কলকাতায় বাড়ি ভেঙে পড়ে একজনের মৃত্যু, সব দায় বাসিন্দাদের?
কলকাতায় আবার পুরনো বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়লো৷ বাড়ি সারানোর সময় এ দুর্ঘটনায় একজন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন চারজন। পুরসভার দাবি- বাড়িটি ‘বিপজ্জনক’ ছিল না৷ তাই দুর্ঘটনার সকল দায় বাসিন্দাদের!
বউবাজারে ভাঙলো বাড়ি
রোববার সকাল ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বৌবাজারের শ্রীনাথ দাস লেনে। ঘটনাস্থলে পুলিশ এবং দমকল যায়। বাড়িটি মেরামতির কাজে যুক্ত ছিলেন পাঁচ শ্রমিক। হঠাৎ করেই ওই বাড়ির দোতলার ছাদের একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। যার নামে রাস্তা, বাড়িটি সেই শ্রীনাথ দাসের পরিবারের।
এক শ্রমিকের মৃত্যু, আহত চারজন
বাড়ির একটা অংশের ছাদ ভেঙে পড়লে আশুতোষ অধিকারী নামে এক শ্রমিক মারা যান। চারজন শ্রমিক আহত হয়েছেন এ ঘটনায়।
শতাধিক বছরের পুরনো বাড়ি
বাড়িটি বহু পুরনো। কেউ বলছেন বাড়ির বয়স ১৫০ বছর, কেউ বলছেন দুইশ বছর। এলাকার বাসিন্দা অতনু দাস সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘এটা অজয় দাস, সুখেন দাসদের বাড়ি। সুখেন দাস বাংলা সিনেমার পরিচিত অভিনেতা ও পরিচালক এবং অজয় দাস সুরকার।। বাড়ি সারাইয়ের কাজ চলছিল। তখন ভেঙে পড়ে য়ায়।’’
ভাড়াটেদের টাকায় ঠিক করার চেষ্টা
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পুরনো ওই বাড়িটিতে প্রায় দুইশ জন ভাড়া থাকতেন। দাস পরিবারের কেউ এখানে থাকতেন না। বাড়ির বাসিন্দা দীপঙ্কর চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘অনেকদিন ধরেই বাড়িটা খারাপ অবস্থায় ছিল। এটা হলো দেবোত্তর সম্পত্তি। ছয় মাস আগে অবস্থা খুব খারাপ হয়। সারাবার জন্য সব ভাড়াটের কাছে পয়সা চাওয়া হয়।’’
‘বিপজ্জনক’ মনে করেনি পুরসভা
পুরসভার তরফে এই বাড়িটিকে বিপজ্জনক বাড়ি বলে ঘোষণা করা হয়নি। পুরসভার পার্ষদ জানিয়েছেন, এই বাড়িতে স্কুলও চলতো। এটা বিপজ্জনক বাড়ি ছিল না। চুন-সুড়কির বাড়ি ছিল। সারাতে গিয়ে পড়ে গেছে। না জেনে কাজ করা হয়েছে। পুরসভা এখন বাড়িটিকে ভেঙে দিচ্ছে।
আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয়
ভেঙে পড়া বাড়ির কিছু মানুষ ভাঙা বাড়ির পাশে জনসেবক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যরা তাদের আত্মীয়র বাড়িতে চলে গেছেন। বাড়ির ভিতর থেকে তারা তাদের জিনিসপত্রও বের করতে পারছেন না।
'বাড়িওয়ালার ফোন বন্ধ'
ভেঙে পড়া বাড়ির ভাড়াটে সোমা দত্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''বাড়িওয়ালার ফোন বন্ধ। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। মেরামতির কাজ বাড়িওয়ালার নির্দেশেই হচ্ছিল গত সাতদিন ধরে।'' সোমা আগে এই বাড়িতেই থাকতেন এখন তার মা থাকেন। সোমা জানান, ''ঘটনার সময় বেশ কয়েকজন ভাড়াটে এই বাড়িতে আটকে পড়েছিলেন। পরে পুলিশ ও পুরসভার কর্মীরা এসে তাদের উদ্ধার করেন।''
যে প্রশ্নের জবাব নেই
এত পুরনো বাড়ি, অনেকেই বলছেন, তা বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল, তখন পুরসভা কেন আগে ব্যবস্থা নেয়নি? কেন বাড়িটিকে বিপজ্জনক বলেনি? পুরসভাকে জানিয়ে কেন সারাইয়ের কাজ হয়নি? কেন বাড়ি ভাঙা নিয়ে কেউ কথা বলতে চাইছেন না? এর সঙ্গে কি জড়িয়ে আছে রাজনীতি? না কি নিছক ভয়, কথা বললেই মুশকিল হতে পারে? অনেকের সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ার পরেও তারা এড়িয়ে গেলেন। কেন? উত্তর পাওয়া গেলো না।