ছয়জাতির আলোচনা
১০ এপ্রিল ২০১২ইস্তানবুলে বৈঠক করতে শুরুতে রাজি থাকলেও পরে বেঁকে বসেছিল ইরান৷ কারণ – বন্ধুরাষ্ট্র সিরিয়ার ব্যাপারে তুরস্কের বর্তমান বিরোধী অবস্থান৷ এছাড়াও রয়েছে, ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত তেল আমদানি নিষেধাজ্ঞায় তুরস্কের পক্ষাবস্থান৷ এসব কারণে ইস্তানবুলে না করে বাগদাদ বা বেইজিং'এ আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিল ইরান৷ অবশ্য পরে তুরস্কেই যেতে রাজি হয়েছে তারা৷
ইরানের প্রধান পরমাণু আলোচক সাঈদ জলিলি'র কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে ইস্তানবুলকে আলোচনার স্থান হিসেবে মেনে নেয়ার কথা জানানো হয়েছে৷ আর পরবর্তী রাউন্ডের জন্য বাগদাদকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে৷
ইরানের সঙ্গে ছয়জাতির আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ক্যাথরিন অ্যাশ্টন৷ এই ছয় দেশ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি৷
যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা বিশ্বের আশঙ্কা, ইরান উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়ামকে বিশুদ্ধ করছে৷ যেটা দিয়ে ভবিষ্যতে দেশটি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারে৷
কিন্তু ইরান বলছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসা বিষয়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য ইউরেনিয়ামকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ করা প্রয়োজন৷ অর্থাৎ পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে মানুষের প্রাণ নেয়া নয়, বরং গবেষণা করে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্যই এই পরমাণু কর্মসূচি বলে জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ৷
তিনি বলেন, যতই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক, যতই সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা হোক, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি থেকে ফিরে আসবে না৷ ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘যদি পুরো বিশ্বও আমাদের বিপক্ষে চলে যায়, তবুও আমরা এগিয়ে যাব৷ কোনো শক্তিই আমাদের আটকাতে পারবেনা৷''
এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি স্থগিত এবং কোম শহরের পরমাণু স্থাপনা বন্ধ করাতে ইরানকে রাজি করানো, শনিবারের আলোচনায় এই দুটো বিষয় প্রাধান্য পাবে৷ কিন্তু, এভাবে আগে থেকেই বিষয়বস্তু ঠিক করে রাখাটাকে ভাল চোখে দেখছেন না ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি আকবর সালেহি৷ তিনি বলেন, ‘‘আলোচনার আগে কোনো শর্ত দেয়ার মানে হচ্ছে উপসংহার টেনে দেয়া৷ যার কোনো অর্থ হয় না৷''
গবেষণার জন্য ইরানের যে ইউরেনিয়াম প্রয়োজন, অন্য কোনো দেশ থেকে সেটা ইরানকে দেয়ার প্রস্তাব করেছিল পশ্চিমা বিশ্ব৷ অতীতের সেই আলোচনা অবশ্য সফল হয়নি৷
এবার আবারও ঐ একই ধরণের আলোচনায় ইরানের কোনো আগ্রহ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির পরমাণু কর্মসূচির প্রধান ফেরেইদুন আব্বাসি-দাভানি৷ অবশ্য তিনি বলছেন, গবেষণার জন্য ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ইউরেনিয়ামই সমৃদ্ধ করা হবে৷ পরে তার পরিমাণ কমিয়ে আনা হতে পারে৷
এদিকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বেশি চিন্তিত ইসরায়েল৷ কেননা ইরানের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে নেতারা সাম্প্রতিক কালে তাদের বিভিন্ন মন্তব্যে ইসরায়েলকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দেয়ার কথা বলেছেন৷ ফলে ইসরায়েলও ইরানের উপর সম্ভাব্য সামরিক হামলার কথা বলে আসছে গত ক'দিন থেকে৷ এতে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ ছয়জাতির সঙ্গে ইরানের আলোচনা সেই অবস্থার উন্নতি করতে পারে কিনা সে দিকে তাকিয়ে থাকবে সারা বিশ্ব৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক (রয়টার্স, এপি, এএফপি)
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন