আবার মুশকিল আসান করতে চলেছে ইসিবি?
১০ জুন ২০২২ইউরোপের একাধিক আর্থিক ও আর্থিক সংকটের সময় পরিত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসিবি৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে ১৯টি দেশে অভিন্ন মুদ্রা ইউরো চালু রয়েছে, সেই দেশগুলি এতকাল ইসিবি-র রক্ষাকবচের সুবিধা পেয়ে এসেছে৷ করোনা সংকটের ধাক্কা সামলাতে ইইউ ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলির সুফল সবে টের পাওয়া যাচ্ছিল৷ কিন্তু ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা ও করোনা সংকট সামলাতে চীনের কড়া ‘জিরো কোভিড’ নীতি অর্থনীতির উপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে৷ জ্বালানি নিয়ে অনিশ্চয়তা, কাঁচামাল সরবরাহে বিঘ্নের মতো কারণে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি দেখা যাচ্ছে, ইউরোপের সাধারণ মানুষ যার কুফল হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন৷
এমন চলমান সংকটের প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, ইসিবি কি এ যাত্রায়ও পরিত্রাতা হিসেবে মঞ্চে আসবে কিনা এবং মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়তা করতে পারবে কিনা৷ বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু পদক্ষেপের পূ্র্বাভাস দিয়েছে৷ মূলত সুদের হারে পরিবর্তন এনে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সামাল দিতে চায় ইউরোপের এই প্রতিষ্ঠান৷ জুলাই মাসে সুদের হার বাড়িয়ে ০.২৫ শতাংশে আনার পাশাপাশি ‘অ্যাসেট পারচেজ’ কেনা বন্ধ করতে চলেছে ইসিবি৷ উল্লেখ্য, গত ১১ বছরে ইসিবি সুদের হার বাড়ায় নি৷ গত মাসে ইউরো এলাকায় মূল্যস্ফীতির মাত্রা ৮.১ শতাংশ ছোঁয়ার পর আর হাত গুটিয়ে বসে থাকার উপায় ছিল না৷
তবে এ যাত্রায় ইসিবি যে খুব বেশি সহায়তা করতে পারবে না, সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ৷ বর্তমান পূর্বাভাসের ভিত্তিতে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি বেশ কিছুকাল অপ্রিয় মাত্রায় বেশি থাকবে৷ তবে সেই মাত্রা ইসিবি-র লক্ষ্যমাত্রায় নামিয়ে আনতে তিনি গ্রীষ্মের পর সুদের হার আরো বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, মূল্যস্ফীতির হার অপরিবর্তিত থাকলে অথবা আরও অবনতি হলে সেপ্টেম্বর মাসে ইসিবি-র বৈঠকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে৷
সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে ইসিবি আরও একটি পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ ঋণ সংকটের জের ধরে আর্থিক বাজারের উপর চাপ কমাতে ২০০৯ সাল থেকে এই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশাল আকারে বন্ড কিনে এসেছে৷ আগামী ১লা জুলাই থেকে সেই পদক্ষেপ বন্ধ করা হচ্ছে৷ একদিকে মূল্যস্ফীতি কমানো, অন্যদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করার চেষ্টা চালিয়ে ইসিবি-র উপর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য চাপ বাড়ছে৷
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ফেড’ ও ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড আগেই বেশ কয়েক ধাপে সুদের হার বাড়িয়েছে৷ কিন্তু ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বিধা কাটিয়ে তুলতে আরও সময় নিয়েছে৷ কারণ একই সঙ্গে ১৯টি দেশের স্বার্থ রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ সামলানো মোটেই সহজ কাজ নয়৷ সুদের হার বাড়ালে ইটালির মতো ঋণের ভারে জর্জরিত দেশে দুশ্চিন্তা দেখা দিতে পারে৷ আর্থিক বাজারে ইটালির সরকারি বন্ড বিক্রির হিড়িক দেখা দিতে পারে বলে একটা আশঙ্কা রয়েছে৷ আগেভাগেই সুদের হার বাড়ানোর পূর্বাভাস দিয়ে ইসিবি আচমকা অস্থিরতা এড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)