কলকাতায় হাইকোর্ট চত্বরে ইউটিউব চ্যানেলের সংবাদকর্মী হেনস্থা
১ মার্চ ২০২৫পশ্চিমবঙ্গে বেশ কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেল রাজনৈতিক খবর পরিবেশন করে৷ এর মধ্যে একটি বঙ্গ টিভি৷ এই ইউটিউব চ্যানেলের রিপোর্টার রোজিনা রহমান হেনস্থার শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন৷
ইউটিউব চ্যানেলের প্রতিনিধিরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য মূল ধারার সাংবাদিকদের সঙ্গেই বিভিন্ন প্রেস কর্নারে হাজির হন৷ শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট চত্বরে যখন রোজিনা ও তার চিত্র সাংবাদিক সঞ্জীব বসু খবরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, সেই সময়ে মারধরের ঘটনাটি ঘটে বলে অভিযোগকারী দাবি করেছেন৷
রোজিনা বলেন, ‘‘দুপুরে হাইকোর্টের বি গেটের সামনে আমরা অপেক্ষা করছিলাম৷ স্ট্যান্ডের উপরে আমাদের মোবাইল রাখা ছিল৷ সেই সময়ে দেখি কালো পোশাকের আইনজীবীরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করেছেন৷ কোনো কর্মসূচি ছিল কি না, আমরা জানতাম না৷ হঠাৎই কালো পোশাক পরা তিন-চারজন নারী আইনজীবী আমার চিত্র সাংবাদিককে নিশানা করেন৷"
অভিযোগকারীর বয়ান অনুযায়ী, নারী আইনজীবীরা সঞ্জীবকে ক্যামেরা বন্ধ করে দিতে বলেন৷ চিত্র সাংবাদিক দাবি করেন, তার ক্যামেরা বন্ধ করা রয়েছে৷ রোজিনার অভিযোগ, "এর পরেই চিত্র সাংবাদিকের উপর চড়াও হন কালো পোশাকধারীরা৷ মোবাইল কেড়ে নেয়া হয়৷ গালিগালাজের পাশাপাশি ধাক্কা দেয়া হয়, মারধর করা হয় সঞ্জীবকে৷"
নারী ইউটিউবারের দাবি, তিনি সহকর্মীকে বাঁচাতে গেলে আক্রমণের মুখে পড়েন৷ রোজিনা বলেন, "সঞ্জীবের পাশে দাঁড়িয়ে আমি সওয়াল করলে আমার মোবাইল কেড়ে নেয়৷ আমার উপর চড়াও হয়৷ মিনিট দশেক ধরে এই পর্ব চলে৷ তীব্র বাদানুবাদের পর আমি মোবাইল ফেরত পাই৷ হাইকোর্ট চত্বর যেখানে সিসিটিভি আছে, সেখানে আমার মতো পরিচিত মুখের সংবাদকর্মী যদি আক্রান্ত হন, তাহলে বাকিদের নিরাপত্তা কোথায়৷" যে সময়ে এই ঘটনা ঘটে, তখন অন্যান্য সাংবাদিকরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷
এরপরে হেয়ার স্ট্রিট থানায় যান রোজিনা৷ সেখানে এই ঘটনার বিশদ বিবরণ লিখে এফআইআর করেন তিনি৷ নির্দিষ্ট কারো নাম নেই অভিযোগপত্রে৷ রোজিনা জানিয়েছেন, হেনস্থা করা কালো পোশাক পরা আইনজীবীদের কাউকে তিনি চেনেন না৷ এই ইউটিউবারের দাবি, পুলিশ তাকে আশ্বস্ত করেছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে৷
এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে দেয়া বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট থানা জানিয়েছে তারা অভিযোগটি পেয়েছে এবং তা তদন্ত করে দেখছে৷
হামলার নিন্দা
নারী ইউটিউবারের উপর আক্রমণের নিন্দা করেছে বিভিন্ন পক্ষ৷ হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ফিরদৌস শামীম ডিডাব্লিউকে বলেন, "আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়৷ জঘন্যতম অপরাধ যদি কেউ করে, তবু তাকে আক্রমণ না করে আইনের হাতে বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া উচিত৷ বিশেষ করে সংবাদকর্মী, যিনি সংবাদ সংগ্রহের জন্য গিয়েছিলেন, তাকে যদি আক্রমণের মুখে পড়তে হয়, সেটা একেবারেই কাঙ্ক্ষিত নয়৷
রোজিনার ইউটিউব চ্যানেল রাজ্যের শাসক দলের সমালোচনা করে থাকে৷ নিয়মিত তাদের ভিডিওতে বিভিন্ন চলতি বিষয়ে সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হয়৷ ইউটিউবার বলেন, ‘‘আমি শাসক দলের গঠনমূলক সমালোচনা করি৷ বিভিন্ন ব্যক্তির মন্তব্য তুলে ধরি৷ এই অধিকার আমাকে সংবিধান দিয়েছে৷ সেই কাজ আমি করে যাব৷’’
সিনিয়র সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘যে কোনো সাংবাদিক আক্রান্ত হওয়া দুঃখজনক৷ সাংবাদিক তার কাজ করবেন, রাজনৈতিক নেতা নিজের কাজ করবেন, পুলিশ তার কাজ করবে৷ সাংবাদিকের মতামত অবশ্যই নিরপেক্ষ হওয়া উচিত৷ সাংবাদিক যদি নিরপেক্ষ না-ও থাকেন, তাকে আক্রমণ করা বা তার উপর চড়াও হওয়া সব সময়ে নিন্দনীয় ঘটনা৷’’
মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী রঞ্জিত শূর বলেন, "সাংবাদিকদের মারধর উদ্বেগজনক ঘটনা৷ বিশেষত একজন নারী সাংবাদিককে নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের ফ্যাসিবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে নানা সময়ে কথা বলা হয়৷ সে রকমের ঘটনা এখানে ঘটলে ফ্যাসিবাদ প্রশ্রয় পাবে৷ এই সাংবাদিকের মতামত পছন্দ না হতেই পারে, তাকে যুক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে৷ এ ক্ষেত্রে পুলিশের ব্যবস্থা নেয়ার আগে উচিত, আইনজীবী সংগঠনের বিষয়টি নিন্দা করা৷ যেহেতু হাইকোর্ট চত্বরে এই ঘটনা ঘটেছে, তাই আদালতেরও হস্তক্ষেপ কাম্য৷’’
বিশ্ব জুড়ে ইউটিউবারদের উপর হামলার খবর মাঝেমধ্যেই পাওয়া যায়৷ মাস দুয়েক আগের একটি ঘটনা ঘিরে আলোড়ন তৈরি হয়েছিল ভারতে৷ ছত্তিসগড়ের ইউটিউবার মুকেশ চন্দ্রকারের দেহ উদ্ধার হয় নতুন বছরের শুরুতেই৷ ‘বস্তার জংশন’ নামে ইউটিউব চ্যানেল চালাতেন মুকেশ৷ খুবই জনপ্রিয় সেই চ্যানেল৷ প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের অভাব, অভিযোগ তুলে ধরতেন তিনি৷ বস্তারে একটি রাস্তা নির্মাণে দুর্নীতির খবর প্রচার করায় তাকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ৷ এক ঠিকাদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
সুমন বলেন, ‘‘এমন ঘটনা যে কোনো রাজ্যে ঘটুক না কেন, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার৷’’