কলার তন্তুর হস্তশিল্পে সাবলম্বী হচ্ছেন ভারতের নারীরা
১ নভেম্বর ২০২৩ভারতের দক্ষিণের মাদুরাইয়ের তিরুপারাকুন্দ্রাম গ্রামের নারীরা একসময় বর্জ্য বলে বিবেচিত উপকরণ দিয়ে, ব্যবহার করা যায় এমন পণ্য তৈরি করেন৷
স্বামী জেলে যাওয়ার পর সেলভি সেখানে কাজ শুরু করেন৷ এই আয় দিয়ে তার সংসার চলছে৷
‘‘ঐ ঘটনার পর আমি কিছুদিন ঘরে একা ছিলাম৷ তখন আত্মীয়রা সহায়তা করেছিলেন৷ এরপর তারা সাহায্য বন্ধ করে দেন৷ দিন দিন আমার সন্তানেরা বড় হচ্ছিল৷ কী করবো, বুঝতে পারছিলাম না৷ এমন দু:সময়ে আমি এই কাজে ঢুকেছিলাম,’’ জানান সেলভি৷
সেলভি ও অন্য নারীরা মাদুরাই ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্ট বা মিকাতে কাজ করেন৷ তারা ২০ ধরনের বেশি ঝুড়ি তৈরি করেন৷ ৫০ ধরনের বেশি হস্তশিল্প বানান৷
প্রকল্পটি শুরু করেন চার্লস৷ প্রায় ছয় বছর ধরে এটি চলছে৷ তিনি বলেন, ‘‘যখন ছোট ছিলাম, বন্ধুদের হাতে তৈরি উপহার দিতাম৷ ময়লাসহ গাছের সবকিছু জোগাড় করতাম৷ সেগুলো দিয়ে ছোট ঘর ও অনেক কিছু বানাতাম৷ বন্ধুরা সেগুলো পছন্দ করতো৷ তখন বুঝেছিলাম, প্রকৃতি থেকে যা পাওয়া যায়, তা বর্জ্য নয়৷ এই বোধের কারণে প্রাকৃতিক উপকরণ ও বর্জ্য দিয়ে পণ্য তৈরির কথা চিন্তা করি আমি৷’’
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় কলা উৎপাদনকারী দেশ৷ বছরে প্রায় তিন কোটি টনের বেশি কলা উৎপন্ন হয়৷ ভারতের সবচেয়ে বেশি কলা উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোর তালিকার চার নম্বরে আছে তামিলনাড়ু৷ সেখানে বছরে প্রায় এক কোটি টন বর্জ্য তৈরি হয়৷
প্রকল্পের জন্য কলার বর্জ্য আসে কৃষক সেতুর কাছ থেকে৷ তার প্রায় দুই হাজার কলার গাছ আছে৷ দশ মাসের মধ্যে ফল পাকে৷ এরপর কলা সংগ্রহের পর পরবর্তী চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে গাছ কেটে ফেলা হয়৷ তিনি জানান, ‘‘আগে ময়লা ফেলে দিতাম৷ কিন্তু এখন এগুলো অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়৷ বিশেষ করে ঝুড়ি তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে৷ আমাদেরও অনেক উপকার হচ্ছে৷''
মিকায় তৈরি ঝুড়ি ও অন্যান্য পণ্য মূলত ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে রপ্তানি করা হয়৷ একজন নারী দিনে আট থেকে ১০টি ঝুড়ি বানান৷ একেকটি ঝুড়ি প্রায় দুই হাজার রূপিতে বিক্রি হয়৷ একেকজন কর্মী দিনে প্রায় দেড়শ রূপি পান৷
শুনতে বেশি মনে না হলেও এই শ্রমিকেরা বলছেন, এই আয় তাদের সুখ এনে দিয়েছে৷ এছাড়া অন্য সুবিধাও আছে৷ সেলভি বলেন, ‘‘এখানে যারা কাজ করছেন তারা সবাই পরিবার থেকে হয়রানি ও ট্রমার শিকার হয়েছেন৷ এখানে কাজ করায় তারা আর্থিকভাবে সাবলম্বী হতে পারছেন, সন্তানদের সাহায্য করতে পারছেন৷ যখন আমরা একসঙ্গে কাজ করি, আমাদের সব ব্যথা দূর হয়ে যায়৷’’
এই নারীরা বলছেন, প্রকৃতির কোনোকিছুই ফেলনা নয়৷ তাদের বিশ্বাস, তাদের কাজ পরিবেশের উপকার করছে৷ তবে সেলভির কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এই কাজ করায় তিনি ও তার মতো নারীরা সাবলম্বী হচ্ছেন, সন্তান ও পরিবারকে সহায়তা করতে পারছেন৷
মদন কুমার/জেডএইচ