কার্গো বাইকে শেষ যাত্রা
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫জার্মানির এই রাজধানীতে শোক প্রকাশের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসছে৷ অনেকে প্রচলিত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আর চান না৷
জার্মানিতে কারো মৃত্যু হলে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগ অবধি মরদেহ পর্দার আড়ালেই রাখা হয়৷ এক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন রাজ্যভেদে ভিন্ন হতে পারে, যেমন, মুসলমানদের ক্ষেত্রে মরদেহ কফিনে করে সমাহিত করা হয়৷ কখনো কখনো মরদেহ পোড়ানোও হয়৷ সাধারণত মরদেহ কালো গ্লাসে ঢাকা গাড়িতে করে শেষকৃত্য স্থলে নিয়ে যাওয়া হয়৷
কার্গো বাইকের চালক এরিক ভ্রেডে বলেন, ‘‘আমি যদি মৃতদেহের ভস্ম রাখার পাত্র গাড়িতে করে নিয়ে যাই, তখন তা কেউ খেয়াল করে না৷ আমি যখন সাইকেলে করে নেই, তখন তা দৃশ্যমান৷ মানুষ বোঝে কী হচ্ছে৷ আমি মনে করি, এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, ব্যাপারটি পুরোপুরি মানুষের দৃষ্টির বাইরে চলে গেছে৷''
বিশেষভাবে তৈরি কার্গো বাইকটি এই পাত্র বহন আরো দ্রুত এবং টেকসই করেছে৷ বিশেষ করে সাইকেলপ্রেমীরা গাড়ির চেয়ে এভাবে পরিবহণ পছন্দ করেন৷
এরিক ভ্রেডে বলেন, ‘‘কফিন বহন করতে গেলে সবসময় এক, দুই বা তিনজন সহকর্মীর দরকার হয়, যারা তখন আমার পেছনে গাড়িতে করে আসবেন৷ এবং আমি কফিন সাইকেলে করি নিয়ে যাচ্ছি এবং আমার পেছনে গন্ধ ছড়ানো ডিজেল কারে তিনজন আসছেন দেখতে অদ্ভূত লাগবে৷ ফলে আমাদের জন্য সহজ উপায় হচ্ছে ইলেক্ট্রিক গাড়িতে করে কফিন বহন করা এবং মরদেহের ভষ্ম অনুরোধের প্রেক্ষিতে সাইকেলে বহন করা৷''
কার্গো বাইকটিতে ছোট্ট শেষকৃত্য আয়োজনের জন্য যা যা দরকার তার সবই আছে৷ যেমন, ফুল, মিউজিক বক্স এবং ভষ্ম রাখার পাত্র৷ এই পাত্র রাখার জন্য কাঠের বাক্সের সামনে জায়গা করা আছে, যাতে সেটি পড়ে না যায়৷ তিন চাকার সাইকেলটিও যাতে পড়ে না যায় সেই ব্যবস্থাও আছে৷
বৃষ্টি যখন বাধা
বৃষ্টি হলে সাইকেলের বদলে গাড়ি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন এরিক ভ্রেডে৷ অনেক মৃতের পরিবার পচনশীল পাত্র বেছে নেন, যেটি পানির সংস্পর্শে গেলে গলে যায়৷ ভবিষ্যতে এরকম পাত্র বাইকে নেয়ার সময় ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করবেন তিনি৷
শেষকৃত্যের সংস্কৃতি বদলে যাচ্ছে: শেষ বিদায়ের আয়োজনে স্বকীয়তা বাড়ছে, এসংক্রান্ত বাহনে বৈচিত্র্য আসছে এবং সমাধিস্থ করার জায়গাতেও পরিবর্তন দেখা গেছে৷
যেমন, অনেককে শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, জঙ্গলে সমাধিস্থ করা হচ্ছে৷
এক্ষেত্রে খরচও কম হয়৷ কারণ,, সাধারণ কবরের জন্য একটি সমাধি ফলকেরই দাম দুই থেকে পাঁচ হাজার ইউরো৷ জঙ্গলে কবর দেখভালের খরচও লাগে না৷
এরিক ভ্রেডে একটু ভিন্নভাবে কাজ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটি দামের তালিকা তৈরি করেছি, যেখানে কী ধরনের সমাধি আপনি চান তা গুরুত্ব পায় না৷ সবক্ষেত্রে একই খরচ৷ এবং তুলনামূলকভাবে মাটিতে সমাধিস্থ করার হার বেশি পাই আমরা৷''
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় এসব পরিবর্তনের উপর শোক প্রকাশের ধরনের প্রভাব রয়েছে৷
প্রতিবেদন: ফিলিক্স পাওশচিঙ্গার/এআই