আফগানিস্তান: তালেবানের ক্ষমতা দখলের চার বছর
১৫ আগস্ট ২০২৫রুশ স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা
২০২১ সালের আগস্টে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর কাবুলে সরকারের পতন হয় এবং তালেবানরা ক্ষমতা দখল করে। চার বছর পর তালেবানদের ক্ষমতা আরও দৃঢ় হয়েছে। এমনকি জার্মানিসহ কিছু সরকার কাবুলের সরকারে সাথে কার্যত সম্পর্ক স্থাপন করছে।
রাশিয়া গত জুলাই মাসে প্রথম দেশ হিসেবে তালেবানদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। প্যারিসের ইনালকো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষক সরদার রহিমী বলেন, "এভাবে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে রাশিয়া যা মার্কিনিরা চার বছর আগে সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছিল।"
চীনও তালেবান শাসনের সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখছে। বেইজিং আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি, তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কূটনৈতিক প্রোটোকল অনুযায়ী তালেবান রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন।
জার্মানি থেকে আফগানিস্তানে ফেরত
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর জার্মানি আফগানিস্তানে দুটি প্রত্যাবাসন ফ্লাইটের আয়োজন করে। মোট ১০৯ জন আফগান নাগরিককে তাদের দেশে পাঠানো হয়েছে - যাদের অর্ধেকের বেশি বিভিন্ন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থা প্রো অ্যাসাইল এই প্রত্যাবাসন ফ্লাইটগুলোকে "আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন" বলে নিন্দা জানিয়েছে।
ইরান ও পাকিস্তান থেকে ব্যাপক নির্বাসন
ইউরোপ থেকে বিতাড়ণের সংখ্যা আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ ইরান ও পাকিস্তান থেকে ব্যাপক বিতাড়ণের তুলনায় নগণ্য। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে শুধু এই দুই দেশ থেকে ২১ লাখের বেশি প্রত্যাবাসন নথিভুক্ত করেছে।
নারী অধিকার সংকট
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে নারীদের পুরোপুরি জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ১২ বছরের বেশি বয়সি প্রায় ১৪ লাখ মেয়ে আর স্কুলে যেতে পারে না, এবং তরুণী নারীদের উচ্চ বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সাবেক আফগান কূটনীতিক শুকরিয়া বরকজাই বলেন, "নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তালেবানরা নারীদের ব্যবহার করছে। তারা তাদের শাসনকে বৈধতা দেয়ার জন্য নতুন সীমাবদ্ধতার মাধ্যমে নারীদের উপর চাপ বাড়ায়।"
মানবিক সংকট
ইইউ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানে দারিদ্র্যের কারণে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। এটি দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন আফগান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইউএসএআইডি বন্ধ করে দেওয়ায়মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে, যার ফলে ৩০ লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না এবং ৪২০টি ক্লিনিক বন্ধ হয়ে গেছে।
ওয়াসলাত হাসরাত-নাজিমি/এসএসজি