কর্ণাটকে ইসরায়েলি ও ভারতীয় নারীকে গণধর্ষণ, ধৃত তিন
১০ মার্চ ২০২৫আবার পর্যটনকেন্দ্রে গণধর্ষণের ঘটনা ভারতে। গত বৃহস্পতিবার কর্নাটকের কোপ্পালে হাম্পির কাছে এক ইসরায়েলি পর্যটক ও স্থানীয় এক হোমস্টের মালিককে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রাথমিক ভাবে এই ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার তামিলনাড়ু থেকে তৃতীয় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কী ঘটেছিল সেদিন
পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই নারী বৃহস্পতিবার রাতে আরো তিনজন পুরুষ পর্যটকের সঙ্গে স্টারগেজ করছিলেন। তাদের মধ্যে দুজন ভারতীয় এবং একজন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা পর্যটক ছিলেন। এই পুরুষ পর্যটদের পার্শ্ববর্তী তুঙ্গভদ্রা নদীতে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় দুষ্কৃতিরা। দুইজন সাঁতরে পারে উঠতে পারলেও তৃতীয় পর্যটক ডুবে গেছেন। মৃতের নাম বিভাস। তিনি ওড়িশা থেকে ঘুরতে এসেছিলেন। শনিবার তার দেহ উদ্ধার হয়।
ধর্ষণের শিকার হোমস্টের মালিক তার বয়ানে জানান, রাত্রে তুঙ্গভদ্রার তীরে ঘুরতে যান পর্যটকরা। তিনি ছিলেন ওই দলে। এর মধ্যেই একটি মোটরবাইকে তিন জন দুষ্কৃতি আসে। প্রথমে তারা টাকা চায়। টাকা দিতে অস্বীকার করলে প্রথমে তিন পুরুষ পর্যটককে জলে ফেলে দেয় এবং তার পর ইজরায়েলি পর্যটক এবং হোমস্টের মালিককে গনধর্ষণ করে তারা।
প্রশ্নের মুখে নারী সুরক্ষা
এই ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে ভারতে নারী সুরক্ষার বিষয়টি। এমনকি, বিদেশি নারী পর্যটকদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বার বার ঘটে চলেছে এই দেশে। গত মাসেই এক আইরিশ পর্যটককে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগে গোয়ার এক ব্যক্তির যাবজ্জীবনের সাজা শুনিয়েছে গোয়ার এক আদালত। গত বছর মার্চে ঝাড়খণ্ডে ধর্ষিত হন স্পেনের এক পর্যটক। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরেও ধর্ষণের সংখ্যা বিপজ্জনক ভাবে বেড়েছে।
ন্যাশানাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১২তে ২৫ হাজারের কাছাকাছি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তার পর থেকে কোভিডের দুটো বছর বাদ দিলে প্রতি বছর গড়ে ৩০ হাজারের বেশি ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৬তে সেই সংখ্যাটা প্রায় ৪০ হাজারের কাছাকাছি চলে গেছিল। ২০১৮-র একটি সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি ১৫ মিনিটে একজন মহিলা ধর্ষিতা হতেন এই দেশে। সর্বশেষ পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২-এ ৩১ হাডার ৫১৬ টি ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
কী করা দরকার?
ভারতের নারী সুরক্ষার চিত্র নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাধিক মানবাধিকার সংগঠন এবং সমাজকর্মীরা। আজাদ ফাউন্ডেশনের দোলন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন নারীদের সুরক্ষা দিতে সামাজিক স্তরে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করতে হবে। তিনি বলে, "রাষ্ট্রকেই এবিষয় দায়িত্ব নিতে হবে। ঠিক যেমন করে সাক্ষরতা বা পোলিও টিকাকরণের সচেতনতা প্রচার করা হয়েছিল তেমন করেই নারী সুরক্ষা, তাদের প্রতি সম্মান দেখানোর শিক্ষা দেওয়ার কাজ করা প্রয়োজন।”
প্রাথমিক ভাবে এই দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর বর্তালেও সমাজকর্মী ও সমাজের বিশিষ্টজনদেরো এই বিষয় দায়িত্ব নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন দোলন। "টক্সিক ম্যাসকিউলিনিটির প্রভাব কাটাতে সমাজের প্রত্যেককে দায়িত্ব নিতে হবে। তা না হলে দেশের অথবা বিদেশের মহিলা, কাজ করতে যাওয়া অথবা বেড়াতে যাওয়া মহিলা– কাউকেই নিরাপদে রাখতে পারব না আমরা।"
এসসি/জিএইচ(পিটিআই)