ইরাক : নিরাপত্তা পরিস্থিতির লাগাতার অবনতি
১৫ জুন ২০০৪সোমবার বাগদাদের কেন্দ্রে একটি আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলায় ৫ জন বিদেশী প্রযুক্তিবিদসহ কমপক্ষে ১২ জন নিহত ও ৬০ জনেরও বেশী আহত হয়েছে - যাদের মধ্যে ব্রিটিশ, ফরাসি, আমেরিকান ও একজন ফিলিপাইন্সের অসামরিক নাগরিক ছিলেন৷ ইরাকে মার্কিন প্রশাসকের দফতর বিভিন্ন কাজের জন্য যেসব বিদেশী বেসরকারী কর্মী নিয়োগ করেছে, তারা ক্রমশঃ আরও বেশী করে হামলার লক্ষ্য হচ্ছে৷ সোমবারের হামলায় নিহতদের মধ্যে ৩ জন GENERAL ELECTRICS কোম্পানির কর্মী ও তাদের ২ জন দেহরক্ষীও ছিলো৷
ইরাকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফালা আল নাকিব-এর মতে, হামলাকারী একজন বিদেশী ছিলো৷ গত সপ্তাহে লেবাননের যে ৩ নাগরিককে অপহরণ করা হয়েছিলো, তাদের একজনের ছবি দেখিয়েছে আল আরাবিয়া টেলিভিশন কেন্দ্র৷ সম্ভবত তুরস্কের দুই নাগরিককেও অপহরণ করা হয়েছে৷ ইরাকে সম্প্রতি বিদেশীদের হত্যা ও অপহরণের ঘটনা আরও বেড়ে গেছে৷ তবে আভ্যন্তরীণ প্রশাসনের প্রেসিডেন্ট গাজ়ি ইয়াওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ইরাক তার নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তুললে হামলা ও নির্বিচারে হত্যার ঘটনা বন্ধ হয়ে যাবে৷
জাতিসংঘের মহাসচিব কোফি আন্নান জানিয়ে দিয়েছেন যে ইরাকে নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনুকূল হলে তবেই জাতিসংঘ সেখানে সক্রিয় হবে৷ গতকাল ব্রাজ়িলের সাঁও পাউলো শহরে বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে আন্নান বলেন, জুন মাসের শেষে পরিকল্পনা অনুযায়ি ইরাকীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরের পরিস্থিতির উপর এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে৷ উল্লেখ্য, গত বছর ১৯শে অগাস্ট বাগদাদে এক সন্ত্রাসী হামলায় ইরাকে জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্যার্জিও ভিয়েরা দি মেলোসহ ২২ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছিলো৷ ঐ ঘটনার পর আন্নান সেদেশে থেকে জাতিসংঘের সব কর্মী প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন৷
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেফ হুন সোমবার এক অঘোষিত সফরে বসরায় ব্রিটিশ সৈন্যদের পরিদর্শন করেন৷ ইরাকের কারাগারে বন্দিদের নিপীড়নের অভিযোগে এবার ৪ জন ব্রিটিশ সৈন্যকেও সামরিক আদালতের সামনে জবাবদিহি করতে হচ্ছে৷ উল্লেখ্য, এখনো পর্যন্ত শুধুমাত্র বাগদাদের আবু গুরেইব কারাগারে বন্দিদের নিপীড়নের অভিযোগে মার্কিন সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ এদিকে সোমবার ঐ কারাগার থেকে আরও প্রায় ১০০ ইরাকী বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে৷ তাদের অনেকেই মার্কিন সেনাবাহিনীর আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছে৷ রেড ক্রস-এর সূত্র অনুযায়ি গত সপ্তাহে ঐ কারাগারে বন্দিদের সংখ্যা কমে ৩,২৯১-তে দাঁড়িয়েছে৷ মার্চ মাসে সেখানে ৬,৫২৭ জন বন্দি ছিলো৷ তবে তাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে - না অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে, সেবিষয়ে রেড ক্রসের হাতে কোনো তথ্য নেই৷
ইরাকের আভ্যন্তরীণ প্রধানমন্ত্রী ইয়াদ আলাওয়ি সোমবার আল জাজ়িরা টেলিভিশন কেন্দ্রকে জানিয়েছেন, যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেন ও অন্যান্য বন্দিদের দু সপ্তাহ পর ইরাকের নতুন সরকারের হাতে তুলে দেবে এবং তারপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের বিচার শুরু হবে৷ উল্লেখ্য, গতকাল আন্তর্জাতিক রেড ক্রস জানিয়েছে, যে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ি হয় অবিলম্বে সাদ্দামের বিচার শুরু করতে হবে, না হলে তাঁকে মুক্তি দিতে হবে৷ কারণ ৩০শে জুন আনুষ্ঠানিকভাবে দখলদারি শেষ হচ্ছে৷ তাই যুদ্ধবন্দি হিসেবে সাদ্দামকে মুক্তি দিতে হবে - যদি না তার আগেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়৷