এইচআইভি প্রতিরোধে কার্যকর ইঞ্জেকশন
২৯ মার্চ ২০২২সাউথ আফ্রিকার সোয়েটো টাউনশিপে এইচআইভি-তে আক্রান্ত পরিবারকে সহায়তা করতে ইকাগেং নামের এনজিও সক্রিয় রয়েছে৷ কারোল দিয়ান্তি সেটি প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ শুধু এইচআইভি আক্রান্ত মানুষই সেখানে আসেন না৷ এইচআইভি থেকে সুরক্ষা কতটা কঠিন, নারীরা সমবেত হয়ে সে কথাও বলেন৷ তাদের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয় না৷ টাউনশিপের বাসিন্দা টান্ডো সিবিসি বলেন, ‘‘এটা বড় এক ট্যাবু৷ কোনো পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক হলে নারী হিসেবে এইচআইভি পরীক্ষার উদ্যোগ নেবার ইচ্ছা হয়৷ কিন্তু মনে হয়, পুরুষ সঙ্গী যদি রেগে যায়! বলতে পারে, ভেবেছো কী, আমার সংক্রমণ রয়েছে, দেখলে কি অসুস্থ মনে হচ্ছে?''
ফলে অনেকে এমন আলোচনা এড়িয়ে যেতে চায়৷ সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, বেশিরভাগ নারী পুরুষের উপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল৷ ডেসিরে টাকালো এমনই এক নারী৷ তিনি বলেন, ‘‘কারণ, এই পুরুষের হাতে টাকা-পয়সা আছে৷ সেই উপার্জন করে বলে এই সংসারে আমার সব কিছু করার অধিকার নেই৷ নারী হিসেবে আমি নিরাপদ যৌন সম্পর্ক তো চাইতেই পারি না৷ এমনকি সংক্রমণের ঝুঁকির কথা জেনেও সেটা মেনে নিতে হয়৷ কারণ আমি পুরুষ সঙ্গীর উপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল৷''
অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা যত বেশি, যৌন সম্পর্কের সময় নারীদের পক্ষে নিজস্ব শর্ত আরোপ করা ততই কঠিন৷ সংক্রমণের হারের ক্ষেত্রেও সেই বাস্তবতার প্রতিফলন দেখা যায়৷ আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে মূলত নারীরাই এইচআইভি-তে আক্রান্ত হন৷ এ ক্ষেত্রে এবার এক বৈজ্ঞানিক সমাধানসূত্রের আশা দেখা দিচ্ছে৷ এখনো পর্যন্ত এইচআইভি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হলে নারীদের প্রতিদিন একটি করে পিআরইপি ট্যাবলেট খেতে হয়৷
জোহানেসবার্গের হোয়াইটওয়াটার্সব়্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবার সেটির একটি বিকল্প পরীক্ষা করছে৷ আট সপ্তাহ অন্তর সেই ইঞ্জেকশন নিতে হয়৷ ৩,০০০-এরও বেশি নারী সেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন৷ তাঁরা হয় দৈনিক ট্যাবলেট অথবা ইঞ্জেকশন নিয়েছেন৷ ফলাফল অত্যন্ত আশাপ্রদ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর শিনেয়াদ ডেলানি-মোরেৎলোয়ে বলেন, ‘‘ইঞ্জেকশন দৈনিক ট্যাবলেটের তুলনায় নতুন সংক্রমণ ৮৯ শতাংশ বেশি প্রতিরোধ করেছে৷ সব মিলিয়ে মাত্র এক শতাংশ নারী নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন৷ আফ্রিকার দক্ষিণের অন্যান্য পরীক্ষার তুলনায় সেটা সত্যি কম৷ সে সব ক্ষেত্রে প্রায় চার শতাংশ সংক্রমণ ঘটেছে৷''
পিআরইপি ট্যাবলেট এবং নতুন ইঞ্জেকশন – দুটিই আসলে অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ওষুধ৷ সেগুলি শরীরে ভাইরাসের প্রসারের গতি কমিয়ে দেয়৷ এইচআইভি সংক্রমণের চিকিৎসার জন্যও সেই অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্টই প্রয়োগ করা হয়৷ কিন্তু সেখানেও সমস্যা রয়েছে৷ অনেক নারীই আগেভাগে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সেই ট্যাবলেট খান না৷ কারণ সে ক্ষেত্রে আশেপাশের মানুষ তাদের আক্রান্ত বলে ভাবতে পারে৷ প্রো. ডেলানি-মোরেৎলোয়ে বলেন, ‘‘বিশেষ করে আমাদের অঞ্চলের নারীদের সমস্যা হলো, তাঁরা অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ওষুধ নিলে মানুষ ভাবে, তাদের এইচআইভি হয়েছে৷ সে ক্ষেত্রে নারীদের একঘরে করে রাখার আশঙ্কা থাকে৷ ঘনঘন যৌনসঙ্গী বদলানোর ইচ্ছের কারণেই এইচআইভি থেকে সুরক্ষার তাগিদ দেখা যাচ্ছে – এমন অপবাদও দেওয়া হয়৷ তখন পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গেও সমস্যা দেখা দেয়৷ নারীরা নিজস্ব যৌন আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ চাইলেও তাদের নিন্দা করা হয়৷
ভবিষ্যতে আট সপ্তাহ অন্তর ইঞ্জেকশন নিয়ে সুরক্ষা পাওয়া যাবে, এমনটা জেনে সোয়েটোর নারীরা উৎসাহ পাচ্ছেন৷ এতে শুধু সুবিধাই হবে না, গোপনীয়তাও বজায় রাখা যাবে৷ কঠিন অবস্থাতেও নারীরা নিজেদের জীবনের উপর অন্তত কিছুটা নিয়ন্ত্রণ পাবেন৷
সান্ড্রা টিস/এসবি