কমিশন মনে করছে, এর মাধ্যমে সব ধরনের শ্রমে নিয়োজিত শ্রমিকের স্বীকৃতি মিলবে। ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নিয়োজিত শ্রমিককে ন্যূনতম মজুরির কম দেয়া যাবে না।
গ্রার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, "জাতীয় ন্যূনতম মজুরিসহ নারী শ্রমিক, ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রমিক সুরক্ষাসহ আরো যেসব সুপারিশ করা হয়েছে এগুলো নিয়ে আমরাও দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। এর আগেও কমিশন ও সুপারিশ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। বাস্তবায়নই এখন আসল কাজ।”
শ্রমসংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী-পুরুষ, অন্যান্য লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠীভেদে মজুরি, ট্রেড ইউনিয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াসহ শ্রম খাতের সর্বত্র বৈষম্য নয়, বরং সম-অধিকার নিশ্চিতে কার্যক্রম গ্রহণ করবে রাষ্ট্র। একই সঙ্গে পাহাড়ে ও সমতলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও বহুজাতির জনগোষ্ঠীর শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে।
শিশু-কিশোর ও জবরদস্তিমূলক শ্রম বন্ধের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। এতে বলা হয়, শিশু-কিশোর ও জবরদস্তিমূলক শ্রম বন্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আগাম দাদন দেয়াসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে জবরদস্তিমূলক শ্রমের সব পথ বন্ধ করায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জলি তালুকদার বলেন, "এখানে শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং নারী শ্রমিকের ছয় মাসের যে মাতৃত্বকালীন ছুটির কথা বলা হয়েছে তা আমাদের আশা দেখাচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার, ন্যূনতম জাতীয় মজুরি, আর্থিক সুরক্ষার যে প্রস্তাব সবই ভালো। অনেক সুপারিশ আছে যা চাইলে অন্তর্বর্তী সরকার এখনই বাস্তবায়ন করতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো নিয়ে সরকার সময় পার করছে। তারপরও আমরা আশা করি যতদূর সম্ভব বাস্তবায়ন হবে।”
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সব শ্রমিকের সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, মৃত্যু, কর্ম-অক্ষমতা, অসুস্থতা-অবসর বা যেকোনো প্রতিকূল অবস্থায় শ্রমিকেরা নিরাপত্তার অধিকার পাবেন। শ্রমিকদের সমস্যার ভিত্তিতে কোনো না কোনো নিরাপত্তা স্কিমে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রবর্তন ও সামাজিক বিমাব্যবস্থা প্রবর্তনে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। তাদের জন্য স্বাস্থ্য কার্ডের কথাও বলা হয়েছে।
সবার জন্য নিরাপদ কাজ, স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাঠামো ও নীতিমালা সর্বজনীন হালনাগাদ চায় কমিশন। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ সংশোধন করে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংজ্ঞা ও বিধান আধুনিকায়ন, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ চিহ্নিত করে সুরক্ষা ও ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত, সেইফটি কমিটি গঠন ও প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেছে তারা।