ওয়াকফ বিল নিয়ে দিল্লিতে বড় বিক্ষোভ, যোগ দিলেন বিরোধীরাও
১৮ মার্চ ২০২৫সোমবার বেলা দশটা থেকে দিল্লির যন্তর মন্তরে শুরু হয় এই প্রতিবাদ সভা। দিল্লি এবং আশপাশের রাজ্য থেকে প্রচুর মানুষ বিক্ষোভে যোগ দেন। মূলত অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড(এআইএমপিএলবি) এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল আরো বেশ কয়েকটি মুসিলম সংগঠন।
সংসদে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় সংসদ ভবনের কাছে যন্তর মন্তরকে বিক্ষোভস্থল হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। বিক্ষোভে দাবি ওঠে, এই বিল বাতিল করতে হবে। বিলের বিরুদ্ধে আগামী ২০ মার্চ পাটনায় বিক্ষোভ দেখাবে এআইএমপিএলবি।
এআইএমপিএলবি-র সদস্য সৈয়দ কাশিম রসুল ইলিয়াস বলেন, ''তারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা থেকে অনেক মানুষ আসছিলেন। আমাদের কাছে খবর এসেছে, অনেক বাস আটকে দেয়া হয়েছে। সরকারের ভয় পাওয়ার দরকার নেই। বরং মানুষের কথা শোনা উচিত। মানুষের কথা না শুনলে তাদের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।''
এআইএমপিএলবি-র সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহিম মুজাদদিদি বলেছেন, বোর্ডের তরফ থেকে সরকারের কাছে নিজের মতামত জানানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তাদের কথা শোনা হয়নি। তার যুক্তি, এই ওয়াকফ বিল অশান্তি তৈরি করবে। বিশেষ করে মসজিদ ও কবরস্থানের ক্ষেত্রে। এই বিল দেশের উন্নতির সহায়ক নয়।
এআইএমআইএম সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, ''যৌথ সংসদীয় কমিটি শুধু কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের সংশোধনী গ্রহণ করেছে। এর ফলে ওয়াকফ বোর্ডই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।''
মুজফফরনগর থেকে আসা এক প্রতিবাদী সংবাদসংস্থা এএনআই-কে জানিয়েছেন, তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে তিনি প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন।
কী বলছেন সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান?
যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি-র চেয়ারম্যান ও বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পাল বলেছেন, এআইএমপিএলবি কমিটির কাছে তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। রিপোর্টে তাদের বক্তব্য খতিয়ে দেখা হয়েছে।
জগদম্বিকা পাল জানিয়েছেন, ''পার্সোনাল ল বোর্ড যা বলেছে, তা রিপোর্টের অংশ হিসাবে আছে। তারপর তারা দিল্লিতে যন্তরে মন্তরে কেন বিক্ষোভ দেখালো? সংশোধনীর পর অনেক ভালো আইন তৈরি হবে। গরিব, নারী, বিধবা, বাচ্চারা সুবিধা পাবে।''
জগদম্বিকার দাবি, ''এআইএমপিএলবি দেশের মানুষের মনে ঘৃণা ছড়াবার কাজ করছে। তারা সংসদের আইন করার অধিকার মানতে চাইছে না। তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে ও বিভাজনের চেষ্টা করছে।''
ওয়াকফ বিল বিতর্ক
বিরোধী দলগুলির প্রতিবাদ সত্ত্বেও ওয়াকফ বিল সংসদে পেশ করা হয়েছে। তারপর বিলটি বিবেচনার জন্য বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পালের নেতৃত্বে যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি গঠন করা হয়। সম্প্রতি জেপিসি তার রিপোর্ট দিয়েছে।
সেই রিপোর্টে শুধু বিজেপি ও শরিকদের সংশোধনী গ্রহণ করা হয়েছে। বিরোধীদের আনা সব সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে। বিরোধীরা এনিয়ে প্রবল প্রতিবাদ করেছেন। বৈঠকে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাচের বোতল ভাঙা নিয়েও প্রবল বিতর্ক হয়েছে।
অধিকাংশ বিরোধী দল এই রিপোর্ট মানতে চাইছে না।
ওয়াকফ বিল-এ যে পরিবর্তন আনা হয়েছে
ওয়াকফ বিলে বলা হয়েছে, ওয়াকফ বোর্ডে মুসলিম নন এমন সদস্য রাখা হবে। ওয়াকফ বোর্ডে অন্ততপক্ষে দুই জন মুসলিম নন, এমন সদস্য থাকবেন। তাছাড়া অন্তত একজন করে শিয়া, সুন্নী এবং অনগ্রসর মুসলিমদের প্রতিনিধি থাকবেন। সার্ভে কমিশনারের পদটি বাতিল করা হয়েছে। তার জায়গায় জেলার কালেক্টরকে সার্ভে বা সমীক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, ওয়াকফ নিয়ে ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়া যাবে। সরকারি সম্পত্তি ওয়াকফের তালিকা থেকে বাদ যাবে। এই বিষয়ে কালক্টর সিদ্ধান্ত নেবেন।
জেপিসি-র সুপারিশ, সরকার অনথিভুক্ত ওয়াকফ সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারবে। ওয়াকফ সম্পত্তি পোর্টালে ছয় মাসের মধ্যে নথিভুক্ত করতে হবে। মেয়েদের অধিকার বহাল থাকবে।
'চাপ দেয়ার চেষ্টা'
ডিডাব্লিউ উর্দুর সাংবাদিক সালাহউদ্দিন জৈন জানিয়েছেন, ''এই বিক্ষোভের মাধ্যমে ওয়াকফ বিল নিয়ে সরকারের উপর চাপ দেয়ার চেষ্টা করেছে এআইএমপিএলবি-সহ মুসলিম সংগঠনগুলি। কংগ্রেস, তৃণমূল, জেডিইউ, বিজেডি-র মতো বিরোধী দলগুলি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে। তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র, কংগ্রেসের সলমন খুরশিদ, সমাজবাদী পার্টি, জেডিইউ, বিজেডি-র নেতা ও সাংসদরা বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন।''
সালাহউদ্দিনের মতে, ''এআইএমপিলবি নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশমের উপর চাপ অনেকটাই বাড়াতে চাইছে। সেজন্য পরের বিক্ষোভ পাটনায় হচ্ছে। এই দুইটি দল মুসলিম ভোটের উপর নির্ভর করে। রোজা সত্ত্বেও যেভাবে বিক্ষোভে জনসমাগম হয়েছে, তা চোখে পড়া মতো।''
ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি এবি রউফ গিয়ানি জানিয়েছেন, ''একটা কথা একাধিক বক্তার মুখে উঠে এসেছে। ওয়াকফ বিল আইনে পরিণত হলে তারা দেশজুড়ে শাহিনবাগদের মতো প্রতিবাদ জানাবেন।''
রউফ বলেছেন, ''বারবার বিক্ষোভকারীদের কাছে মঞ্চ থেকে আবেদন জানানো হয়, কেউ যেন মিডিয়াকে বাইট না দেন। কারণ, তাদের কথা মিডিয়া ভুলভাবে উপস্থাপিত করতে পারে।''
জিএইচ/এসজি