আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনার কারণ কী?
ভারতের আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। তা জানতে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি ওড়ার সময় রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি ছিল কিনা তদন্ত করে দেখা হবে।
মৃত্যু বেড়ে ২৬৫
বিধ্বস্ত বিমানে ছিলেন ২৪২ জন যাত্রী ও বিমানকর্মী। একজন বাদে সকলেই মারা গেছেন। অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যাওয়া যাত্রী বিশ্বাস কুমার রমেশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি ভালো আছেন। তাকে শুক্রবার জেনারেল ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের মেসের উপর ভেঙে পড়ে। তার জেরে মারা গেছেন আরো ২৪ জন।
তাপমাত্রা ছিল এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সাংবাদিকদের বলেছেন, বিমানে এক লাখ ২৫ হাজার লিটার জ্বালানি ছিল। দমকলের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিমান ভেঙে পড়ার পর জ্বালানির ট্যাংকে বিস্ফোরণ হয়। তাপমাত্রা সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ফলে একজন বাদে কেউই বাঁচতে পারেননি। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি বা অন্যরা এই ধরনের বিপর্যয় আগে দেখেননি।
নিহতদের ক্ষতিপূরণ
দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া যাত্রীদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টাটা’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার খরচও তারা বহন করবেন। মেডিক্যাল কলেজের যে হস্টেলের উপর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, সেই হস্টেল ও অন্য ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি টাটা সারিয়ে দেবে।
বেঁচে যাওয়া যাত্রীর কথা
একমাত্র বেঁচে যাওয়া ব্রিটিশ যাত্রী বিশ্বাস কুমার রমেশ বলেছেন, বিমানটি ওড়ার এক মিনিটের মধ্যে ভেঙে পড়ে। তিনি এমার্জেন্সি দরজার পাশে ১১-এ সিটে বসেছিলেন। বিশ্বাস বলেছেন, ''প্লেন ভেঙে পড়ার পর আমার সিট ছিটকে বেরিয়ে আসে। আমি সিটবেল্ট খুলি। আমি নিচে গিয়ে পড়েছিলাম। তারপর বেরোবার চেষ্টা করি। আমি বেঁচে যাবো, ভাবতে পারিনি। চোখের সামনে মানুষকে মরে যেতে দেখেছি।''
ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার উদ্ধার
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার উদ্ধার করা হয়েছে। বার্তাসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, গুজরাটের এটিএস (অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড) ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে তা খুঁজে বের করেছে। তবে এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমানের ব্ল্যাক বক্স এখনো পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনার কারণ
দুর্ঘটনার কারণ এখনো জানা যায়নি। অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, তদন্ত শেষ না হলে কারণ বলা সম্ভব নয়। তদন্ত করছে এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো। ড্রিমলাইনার বিমানে দুটো ইঞ্জিন একসঙ্গে খারাপ হওয়ার ঘটনা বিরল। সেটা হলে আর কিছু করার থাকে না। কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, বিমানে পাখি ধাক্কা মারায় এই দুর্ঘটনা। অন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আহমেদাবাদের তাপমাত্রা ও বেশি ওজন বহন করায় এই দুর্ঘটনা।
ইঞ্জিন নির্মাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা আসছেন
এই বিমানের ইঞ্জিন তৈরি করেছে জিই এয়ারোস্পেস। তাদের প্রতিনিধিরা ভারতে আসছেন। বিমানের নির্মাতা বোয়িংয়ের প্রতিনিধিরাও ভারতে আসছেন।
ড্রিমলাইনারের ভবিষ্যৎ
ভারতে বোয়িং-এর ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ বিমান বসিয়ে দেয়ার কথা সরকার চিন্তাভাবনা করছে বলে এনডিটিভি-কে সূত্র জানিয়েছে। নিরাপত্তার কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে তারা জানিয়েছে। এই বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ও বোয়িংয়ের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে এই বিমান দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্তের উপর।
অ্যামেরিকার আপত্তি
মার্কিন পরিবহনমন্ত্রী সিন ডাফি এবং ফেডারেল এভিযেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ক্রিস রোচেলিউ বলেছেন, ড্রিমলাইনার বিমান বসিয়ে দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ডাফির দাবি, তিনি ন্য়াশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের চেয়ারম্যান জেনিফার হোমেনডির সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের প্রতিনিধিদল ভারতে আসছে। বোয়িং ও জিই এয়ারোস্পেসের প্রতিনিধিরাও আসছে। তারা সবকিছু খতিয়ে দেখবে। তদন্তের কাজে্ও সাহায্য করবে।
রক্ষণাবেক্ষণ খতিয়ে দেখা হবে
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানগুলির রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে সরকার। সেখানে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিভ প্রসিডিওর অনুসরণ করা হচ্ছে কি না তা দেখা হবে। গত তিন দশকের মধ্য়ে এত বড় বিমান দুর্ঘটনা হয়নি। পুরো দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে এই বিমান দুর্ঘটনা। আলোড়ন ফেলেছে গোটা বিশ্বে। এরকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার দিকে নজর দিয়েছে সরকার।
ঘটনাস্থলে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিন আহমেদাবাদ গিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে যান। তিনি প্রায় ২০ মিনিট সেখানে ছিলেন। হাসপাতালে গিয়ে একমাত্র বেঁচে যাওয়া যাত্রী বিশ্বাস কুমারের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি দুর্ঘটনা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানির বাড়িতেও যান নরেন্দ্র মোদী।
জিএইচ/এসিবি(পিটিআই, এএনআই, রয়টার্স, এপি, এএফপি)