এখনও অনিশ্চয়তার মেঘ কাটেনি
১ মার্চ ২০০৯দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাত্র দুই মাস আগে সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন৷ এরপরও যেভাবে ঠান্ডা মাথায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাটিকে সামাল দিয়েছেন তা বেশ প্রশংসাই কুড়িয়েছে দেশের ভেতরে এবং বাইরে৷ কিন্তু হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বি খালেদা জিয়া এ ঘটনাকে পুজি করতে পারেন তার নিজ রাজনীতির জন্য৷ ফলে সেনাবাহিনীর সমর্থনও হারাতে পারেন শেখ হাসিনা৷ বিদ্রোহের ঘটনাটি যেভাবে দেশটির নিরাপত্তার দুর্বলতা তুলে ধরেছে তাতে করে যেসব বিদেশী বিনিয়োগ এবং দাতাগোষ্ঠী রয়েছেন তারাও পিছু হটতে পারেন৷ আগামী সময়গুলোতে বাংলাদেশে নতুন যে কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে৷
সেনাবাহিনীর প্রতিশোধ নেয়ার সম্ভাবনা
দুই দিনের বিদ্রোহের ফলে যে বিপুল সংখ্যক সেনা কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছে তার একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব পড়তে যাচ্ছে পুরো সেনাবাহিনীতে৷ এছাড়া সেনা কর্মকর্তারাই প্যারা মিলিটারি বাহিনী বিডিআর এর নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন৷ বিডিআর জোয়ানদের হাতে এতজন সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে৷ বিষয়টি স্বীকারও করেছেন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদ হাসান৷ তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও আমরা আশা করছি সরকার এ হত্যাকান্ডের দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে৷
তবে গণতান্ত্রিক সরকার যদি এ ক্ষেত্রে যথাযথ দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হয় তাহলে সেনাবাহিনী নিজেই এ ঘটনার বিচার করার দায়িত্ব তুলে নিতে পারে৷ উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এর আগেও বেশ কয়েকবার সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে৷ সেসব ক্ষেত্রে সরকারের অদক্ষতার দোহাই দিয়েই সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছিলো৷
রাজপথে অস্থিরতার শুরু
গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে শেখ হাসিনা বিজয়ী হয়েছিলেন৷ তাঁর দলের প্রতিশ্রুতি ছিলো দ্রব্যমূল্য কমানো, দুর্নীতি দূর করা এবং দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নেয়া৷ কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় সরকারের গোয়েন্দা দক্ষতা কত অল্প৷ যদিও ঢাকায় অবস্থিত সদর দপ্তরেই মূল বিদ্রোহের ঘটনাটি ঘটেছে কিন্তু এর জের ছড়িয়ে পড়েছিলো দেশের বেশ কয়েকটি বিডিআর ক্যাম্পে৷ এমন ঘটনা দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকেও সরকার বিরোধী একটি অবস্থান নিতে সহায়তা করবে এবং নতুন করে রাজপথে আন্দোলনের সুযোগ করে দেবে৷ বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ইতিমধ্যেই সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার সমালোচনা করেছেন৷
পরিস্থিতি হাসিনার নাগালে
বিডিআর বিদ্রোহের পরও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ সরকারের প্রতি তাদের আনুগত্যের কথা জানিয়েছেন৷ গত কয়েকদিন ধরে সেনাবাহিনীর বক্তব্যেও বোঝা যাচ্ছে তারা শেখ হাসিনাকে সময় দিতে চায়৷ অপরদিকে হাসিনা যদি বিডিআর সদস্যদের দাবী অনুযায়ী তাদের বেতন ভাতার সুবিধা বাড়ান পাশাপাশি বিডিআর এর মধ্যে সেনা কর্মকর্তাদের ভূমিকা অব্যাহত রাখেন তাহলে পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণেই থাকবে৷ এক্ষেত্রে সেনাবাহিনী, বিডিআর কিংবা পুলিশ কেউই নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবে না৷ এবং তাহলে দেশের অর্থনীতির দিকে নজর দিতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷