আঙুলের ছাপ না মিললে অভুক্ত থাকবে মানুষ?
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২কোটির বেশি কার্ড ইতিমধ্যে নিষ্ক্রিয় করেছে রাজ্য সরকার৷ পুজোর এই খুশির দিনে দরিদ্র জনতার একাংশ কি অভুক্ত থাকবে?
রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে যে খাদ্য জনগণের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ভর্তুকি দেয়৷ এই সুযোগে ভুয়া কার্ড ব্যবহার করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী গরিবের জন্য বরাদ্দ খাদ্য হাতিয়ে নেয়৷ দুর্নীতি রুখতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেশনের চাল-গম বণ্টন করা হচ্ছে৷ দেশজুড়ে স্বচ্ছতার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষও৷
কমছে রেশনের গ্রাহক সংখ্যা
আধারের সঙ্গে রেশন কার্ড যুক্ত করা হচ্ছে যাতে বৈধ গ্রাহক ছাড়া কেউ খাদ্য সামগ্রী নিতে না পারে৷ কঠোরভাবে এই নীতি প্রয়োগ করায় গ্রাহকের সংখ্যাও কমেছে রাজ্যে৷ খাদ্য দপ্তর সূত্রের খবর, এক বছরের মধ্যে গ্রাহকের সংখ্যা কমেছে প্রায় এক কোটি ৩২ লাখ৷ ২০২১ সালের জুলাইয়ে রাজ্যে রেশন গ্রাহক ছিলেন ১০ কোটি ৪৫ লাখ৷ এ বছরের আগস্টের মাঝামাঝি তা হয়েছে নয় কোটি ১৩ লাখ৷ আঙুলের ছাপ না মেলায় সমস্যা হচ্ছে গ্রাহকদের৷ তোপের মুখে পড়ছেন রেশন ডিলাররা৷
অল বেঙ্গল ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বিশ্বম্ভর বসু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানুষকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে৷ গালমন্দ খেতে হচ্ছে৷ সরকার কার্ড নিষ্ক্রিয় করছে, আর ফল ভুগছেন ডিলাররা৷ বিনা কারণে আমাদের মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে পড়তে হয়েছে৷’’
স্বচ্ছতার লক্ষ্যে নিষ্ক্রিয় কার্ড
বায়োমেট্রিক চালুর পাশাপাশি খাদ্য দপ্তর মৃত গ্রাহকদের চিহ্নিত করতে অভিযান চালিয়েছে৷ এর সঙ্গে অস্তিত্বহীন গ্রাহকদের কার্ডও নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে৷ রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বক্তব্য, ‘‘কার্ড নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে চলছে৷ এতে দপ্তরের অর্থের সাশ্রয় হবে৷ কার্ড পুরোপুরি বাতিল করা হচ্ছে না৷ গ্রাহকের অস্তিত্বের প্রমাণ পেলে কার্ড সক্রিয় করে দেওয়া হচ্ছে৷’’
রেশন ডিলাররা আঙুল তুলছেন সরকারের দিকে৷ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নীরদময় পালিত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রয়াত মানুষদের কার্ড বাতিল হচ্ছে, ভাল কথা৷ কিন্তু যাদের আঙুলের ছাপ মিলছে না, তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? আর কার্ডের প্রাপক ভুয়া হলে তার দায় তো সরকারের৷ এর দায়িত্ব রেশন ডিলারদের নয়৷’’
চলতি প্রক্রিয়ায় খাদ্য দপ্তর নতুন রেশন কার্ড তৈরিও করে দিচ্ছে৷ ৪০ লাখ নয়া রেশন কার্ড তৈরি হয়েছে৷ যদিও নিষ্ক্রিয় কার্ডের সংখ্যা তার থেকে বেশি৷
মিলছে না আঙুলের ছাপ
রেশন দোকানে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন গ্রাহকরা৷ প্রবীণ মানুষদের আঙুলের ছাপ সহজে মিলে না৷ কম বয়সিদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা রয়েছে৷ আবার পরিচারিকা বা বিশেষ ধরনের পেশাজীবী মানুষদের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক একবারে মিলে না বলে মুশকিলে পড়ছেন রেশন ডিলাররা৷
দমদম এলাকার ডিলার শেখ আমিনুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একবার বায়োমেট্রিক না মিললে অপেক্ষা করতে হয়৷ কিছুক্ষণ পরে আবার চেষ্টা করতে হয়৷ তখন সফল না হলে ফের একই প্রক্রিয়া৷ এতে গ্রাহকরা হয়রান হচ্ছেন৷ আমাদের কাজে সমস্যা হচ্ছে৷ আগের প্রক্রিয়া সহজ-সরল ছিল৷’’
আমিনুলের মতো অধিকাংশ ডিলার বাধ্য হয়ে অনেক গ্রাহককে ফিরিয়ে দিচ্ছেন৷ রেশন দোকানের গায়ে ঝুলছে বিজ্ঞপ্তি, ‘‘আধার ও রেশন কার্ডের সংযোগ না থাকলে খাদ্য-সামগ্রী দেওয়া যাবে না৷’’
সহজ নয় সংযোগের প্রক্রিয়া
আধার ও রেশন কার্ডের সংযোগের প্রক্রিয়াও যে সহজ, তা কিন্তু নয়৷ আমিনুল বলেন, ‘‘প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে অনেকেই সংযোগের কাজ করতে পারছেন না৷ তাদের রেশন থেকে বঞ্চিতই থাকতে হচ্ছে৷ ১০০ জনের মধ্যে একজনকে বায়োমেট্রিক ছাড়া চাল-গম দেওয়া যায়, বাকিদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে৷’’
প্রশ্ন উঠছে, আধার ও রেশনের সংযোগের প্রক্রিয়া পুরো শেষ না হওয়ার আগেই কেন এই পদ্ধতিতে খাদ্য বণ্টনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল?
বিশ্বম্ভরের বক্তব্য, ‘‘পুজোর মাসেও মানুষ রেশন পাচ্ছেন না৷ এর থেকে দুঃখের কী হয়! গ্রাহকরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন৷ আধার নম্বর থাকলেই রেশন দেওয়া উচিত৷ নইলে মানুষ অনাহারে থেকে যাবে৷’’