্রিট ভেঙে গেল৷ টিনেল বলেন, ‘‘ভবনের এমন গঠন আজকালকার ইটের গাঁথনির তুলনায় অনেক বেশি মজবুত৷ আমাদের কংক্রিটের মানও যথেষ্ট বেশি, যা এখানে বিকৃতির সীমার ক্ষেত্রে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ এমন কংক্রিট দিয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় নির্মাণ করা যায়৷ এ ক্ষেত্রে আমাদের ট্র্যাকিংয়ের বড় সুবিধা রয়েছে৷ নমুনাটি পুরোপুরি ভেঙে গেলেও প্রায় অর্ধেক ধারণ ক্ষমতা রয়েছে৷''
ক্রিস্টিয়ান টিনেলের মতে, স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ভবন নির্মাণের জন্য এমন মাত্রার মজবুত গঠন যথেষ্ট৷ তবে সেটি দিয়ে সেতু অথবা বহুতল ভবন নির্মাণের পরামর্শ দিচ্ছেন না তিনি৷
সুসানে ডেলঙে/এসবি